ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

প্রতারণা করতে লিঙ্গ পরিচয় পাল্টাতেন রেজা-শিশির

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৩৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৯, ২০২৩
প্রতারণা করতে লিঙ্গ পরিচয় পাল্টাতেন রেজা-শিশির

ঢাকা: ছদ্মনামে ফেসবুক পেজ খুলে কুয়েতের ভিসা ও জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) কার্ড জালিয়াত চক্রের ৩ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা (ডিবি) ওয়ারী বিভাগ।

গ্রেপ্তাররা হলেন- মো. শরিফুল ইসলাম, আবরার জাওয়ার তন্ময় ওরফে রেজাউল করিম রেজা ওরফে হৃদি মাহাজাবিন ও আহিয়ান শিশির ওরফে কামরুজ্জামান শিশির।

তাদের মধ্যে আবরার জাওয়ার তন্ময় ও কামরুজ্জামান শিশির ট্রান্সজেন্ডার। প্রতারণার উদ্দেশ্যে তারা লিঙ্গ পরিবর্তন করে হৃদি মাহাজাবিন থেকে আবরার জাওয়ার তন্ময় ওরফে রেজাউল করিম রেজা এবং শারমিন থেকে কামরুজ্জামান শিশিরের পরিচয় ধারণ করতেন। ডিবির নিবিড় তদন্তে তাদের প্রকৃত পরিচয় উদ্ধার হয়। ডিএমপির গুলশান থানায় করা মামলায় শরিফুলসহ সবাইকে আদালতে পাঠানো হয়েছে।

এ তিনজনকে গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে ৪০টি পাসপোর্ট, নয়টি জাল ভিসা, জাল বিএমইটি কার্ডের ফটোকপি, প্রতারণায় ব্যবহৃত মোবাইল ও সিম জব্দ করে ডিবি ওয়ারী বিভাগ। ডিবি জানিয়েছে, এ চক্রটি এখন পর্যন্ত ৫০ জনের বেশি মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে প্রায় ১ কোটি ৩৫ লাখ ৫৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

শনিবার (৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ডিএমপির ডিবি কম্পাউন্ডে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এ বিষয়ে বিস্তারিত জানান অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। তিনি বলেন, শুক্রবার (৮ সেপ্টেম্বর) বান্দরবানের নাইক্ষংছড়ি ও ঢাকার ভাটারা এলাকায় ধারাবাহিক অভিযান পরিচালনা করে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, একটি প্রতারক চক্র বিদেশে লোক পাঠানোর জন্য গুলশান-১-এ আল সাফার ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি অফিস নেয়। ওই অফিসের ঠিকানা ব্যবহার করে ফেসবুকে বিভিন্ন ছদ্মনাম দিয়ে পেজ খোলে। সেখানে কুয়েতে উচ্চ বেতনে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে সাধারণ মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। কেউ বিদেশ যেতে ইচ্ছুক হলে তারা ওই আগ্রহী ব্যক্তির সঙ্গে একটা চুক্তিতে করে। পরে প্রতারক চক্র আরবিতে লেখা বিভিন্ন ব্যক্তির কুয়েতের সঠিক ভিসা কপি সংগ্রহ করে। ভিসা নম্বর ঠিক রেখে ফটোশপের মাধ্যমে বিদেশ যেতে ইচ্ছুক ব্যক্তির নাম, পাসপোর্ট নম্বরসহ অন্যান্য তথ্য সংযুক্ত করে কুয়েতের জাল ভিসা তৈরি করে। জাল ভিসা, পাসপোর্টের ফটোকপি নিয়ে বিদেশ যেতে ইচ্ছুক ব্যক্তিরা বিভিন্ন টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার থেকে তিন দিনের ট্রেনিং শেষ করে সার্টিফিকেট নেন।

পরে ওই জাল ভিসা, পাসপোর্ট ও ট্রেনিংয়ের সার্টিফিকেট নিয়ে একজন বিদেশ যেতে ইচ্ছুক ব্যক্তি জনশক্তি ব্যুরোর প্রধান কার্যালয়সহ বিভিন্ন জেলার কর্মসংস্থান ও জনশক্তি কার্যালয়ে অবস্থিত ফিঙ্গার প্রিন্ট অফিসে ফিঙ্গার প্রিন্ট দিতে যান। ওই অফিস কুয়েতের সরকারি ওয়েবসাইটে ভিসা নম্বর চেক করে অ্যাপ্লিকেশন স্টেটাস অ্যাপ্রুভড থাকায় তারা বিদেশ গমনেচ্ছুক ব্যক্তিদের ফিঙ্গার প্রিন্ট গ্রহণ করে। পরে বায়োফিঙ্গার সাকসেস মর্মে এক কপি যাত্রীদের দেওয়া হয়।

তিনি আরও বলেন, গ্রেফতার চক্রটি একটি সঠিক বিএমইটি ক্লিয়ারেন্স কার্ডের স্ক্যান কপিতে বিদেশগামী ব্যক্তির নাম-ঠিকানা লিখে তা রঙিন কপি প্রিন্ট করে। সেটা দেখিয়ে বিএমইটি কার্ডও কমপ্লিট হয়েছে বলে জানায় বিদেশ গমনেচ্ছুদের। এরপর বিমানের টিকিট দেখিয়ে তাদের কাছ থেকে চুক্তির পুরো টাকা হাতিয়ে নেয়। পরে মোবাইল ফোন বন্ধ করে আত্মগোপনে চলে যায়।

এভাবে চক্রটি অর্ধশতাধিক মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে প্রায় ১ কোটি ৩৫ লাখ ৫৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। প্রতারণার স্বীকার একজনের অভিযোগের ভিত্তিতে গত ৭ আগস্ট গুলশান থানায় একটি মামলা হয়। মামলাটি তদন্তে প্রযুক্তির সহায়তায় প্রতারকদের শনাক্ত করে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি ও ঢাকার ভাটারা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেফতার শরিফুল ইসলামের নামে বিভিন্ন থানায় ৪টি ও আবরার জাওয়ার তন্ময়ের নামে ১টি প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের মামলা আছে বলেও জানান ডিবি প্রধান।

বিদেশ যাওয়ার ক্ষেত্রে কোনো এজেন্সি সম্পর্কে ভালোভাবে যাচাই-বাছাই না করে টাকাপয়সা লেনদেন করা থেকে বিরত থাকতেও অনুরোধ করেন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।

বাংলাদেশ সময়: ২০৩২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৯, ২০২৩
এসজেএ/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।