ঢাকা, বুধবার, ১২ আষাঢ় ১৪৩১, ২৬ জুন ২০২৪, ১৮ জিলহজ ১৪৪৫

জাতীয়

সাংবাদিক নাদিম হত্যা: পদ থেকে বহিষ্কার হয়েও তাঁতীলীগের সভাপতি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২৩
সাংবাদিক নাদিম হত্যা: পদ থেকে বহিষ্কার হয়েও তাঁতীলীগের সভাপতি

জামালপুর: জামালপুরের বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমের সাংবাদিক গোলাম রব্বানী নাদিম হত্যা মামলার ১১ নম্বর আসামি সহিদুর রহমান লিপনকে উপজেলা তাঁতীলীগের সভাপতি পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। কিন্তু আবারও সেই পদে নিযুক্ত করে কমিটি ঘোষণা করেছে জেলা তাঁতী লীগ।

সোমবার (১৮ সেপ্টেম্বর) জামালপুর জেলা তাঁতীলীগের আহ্বায়ক জাকির হোসেন রুকু এবং সদস্য সচিব আরমান হোসেন সাগরের যৌথ স্বাক্ষরে আগামী ৩ বছরের জন্য সহিদুর রহমান লিপনকে বকশীগঞ্জ উপজেলা তাঁতীলীগের সভাপতি নিযুক্ত করে দলীয় প্যাডে ৭১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি অনুমোদন করা হয়।

এর আগে চলতি বছরের ১৭ জুন সাংবাদিক নাদিম হত্যাকাণ্ডে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও গণমাধ্যমে সহিদুর রহমান লিপনের নাম আসায় তাকে উপজেলা তাঁতীলীগের সভাপতি পদ থেকে অব্যাহতি দেয় জেলা তাঁতীলীগ।

সহিদুর রহমান লিপন উপজেলার মালিরচর তকিরপাড়া গ্রামের মো. আব্দুল করিমের ছেলে।

দলে অনেক ত্যাগী নেতাকর্মী থাকা সত্ত্বেও একজন সাংবাদিক হত্যা মামলার আসামিকে আবারও উপজেলা তাঁতীলীগের সভাপতি পদে নিযুক্ত করায় জেলা জুড়ে শুরু হয়েছে নানা সমালোচনা। জেলার সুধী সমাজের মাঝে জন্ম নিয়েছে নানা প্রশ্নের। এছাড়াও জেলার সাংবাদিকদের মাঝেও তীব্র ক্ষোভ লক্ষ্য করা গেছে।

সাংবাদিক নাদিমের স্ত্রী মনিরা বেগম বলেন, হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নেওয়া এবং এজাহারভুক্ত আসামিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন তাঁতীলীগের উপজেলা শাখার সভাপতি পদে নিযুক্ত করায় আমরা বিস্মিত। মূলত হত্যাকাণ্ডের দায় থেকে মুক্ত করতেই লিপনকে তাঁতীলীগের উপজেলা শাখার সভাপতি করা হয়েছে। আমরা চাই, সুষ্ঠু বিচারের স্বার্থে তাঁতীলীগ থেকে অভিযুক্ত লিপনকে বহিষ্কার করা হোক।

সাংবাদিক গোলাম রব্বানী নাদিমের মেয়ে রাব্বিলাতুল জান্নাত বলেন, আমার বাবার হত্যা মামলার আসামীরা একে একে জামিনে এসে রাজনীতিতে সক্রিয় হচ্ছে। এতে তারা দিন দিন আরও প্রভাবশালী হচ্ছেন। বিষয়টিতে আমরা ভীতির মধ্যে আছি। আর তারা কার সঙ্গে রাজনীতি করছে এটি দেখলেই বোঝা যায় যে তারা কার কথায় চলে আর আমার বাবার হত্যার পেছনে কারা ছিল।

জামালপুর অনলাইন জার্নালিস্ট নেটওয়ার্কের সভাপতি জাহাঙ্গীর সেলিম বলেন, একটি হত্যা মামলার আসামিকে আবারও উপজেলা তাঁতীলীগের সভাপতি করা হয়েছে। দলে আরও অনেক ত্যাগী নেতা আছে যাদের এই পদের দায়িত্ব দেওয়া যেতো। এই বিষয়টি দুঃখজনক।

সাংবাদিক নাদিম হত্যা মামলার আসামি ও বকশিগঞ্জ উপজেলা তাঁতীলীগের সভাপতি সহিদুর রহমান লিপন বলেন, আমি আগেও সভাপতি ছিলাম। এখনও সভাপতি আছি। আমি যদি কোনো কারণে কারাগারে যাই তবে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী আমার পরবর্তী যে আছে তিনি দল পরিচালনা করবেন।

তবে অব্যাহতি দেওয়ার তিনি কিভাবে সভাপতি হলেন এবং কবে তার অব্যাহতি তুলে নেওয়া হয়েছে এ বিষয়ে প্রশ্ন করার সঙ্গে সঙ্গেই ব্যস্ততার কথা বলে ফোন কেটে দেন অভিযুক্ত লিপন।

এসব বিষয়ে জানতে জেলা তাঁতীলীগের আহ্বায়ক জাকির হোসেন রুকুকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। এরপর তার ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। তবে সাংবাদিকদের তিনি জানান, সাংবাদিক নাদিম হত্যা মামলার আসামি হওয়ায় সহিদুর রহমান লিপনকে সাময়িক অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল। নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা থাকতেই পারে। এখন তিনি জামিনে আছেন। এ কারণেই তাকে বকশীগঞ্জ উপজেলা তাঁতীলীগের সভাপতি পদে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ১৪ জুন রাতে কাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে বকশিগঞ্জের পাটহাটি এলাকায় হামলার শিকার নিহত হন বাংলানিউজের সাংবাদিক গোলাম রব্বানী নাদিম। ১৫ জুন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। ১৬ জুন দুই দফা জানাজার পর বকশিগঞ্জের গুমেরচর পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয় সাংবাদিক নাদিমকে। এ ঘটনায় ১৭ জুন বকশিগঞ্জ থানায় মাহমুদুল আলম বাবুসহ ২২ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরও ২০ থেকে ২৫ জনকে আসামি করে মামলা করেন তার স্ত্রী মনিরা বেগম। সাংবাদিক নাদিম হত্যা মামলায় এ পর্যন্ত কারাগারে আছেন প্রধান অভিযুক্ত বাবুসহ ১৭ জন এবং জামিনে মুক্ত হয়েছেন দুইজন। উচ্চ আদালত থেকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন নিয়েছেন এজাহারভুক্ত ৭ জন এবং এখনও পলাতক আছেন বাবুর ছেলে রিফাতসহ পাঁচজন অভিযুক্ত। বকশিগঞ্জ থানা পুলিশ থেকে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের পর এখন মামলাটির তদন্ত করছে সিআইডি।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৩১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২৩
এসএফ/এফআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।