ঢাকা, শুক্রবার, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৭ মে ২০২৪, ০৮ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

উপাত্ত সুরক্ষা আইনের নাম পরিবর্তনসহ যত দাবি টিআইবির

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২০, ২০২৩
উপাত্ত সুরক্ষা আইনের নাম পরিবর্তনসহ যত দাবি টিআইবির

ঢাকা: উপাত্ত সুরক্ষা আইন নয়, বরং ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষা আইন-২০২৩ নামে আইন চায় ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। পাশাপাশি আইনটির সংস্কার চেয়ে মেলা দাবি জানিয়েছে সংস্থাটি।

বুধবার (২০ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর ধানমন্ডিতে মাইডাস সেন্টারে ‘খসড়া উপাত্ত সুরক্ষা আইন-২০২৩ এর ত্রুটিপূর্ণ বিধানসমূহের উপর টিআইবির পর্যালোচনা’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানানো হয়।

এ সময় বেশ কয়েকটি পয়েন্ট তুলে ধরেন টিআইবির আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগের পরিচালক শেখ মনজুর-ই-আলম। তিনি বলেন, আমরা খসড়া আইনের উদ্দেশ্য ক্লজে মানবাধিকার রক্ষার প্রতিশ্রুতি তুলে ধরার বিধান অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করেছিলাম। আমরা আনন্দিত যে আমাদের সুপারিশ আংশিকভাবে গৃহীত হয়েছে। আমাদের সুপারিশের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন আশা করি। আমরা উপাত্ত সুরক্ষা আইন-২০২৩ এই নামের পরিবর্তে ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষা আইন ২০২৩ করার পরামর্শ দিচ্ছি।

ব্যক্তিগত উপাত্তের সংজ্ঞা অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ আমরা করেছিলাম। দুঃখজনক যে এই আইনটি শুধুমাত্র ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষার আইন হলেও ব্যক্তিগত উপাত্তের একটি অর্থবহ সংজ্ঞা এই আইনে এখনো অন্তর্ভুক্ত হয়নি। টিআইবি বেনামি এবং ছদ্মনামযুক্ত উপাত্তের মধ্যে পার্থক্য করার পরামর্শ দিয়েছিল যা এখনো বিদ্যমান।

নতুন এই আইন প্রতিপালনের চ্যালেঞ্জ বিবেচনায় আন্তর্জাতিক চর্চা অনুযায়ী আইনটি পাশের পর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের জন্য অন্তত ২ বছর গ্রেস পিরিয়ডের সুপারিশ আগের খসড়ায় থাকলেও নতুনটিতে নেই। আমরা অনুরূপ বিধান পুনঃসংযোজনের সুপারিশ করছি। খসড়াটিতে ডেটা সাবজেক্টের একটি পূর্ণাঙ্গ সংজ্ঞা অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ আমরা করেছিলাম, কিন্তু আমলে নেওয়া হয়নি। অনুরূপ দাবি আমরা পুনর্বার করছি।

আমরা আগেই বলেছি যে উপাত্ত সুরক্ষা আইন কেবল প্রাকৃতিক ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য কিন্তু খসড়া আইনে তার প্রতিফলন নেই। সংজ্ঞা ধারা পুনর্গঠনের জন্য আমাদের সুপারিশ যথাযথভাবে অনুসরণ করা হয়নি। আমরা এর যথার্থ বাস্তবায়নের আহ্বান জানাই।

বহুল প্রচলিত আন্তর্জাতিক চর্চা অনুযায়ী প্রোফাইলিং পুনরায় সংজ্ঞায়িত করার আমাদের পরামর্শ ছিল এবং তার প্রয়োজন এখনো বিদ্যমান। আলোচ্য সংজ্ঞাটি অপূর্ণাঙ্গ। একটি স্বাধীন উপাত্ত সুরক্ষা প্রতিষ্ঠা সংস্থা সম্পর্কিত আমাদের পরামর্শ যথাযথভাবে মূল্যায়িত হয়নি। বিষয়টি অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিধায় আমাদের আগের দাবি পুনর্ব্যক্ত করছি।

ওইসিডি গোপনীয়তা নির্দেশিকাগুলির আলোকে উপাত্ত সুরক্ষার নীতিমালা প্রণয়ন সংক্রান্ত আমাদের সুপারিশ অনুসৃত হয়নি৷ এক্ষেত্রে আমাদের আগের দাবি পুনর্ব্যক্ত করছি।

সংবেদনশীল ব্যক্তিগত উপাত্ত প্রসেসিংয়ের জন্য আইনি বাধ্যবাধকতা স্থাপনের আমাদের পরামর্শ গ্রহণ করা হয়নি। দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব নিরাপত্তার আইনগত কার্যধারার মতো প্রয়োজন ছাড়া সংবেদনশীল ব্যক্তিগত উপাত্তের প্রসেসিং নিষিদ্ধের সুপারিশ আমরা করেছিলাম এবং আমাদের আগের দাবি পুনর্ব্যক্ত করছি। অপ্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য উপাত্ত প্রক্রিয়াকরণের সম্মতির বয়স সামঞ্জস্য করার জন্য আমাদের সুপারিশ বিবেচনা করা হয়নি। ১৮ এর পরিবর্তে ১৩-১৬- এই বয়সক্রমের সাজেশন আমাদের ছিল এবং আমাদের আগের দাবি পুনর্ব্যাক্ত করছি।

উপাত্ত সংশোধন এবং প্রত্যাখ্যানের আগে উপাত্তধারীর আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দানের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে আমাদের প্রস্তাবটি যথাযথভাবে স্বীকার করা হয়নি। আমাদের আগের দাবি পুনর্ব্যক্ত করছি। বেনামি এবং ছদ্মনামী উভয় উপাত্ত একই নয়, তা খসড়া আইনে পরিষ্কার করা উচিত ছিল, তবে তা এখনো বিদ্যমান।

বিদেশি নাগরিকদের উপাত্ত সংরক্ষণের অধিকার বিষয়ে আমাদের সুপারিশ যথাযথ মনোযোগ দেওয়া হয়নি। বিদেশি নাগরিকদের এ সংক্রান্ত বিধান অপূর্ণাঙ্গ তাই এক্ষেত্রে বিস্তারিত বিধান আইনে থাকা জরুরি। মত প্রকাশের স্বাধীনতা দ্বারা গোপনীয়তা এবং ব্যক্তিগত উপাত্তের সুরক্ষা সীমাবদ্ধ না করার জন্য আমাদের পরামর্শ বিবেচনা করা হয়নি। আমাদের আগের দাবি পুনর্ব্যাক্ত করছি।

অতিমাত্রায় বিধি দ্বারা আইন প্রণয়নের প্রবণতা কমানোর আমাদের সুপারিশগুলো আমলে নেওয়া হয়নি। আমাদের আগের দাবি পুনর্ব্যক্ত করছি। সক্ষমতার ওপর ভিত্তি করে পর্যায়ক্রমে উপাত্ত নিয়ন্ত্রকদের উপাত্ত সুরক্ষার দায় বিষয়ে আমাদের পরামর্শ বিবেচনা করা হয়নি। আমাদের আগের দাবি পুনর্ব্যক্ত করছি।

২১ ধারায় বর্ণিত দায়িত্বের বিধান অপ্রয়োজনীয় যেহেতু এই আইনের ৫ ধারায় অনুরূপ বিধান আছে। তবে আমাদের পরামর্শ অনুসৃত হয়নি। ক্ষুদ্র ব্যবসার নিয়ন্ত্রকের উপাত্ত সুরক্ষার দায়িত্ব পালন অসম্ভব। তাই তা বড় প্রতিষ্ঠানের প্রতি আরোপ করা এবং ক্রমান্বয়ে ক্ষুদ্র ব্যবসার দিকে প্রসারিত করা সংক্রান্ত আমাদের সুপারিশ বিবেচনা করা হয়নি।

উপাত্ত সুরক্ষার মান রক্ষার সকল পদ্ধতি (encryption, technical measures, legal measures, impact assessment) আইনে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করার দাবি থাকলেও আমাদের দাবি স্বীকৃত হয়নি। উপাত্ত সুরক্ষা নীতির সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত অপ্রয়োজনীয় ধারাগুলো অপসারণে আমাদের সুপারিশ বিবেচনা করা হয়নি। উপাত্তের রেকর্ড সংরক্ষণে সবধরনের উপাত্ত নিয়ন্ত্রকের দায়যুক্ত বিধান বাতিল করা সংক্রান্ত আমাদের পরামর্শও বিবেচনায় নেওয়া হয়নি।

উপাত্ত বিচ্যুতির নোটিশ প্রদান সংক্রান্ত আমাদের সুপারিশ আংশিকভাবে গৃহীত হয়েছে। উপাত্তধারীর জীবন ও স্বাধীনতার ক্ষেত্রে উপাত্ত বিচ্যুতির নোটিশ কালবিলম্ব না করে দেবার সুপারিশ আমরা করেছিলাম। আমাদের আগের দাবি পুনর্ব্যক্ত করছি। নিরীক্ষকের যোগ্যতা নির্ধারণের বিষয়ে উপাত্ত সুরক্ষা আইন এবং প্রবিধানে দক্ষতা যুক্ত করার সংক্রান্ত আমাদের প্রস্তাবের প্রতি যথার্থ মনোযোগ দেওয়া হয়নি।

বাধ্যতামূলকভাবে সব প্রতিষ্ঠান কর্তৃক উপাত্ত সুরক্ষা অফিসার নিয়োগের বিষয়ে আমাদের সুপারিশ বিবেচনা করা হয়নি। বিশেষায়িত এবং বড় উপাত্ত প্রসেসরের জন্য এই বিধান প্রযোজ্য হবে ছোট এবং সাধারণ বিকিকিনি প্রতিষ্ঠানের জন্য নয়। কোনো প্রকল্পে বাই ডিজাইন ও বাই ডিফল্ট উপাত্ত সুরক্ষা বাস্তবায়নের আমাদের পরামর্শটি যথাযথভাবে স্বীকার করা হয়নি। উপাত্ত সুরক্ষা বিষয়ে সরকারি সংস্থাগুলির অতি দায়মুক্তির বিধান বাতিলের আমাদের পরামর্শ নতুন খসড়ায় প্রতিফলিত হয়নি।

নাগরিকদের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি করে এমন বিধানগুলো সরানোর জন্য আমাদের পরামর্শকে বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। আদর্শ পরিচালনা বিধি প্রণয়নে আমাদের পরামর্শ আমলে নেওয়া হয়নি। এটি প্রণয়ন করার কাজ অংশীদারদের সরকারের নয়। শ্রেণিবদ্ধ উপাত্ত সংরক্ষণের বিধান বাতিল করার জন্য প্রদত্ত আমাদের সুপারিশ বিবেচনা করা হয়নি।

উপাত্তের স্থানীয়করণ সংক্রান্ত ধারাগুলো বাতিলে আমাদের পরামর্শ গ্রহণ করা হয়েছে এবং এটি বাংলাদেশে আন্তঃসীমান্ত উপাত্ত স্থানান্তরকে সহজতর করবে। বাধ্যতামূলকভাবে সবশ্রেণির উপাত্ত নিয়ন্ত্রকের নিবন্ধন বাতিল সংক্রান্ত আমাদের সুপারিশ বিবেচনা করা হয়নি। আইনি পদক্ষেপের সম্মুখীন নিয়ন্ত্রকদের জন্য আত্মরক্ষার অধিকার অন্তর্ভুক্ত করা সংক্রান্ত আমাদের প্রস্তাবটি অনুসৃত হয়নি। উপাত্ত সুরক্ষা বোর্ডের মহাপরিচালক কর্তৃক উপাত্ত নিয়ন্ত্রকের উপাত্ত বিচ্যুতির শাস্তির বিধান আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে অপসারণ করার জন্য আমাদের সুপারিশ বিবেচনা করা হয়নি।

বর্তমান খসড়ায় আপিল কর্তৃপক্ষ সম্পর্কে আমাদের পরামর্শ আংশিকভাবে গ্রহণ করা হয়েছে কিন্তু ৯০ দিনের বর্ধিত আপিল নিষ্পত্তির বিধান এই আইনের উদ্দেশ্যকে ব্যর্থ করতে পারে। এ সংক্রান্ত আমাদের সুপারিশ আমলে নেওয়া হয়নি। দেওয়ানি প্রতিকার এবং প্রশাসনিক জরিমানা দিয়ে ফৌজদারি কার্যবিধি প্রয়োগের বিধান বাতিলের আমাদের সুপারিশ গৃহীত হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, টিআইবির উপদেষ্টা কমিটির প্রফেসর ড. সুমাইয়া খায়ের প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২০, ২০২৩
এমকে/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।