ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

কানাডার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন কবি আসাদ চৌধুরী

ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৫০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২৩
কানাডার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন কবি আসাদ চৌধুরী কানাডার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন কবি আসাদ চৌধুরী

ঢাকা: বাংলা একাডেমি এবং একুশে পদক প্রাপ্ত কবি আসাদ চৌধুরী দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ এবং দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। তিনি বর্তমানে ক্যানাডার লেকেরিজ হেলথ অশোয়া হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।

বুধবার (২৭ সেপ্টেম্বর) কানাডার বাংলাদেশ হাইকমিশন জানায়, কানাডায় নিযুক্ত বাংলাদেশের  হাইকমিশনার ড. খলিলুর রহমান কবিকে দেখতে এবং তাঁর শারীরিক অবস্থার খবর নিতে হাসপাতালে যান। আল্লাহর রহমতে তাঁর শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে; তবে এখনো আশংকা পুরোপুরি কাটেনি। তবে তিনি হাইকমিশানারের সাথে পূর্ণ জ্ঞানে পুরোপুরি চোখ মেলে তাকিয়ে হাত তুলে তাঁর সালামের উত্তর দিয়েছেন এবং তাঁর সাথে করমর্দন করেছেন। হাইকমিশনার কবির সহধর্মিনী ও কন্যার সাথে তাঁর চিকিৎসার বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন।

উল্লেখ্য, কবি আসাদ চৌধুরী বেশ কয়েক বছর ধরেই কানাডায় তাঁর প্রবাসী ছেলে ও মেয়ের সাথে বাস করছেন। তিনি গত বছর নভেম্বর থেকে ব্লাড ক্যান্সারে ভুগছিলেন। সম্প্রতি তাঁকে স্বল্প সময়ের মধ্যে একাধিকবার হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়। তিনি বর্তমানে নিবিড় পর্যবেক্ষণে আছেন।

কবি আসাদ চৌধুরী বাংলাদেশের প্রধান কবিদের অন্যতম। তিনি তার আকর্ষণীয় বাচনভঙ্গি, টেলিভিশনে জনপ্রিয় সব অনুষ্ঠান পরিকল্পনা ও উপস্থাপনার জন্য পরিচিত। এছাড়া তিনি তার ভরাট কণ্ঠে কবিতা আবৃত্তি করেও মানুষের মন জয় করেছেন। মৌলিক কবিতা ছাড়াও শিশুতোষ গ্রন্থ, ছড়া, জীবনী এবং অনুবাদকর্মে তার অবদান প্রণিধানযোগ্য। ১৯৮৩ সালে তার রচিত ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ’  শীর্ষক বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়। এছাড়া একই বছর তিনি সম্পাদনা করেন বঙ্গবন্ধুর জীবনী ভিত্তিক গ্রন্থ ‘সংগ্রামী নায়ক বঙ্গবন্ধু’।

আসাদ চৌধুরী ১৯৪৩ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার উলানিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর মাতার নাম সৈয়দা মাহমুদা বেগম। কবির পিতার নাম মোহাম্মদ আরিফ চৌধুরী ওরফে ধনু মিয়া। তিনি পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক আইন পরিষদের সদস্য ছিলেন এবং আওয়ামী লীগের একজন প্রতিষ্ঠাতা সদস্যও ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর সাথে তাঁর ব্যক্তিগত সখ্য ছিল। জনাব আরিফ চৌধুরীর মৃত্যুর পর তাঁর কবরের পাশে দাঁডিয়ে বঙ্গবন্ধু কবির কাঁধে হাত রেখে কবিকে সাহস যুগিয়েছিলেন এবং প্রয়োজনে তাঁর পাশে দাঁড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।

কবি আসাদ চৌধুরী ১৯৫৭ সালে আরমানিটোলা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৬০ সালে বরিশালের ব্রজমোহন কলেজ থেকে তিনি উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হন। পরবর্তীকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ চুকে যাওয়ার পর কলেজে অধ্যাপনার মধ্য দিয়ে কবি আসাদ চৌধুরীর চাকরিজীবন শুরু। ব্রাহ্মণবাড়িয়া কলেজে তিনি ১৯৬৪ থেকে ১৯৭২ পর্যন্ত শিক্ষকতা করেন। পরবর্তীকালে ঢাকায় স্থিত হবার পর তিনি বিভিন্ন খবরের কাগজে সাংবদিকতা করেছেন। ১৯৮৫ থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত তিনি ভয়েস অব জার্মানির বাংলাদেশ সংবাদদাতার দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৭৩ সালে ঢাকায় বাংলা একাডেমিতে যোগদান করে দীর্ঘকাল চাকরির পর এর পরিচালক হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন।

উত্তর আমেরিকায় বাংলাসাহিত্যের অগ্রযাত্রা এবং এখানকার সাহিত্যানুরাগীদের বাংলা ভাষা ও কৃষ্টিতে আকৃষ্ট করতে তাঁর অবদান অসীম ও অনস্বীকার্য। তাঁর শারীরিক এই অবস্থায় ক্যানাডায় অবস্থিত বাংলাদেশি কমিউনিটি খুবই উদ্বিগ্ন ও তাঁর আশু রোগমুক্তি কামনা করছে।

কবির পরিবার কানাডায় বসবাসকারী সমস্ত বাংকানাডার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন কবি আসাদ চৌধুরী বাংলাদেশি ও বাংলাদেশের সবার কাছে প্রিয় কবির দ্রুত আরোগ্য ও সুস্থতার জন্য দোয়া চেয়েছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২৩
টিআর/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।