ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

দয়া করে কেউ আমাদের গণতন্ত্র শিক্ষা দেবেন না: তথ্যমন্ত্রী

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ২, ২০২৩
দয়া করে কেউ আমাদের গণতন্ত্র শিক্ষা দেবেন না: তথ্যমন্ত্রী মায়ের কান্না আয়োজিত মানববন্ধনে তথ্যমন্ত্রী। ছবি: ডি এইচ বাদল

ঢাকা: তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেছেন, বাংলাদেশ আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এগিয়ে যাচ্ছে। এই অগ্রযাত্রা অনেকের পছন্দ নয়।

সেজন্য নানা ছলছুতায় প্রথমে আনে মানবাধিকার, তারপর বলে সুষ্ঠু পথে নির্বাচন হয়নি।  

তিনি বলেন, আমাদের দেশে অবশ্যই আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু এবং জনগণের অংশগ্রহণে আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য হবে। সরকার সর্বোচ্চভাবে নির্বাচন কমিশনকে সহযোগিতা করবে। দয়া করে কেউ আমাদের গণতন্ত্র শিক্ষা দেবেন না।

সোমবার (২ অক্টোবর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মায়ের কান্না আয়োজিত মানববন্ধনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের অপসারণের দাবিতে এ মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়।

হাছান মাহমুদ বলেন, আমাদের দেশে পরাজিত প্রার্থীরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পরাজয় মেনে নেন। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের ডোনাল্ড ট্রাম্প এখনও পরাজয় মেনে নেননি। যারা গণতন্ত্র শিক্ষা দিতে চায়, তাদের অনেকের দেশেই গণতন্ত্র নাই।  

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জীবন হাতের মুঠোয় নিয়ে দেশের মানুষকে সংঘবদ্ধ করে সামরিক স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে লড়াই-সংগ্রাম করে এ দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছেন।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, কিছু কিছু সংগঠন আছে, যারা মানবাধিকার নিয়ে ব্যবসা করে। তারা কাউকে কিল মারলে বিবৃতি দেয়, কাউকে ঘুষি মারলেও বিবৃতি দেয়। কিন্তু তাদের আত্মীয়-স্বজন কাউকে মেরে ফেললে কোনো বিবৃতি নেই।  

তিনি বলেন, আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে, ২০১২-১৪ সালে কীভাবে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে, নিরীহ মানুষ যারা রাজনীতি বোঝে না, রাজনীতি করে না, রাজনীতির অঙ্গনে হাটে না, তাদের কীভাবে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করে হত্যা করা হয়েছে। দরজায় তালা দিয়ে গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছে। গাড়িও পুড়ে গেছে, আর ড্রাইভারের দেহ পুড়ে অঙ্গার হয়েছে।  

তিনি আরও বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে ২০১২-১৪ সালে এই দেশে নির্মমতা হয়েছে, মানবাধিকারের বিরুদ্ধে অপরাধ সংগঠিত হয়েছে। রাজনৈতিক দাবি আদায়ের জন্য পৃথিবীর কোথাও এইভাবে মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়নি।

আওয়ামী লীগের এই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, জামায়াতে ইসলামী বিএনপির প্রধান সঙ্গী। তারা ১৯৭১ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছিল, বিএনপি তাদের রাজনৈতিক দল আখ্যা দিয়ে বৈঠক করেছে।  

তিনি বলেন, যারা মানবাধিকার নিয়ে কাজ করেন, গত কয়েক বছর ধরে এই মায়ের কান্নার ব্যানারে যারা কেঁদে বেড়াচ্ছেন সমগ্র দেশজুড়ে, আপনাদের কর্ণ প্রহরে মায়ের কান্না কেন পৌঁছে না। আপনাদের কাছে বলা হয়েছিল, তারা দেখা করতে চান। কিন্তু আপনারা এখনো পর্যন্ত দেখা করেননি। মানবাধিকার এখন কিছু কিছু রাষ্ট্রে অস্ত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে। মানবাধিকার নিয়ে ব্যবসা বন্ধ হওয়া প্রয়োজন।

হাছান মাহমুদ বলেন, বিএনপি কয়দিন যাবত বলছে, খালেদা জিয়ার অধিকার লঙ্ঘন করা হচ্ছে। বেগম খালেদা জিয়ার যতবার হাসপাতালে গেছেন, ততবারই বলা হয়েছে বেগম খালেদা জিয়ার অবস্থা সংকটাপন্ন। বিদেশে না নিলে তিনি মারা যাবেন। কতবার তিনি হাসপাতাল থেকে ভালো হয়ে বাড়িতে ফেরত গেছেন।  

তিনি বলেন, দেশে খালেদা জিয়ার যেন সর্বোচ্চ চিকিৎসা নিশ্চিত হয় সেজন্য সরকার যা কিছু করার তা করেছে এবং ভবিষ্যতেও করবে। কিন্তু বেগম দিয়া স্বাস্থ্য নিয়ে আপনার রাজনীতি করবেন, সেটা তো করতে দেওয়া যায় না। বিএনপি বেগম খালেদা জিয়াকে রাজনীতির দাবার গুটি বানিয়েছে।

ক্ষমতাসীন দলের এই মন্ত্রী বলেন, এখন দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য, দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার জন্য, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে বিশ্ব থেকে ফায়দা লুটতে  তারা সন্ত্রাসের পরিকল্পনা নিয়েছে। আপনাদের বলে দিতে চাই, আওয়ামী লীগ রাজপথে আছে এবং রাজপথে থাকবে। কাউকে আর ২০১৩-১৫ সালের মতো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে দেওয়া হবে না। তাদের কঠোরতা দমন করা হবে।

প্রধান বক্তার বক্তব্যে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী বলেন, ২ অক্টোবর বাংলাদেশের জনগণের জন্য বেদনার একটি দিন। কারণ জিয়াউর রহমান এবং খুনি মোশতাকের নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর সেদিন বিমানবাহিনী,  নৌবাহিনী ও সেনাবাহিনীর মুক্তিযোদ্ধাদের চাকরিচ্যুত এবং কারাদণ্ড দেওয়া হয়। পরে নির্বিচারে তাদের ফাঁসি দেওয়া হয়। ১৯৭৭ সালের ২ অক্টোবর যাদের ফাঁসি দেওয়া হয়, তাদের পরিবারের প্রতি আমি সমবেদনা জানাচ্ছি।  

তিনি বলেন, প্রকৃতির বিচার আপনারা সবাই দেখেছেন। সেদিন যদি জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডে জড়িত না থাকত, তাহলে বাংলার মাটিতে জিয়ার এরকম করুণ পরিস্থিতি হতো না। জিয়াউর রহমান ১৯৭৭ সালে বিনা বিচারে মুক্তিযোদ্ধা সেনা কর্মকর্তাদের ফাঁসি দিয়েছিলেন।

মায়ের কান্না সংগঠনের আহ্বায়ক কামরুজ্জামান মিয়া লেলিনের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও সাবেক ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম।  

এ সময় আরও বক্তব্য রাখেন করপোরাল নওরেজ ডি রোজারিও, সার্জেন্ট মোবারক আলীর মেয়ে মমতাজ বেগম, বীর মুক্তিযোদ্ধা নূরুল হক, সার্জেন্ট আজিজুর রহমানের স্ত্রী সুফিয়া বেগম, সার্জেন্ট মো হাবিবুর রহমানের ছেলে মো. সাইদুর রহমান প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়:  ১৫১৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ২, ২০২৩
ইএসএস/আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।