ঢাকা: নারী উদ্যোক্তাদের নিয়ে কাজ করছে দেশের শীর্ষস্থানীয় সংগঠন উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্স ট্রাস্ট (উই)। এর উদ্যোগে সারা দেশ থেকে আসা নারী উদ্যোক্তা ও খাত সংশ্লিষ্টদের অংশগ্রহণে শুরু হলো দুই দিনব্যাপী দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ সামিট উইমেন ই-কমার্স এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ সামিট (উই সামিট) ২০২৩।
শুক্রবার (০৬ অক্টোবর) সকালে রাজধানীর কুড়িলে ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় এর উদ্বোধন করেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ।
সামিটের সহযোগিতায় ছিল তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ, কন্ট্রোলার অব সার্টিফাইং অথরিটিজ এবং উইমেন এন্ট্রাপ্রেনিউরস ফিন্যান্স ইনিশিয়েটিভ (উই-ফাই)।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বলেন, উইর (উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্স ট্রাস্ট) সঙ্গে সম্পর্ক আমার প্রায় বছর পাঁচেক। ময়মনসিংহের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের তাদের একটা অনুষ্ঠানে আমি প্রথম অতিথি হিসেবে অংশ নিয়ে ছিলাম। সেই অনুষ্ঠানে পর থেকে উইর সঙ্গে আমার সম্পৃক্ততা বেড়েছে। তাদের কাজ আমাকে অনুপ্রাণিত এবং উৎসাহিত করে। বাংলাদেশের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী হচ্ছে নারী। তাদের উদ্যোগী করে গড়ে তোলার কাজ করছে উই সংগঠন।
সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী বলেন, উই এমন একটা সংগঠন যার ১৪ লাখ নারী সদস্য। এই নারীদের সংগঠিত করেছে এই সংগঠনের সভাপতি নাসিমা আক্তার নিশা। ঘটনা চক্রে যদি এই সংগঠন ১০ গুণ বেড়ে যায়। অর্থাৎ এক কোটি চল্লিশ লাখ, মানে জনসংখ্যার একটা বিশাল অংশ। আর এই বিশাল সংখ্যক নারীরা বাংলাদেশের সব নারীদের প্রভাবিত করতে পারবে। এমন কি চাইলে প্রধানমন্ত্রীকেও। উইকে আগাম অভিনন্দন জানাই, কারণ সম্ভবত আপনারা ‘স্মার্ট বাংলাদেশের পুরষ্কার’ পেতে যাচ্ছেন। যেটা কিনা সরকার জাতীয়ভাবে ১০ জন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে পুরস্কৃত করবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে আপনারা এই পুরষ্কারটি পাবেন বলেই বিশ্বাস করি।
তিনি বলেন, উই কর্মযজ্ঞের মাধ্যমে এ দেশের নারীদের মৌলবাদী হাত থেকে উদ্ধার করার একটা কৌশল বা সুযোগ করে দিয়েছে। গ্রামে-গঞ্জে নারীরা আগে কাজ করতে পারত না। কিন্তু সেই চিত্র এখন আর নেই, এই চিত্র পাল্টাতে উই খানিকটা ভূমিকা রেখেছে। নারীদের মধ্যে উদ্যোগী এবং প্রতিবাদী চরিত্র আপনাদের গঠন করতে হবে।
ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্স (উই) বাংলাদেশের মধ্যে সব থেকে বড় এবং সফল একটি প্ল্যাটফর্ম। আমি উইর জন্মলগ্ন থেকেই এই নারী উদ্যোক্তাদের পাশে ছিলাম।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা না থাকলে হয়তো আমরা একেবারে গ্রাম পর্যায়ে ইন্টারনেট সংযোগ পেতাম না। যার ফলে এখন সারাদেশের নারীরা ডিজিটাল প্লাটফর্ম এ ই-কমার্স ব্যবসা করে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে সহযোগিতা করছে। পাশাপাশি এই ই-কমার্স সেক্টরকে বিশাল করে গড়ে তোলার থেকে বড় ভূমিকা রেখেছে এই উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্স (উই)।
প্রতিমন্ত্রী পলক আরও বলেন, নারীদের স্বনির্ভর করে গড়ে তোলার জন্য প্রধানমন্ত্রী আইসিটি মন্ত্রণালয়কে বলেছিলেন, একটা প্রজেক্ট হাতে নেওয়ার জন্য, যেটার নাম ‘শি পাওয়ার’। যেখানে ২১টি জেলায় আমরা ১০ হাজার ৫০০ জন নারী উদ্যোক্তা তৈরি করেছিলাম। প্রধানমন্ত্রী আরও একটি প্রজেক্ট দিয়েছেন ‘হার পাওয়ার’, যার মাধ্যমে দেশে আরও ২৫ হাজার নারীর উদ্যোগ তৈরি করা হবে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন উই প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এবং উই সামিটের আহ্বায়ক নাসিমা আক্তার নিশা।
দুই দিনের ওই সামিটে রয়েছে সারা দেশ থেকে অংশ নেওয়া নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বিভিন্ন সেশন, অনুপ্রেরণামূলক বক্তব্য, সেমিনার, কর্মশালাসহ বিশেষ সব আয়োজন।
উদ্বোধনের পর শুরু হয় একটি কি-নোট প্রেজেন্টেশনসহ প্যানেল সেশন। প্রথম দিনে রয়েছে ছয়টি প্যানেল। আলোচনাসহ কর্মশালা ও ইনফ্লুয়েন্সার স্পিচ। এসব সেশনে বিশেষ আলোচক হিসেবে দেশ-বিদেশের অসংখ্য বক্তা ও বিভিন্ন খাতের স্বনামধন্য ব্যক্তিরা অংশ নেবেন। পাশাপাশি থাকছে ই-কমার্স খাতের এবং খাত সংশ্লিষ্ট অভিজ্ঞাদের সঙ্গে নতুনদের নেটওয়ার্কিং সেশনও। থাকবে র্যাফেল ড্র।
দ্বিতীয় দিনে থাকছে দুটি কর্মশালা, একটি সেমিনার। এছাড়া অন্যতম আকর্ষণ হিসেবে এবার দেশের বিভিন্ন খাতে অবদান রাখা ১০ জন নারীকে জয়ী সম্মাননা দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি উইয়ের সদস্যদের মধ্য থেকে ১০ নারী উদ্যোক্তাকে জয়ী পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে। সারা দেশ থেকে যেসব নারীরা ই-কমার্সের মাধ্যমে তাদের পণ্য দেশ ও বিশ্ববাজারে তুলে ধরতে অসামান্য অবদান রাখছেন তাদের এই বিশেষ সম্মাননা পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে। সামিটের দ্বিতীয় দিনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে এই পুরস্কার তুলে দিবেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
এবারের আয়োজনে প্লাটিনাম স্পন্সর হিসেবে রয়েছে দারাজ ও ফ্রেশ অনন্যা স্যানিটারি ন্যাপকিন। এছাড়া পেমেন্ট পার্টনার হিসেবে বিকাশ, ব্যাংকিং পার্টনার হিসেবে প্রাইম ব্যাংক, ইনস্যুরেন্স পার্টনার হিসেবে গ্রিন ডেলটা ইনস্যুরেন্স, নিউট্রিশন পার্টনার হিসেবে থাকছে শক্তি। তাছাড়াও পার্টনার হিসেবে বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ, রানার মোটরসাইকেল, ই-ক্যাব, ফ্লোরা টেলিকম এবং লাইভ ব্রডকাস্ট পার্টনার হিসেবে থাকছে ঢাকা লাইভ।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৬, ২০২৩
ইএসএস/এসআইএ