ঢাকা: সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় বিভিন্ন ধরনের ভাতাসহ ৫৪ ধরনের কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে বলে জানিয়েছেন এ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ।
বুধবার (১১ অক্টোবর) সচিবালয়ে গণমাধ্যম কেন্দ্রে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অগ্রগতি, অর্জন ও কার্যক্রম অবহিতকরণ বিষয়ক সেমিনারে তিনি এ তথ্য জানান।
সচিবালয় বিটে কর্মরত সাংবাদিকদের সংগঠন বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরাম (বিএসআরএফ) এ সেমিনারের আয়োজন করে।
তিনি বলেন, সরকার বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা নারী ভাতাসহ ৫৪ ধরনের কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে বয়স্ক ভাতা খাতে জনপ্রতি মাসিক ২৫০ টাকা হারে ২০ লাখ প্রবীণব্যক্তির জন্য বাজেট বরাদ্দ ছিল ৬০০ কোটি টাকা। জনপ্রতি ৬০০ টাকা হারে বেড়ে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৫৮ লাখ প্রবীণ ব্যক্তির জন্য বার্ষিক বাজেট উন্নীত হয়েছে চার হাজার ২০৫ কোটি টাকায়।
মন্ত্রী বলেন, ২০২০-২১ অর্থবছরে দেশের দরিদ্রপ্রবণ ১১২টি উপজেলাকে শতভাগ বয়স্কভাতা কর্মসূচির আওতায় আনা হয়েছে এবং ২০২১-২০২২ অর্থবছরে আরও ১৫০টি উপজেলাকে শতভাগ বয়স্ক ভাতার আওতাভুক্ত করা হয়েছে। বর্তমানে ২৬টি উপজেলায় ভাতা পাওয়ার উপযোগী শতভাগ লোক ভাতার আওতায় এসেছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ পরিচালনার দায়িত্বভার গ্রহণ করার পর বর্তমান মেয়াদ পর্যন্ত সময়ে প্রতিটি কর্মসূচিতে বাজটে, উপকারভোগীর সংখ্যা কয়েকগুণ বেড়েছে বলেও জানান সমাজকল্যাণমন্ত্রী।
তিনি বলেন, বিগত ১৫ বছরে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় বাস্তবায়িত জনকল্যাণমূলক সেবাখাতগুলো বাজেটের আকার ১২ গুণ বাড়ানো হয়েছে। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক বাজেট ছিল এক হাজার ১৩ কোটি ৩১ লাখ ৫৪ হাজার টাকা, যা ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাজেট ১২ হাজার ২১৬ কোটি ৮৪ লাখ টাকায় উন্নীত হয়েছে।
তিনি বলেন, ২০০৮-০৯ অর্থবছরে বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা নারী ভাতা খাতে জনপ্রতি মাসিক ২৫০ টাকা হারে ৯ লাখ বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা নারীর জন্য বাজেট বরাদ্দ ছিল ২৭০ কোটি টাকা। তা মাথাপিছু মাসিক ৫৫০ টাকা হারে বেড়ে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ২৫ লাখ ৭৫ হাজার জনের জন্য বাজেট বরাদ্দ ১৭১১ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে।
সমাজকল্যাণমন্ত্রী বলেন, ২০০৮-০৯ অর্থবছরে প্রতিবন্ধী ভাতা খাতে জনপ্রতি মাসিক ২৫০ টাকা হারে ২ লাখ প্রতিবন্ধী ব্যক্তির জন্য বাজেট বরাদ্দ ছিলে ৬০ কোটি টাকা। বর্তমানে মাথাপিছু ভাতা মাসিক ৮৫০ টাকা হারে বেড়ে ২৯ লাখ জনের জন্য বাজেট ২৯৭৮ কোটি টাকা করা হয়েছে। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে প্রতিবন্ধী শিক্ষা-উপবৃত্তিখাতে ১৩ হাজার প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর জন্য বাজেট বরাদ্দ ছিল ৬ কোটি টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ১ লাখ প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর জন্য বাজেট বরাদ্দ হয়েছে ১১২ কোটি ৭৪ লাখ টাকা।
মন্ত্রী বলেন, ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ভাতা ভোগীদের পাশ বইয়ের মাধ্যমে দেয়া হতো বলে অনেক ভাতাগ্রহীতা প্রাপ্য হিস্যা থেকে বঞ্চিত হতো। এ প্রেক্ষিতে ২০১৫-১৬ অর্থবছর থেকে সকল ভাতা ভাতাভোগীর নিজস্ব ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে দেয়ার নিয়ম চালু করা হয়েছে বলে ভাতাভোগীদের প্রাপ্য হিস্যা নিশ্চিত হয়েছে।
মন্ত্রী আরও জানান, ২০১৮ সালের জুলাই মাস থেকে জিটুপি পদ্ধতিতে ভাতা দেওয়ার পাইলট প্রোগ্রাম শুরু করা হয়। ২০২১ সালের ১৪ জানুয়ারী প্রধানমন্ত্রীর জিটুপি পদ্ধতিতে সরাসরি ভাতাভোগীদের হাতে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ভাতা বিতরণ উদ্বোধন করেন। বর্তমান সরকারের মেয়াদকালে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের জন্য এটি ছিলো একটি মাইলফলক অর্জন। যার ফলে বর্তমানে শতভাগ ভাতাভোগী মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে নির্বিঘ্নে ঘরে বসে নিয়মিতভাবে ভাতা পাচ্ছেন। জিটুপি পদ্ধতিতে ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে প্রায় এক কোটি ৫ লাখ ভাতাভোগী ভাতা পেয়েছেন।
সেমিনারে মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. খায়রুল আলম সেখ এবং সমাজসেবা অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. আবু সালেহ্ মোস্তফা কামাল বিশেষ অতিথি ছিলেন।
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মাসউদুল হকের সঞ্চালনায় এতে সভাপতিত্ব করেন সভাপতি ফসিহ উদ্দীন মাহতাব।
বাংলাদেশ সময়: ১৬০৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১১, ২০২৩
এমআইএইচ/জেএইচ