ঢাকা, শুক্রবার, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ মে ২০২৪, ০১ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

ইতালির উদ্দেশে ঘর ছেড়ে ৬ মাস ধরে নিখোঁজ মাদারীপুরের ১৭ যুবক

ইমতিয়াজ আহমেদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট     | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২০, ২০২৩
ইতালির উদ্দেশে ঘর ছেড়ে ৬ মাস ধরে নিখোঁজ মাদারীপুরের ১৭ যুবক নিখোঁজ স্বজনদের ফিরে পেতে মানববন্ধন। ডানে ইনসেটে অভিযুক্ত আল-আমিন

মাদারীপুর: ইতালি যাওয়ার উদ্দেশে ঘর ছেড়ে ছয় মাস ধরে নিখোঁজ রয়েছেন মাদারীপুরের ১৭ যুবক।  

এদিকে স্বজনদের ফিরে পেতে উৎকণ্ঠায় দিন কাটছে পরিবারের।

ঘুরছেন প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে।  

জানা গেছে, ইতালি নেওয়ার কথা বলে সৌদি আরব নিয়ে যাওয়া হয়েছে ১৭ যুবককে। সৌদি বিমান বন্দরে নামার পর তারা (১৭ যুবক) জানতে পারেন, ইতালি নয়, তাদের নিয়ে আসা হয়েছে সৌদি আরব। এর পর আটকে রাখা হয় একটি বন্দিশালায়। দালালদের চাহিদা মতো মুক্তিপণ না দেওয়ায় ছয় মাস ধরে খোঁজ নেই তাদের। এ ঘটনায় থানা ও আদালতে একাধিক মামলাও হয়েছে। আল-আমিন নামে মূলহোতা গ্রেপ্তার হলেও জামিনে বেড়িয়ে বর্তমানে পলাতক রয়েছেন। এ ঘটনায় বিচার চেয়ে সম্প্রতি মানববন্ধনও করেছেন নিখোঁজদের স্বজনরা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মাদারীপুরের বড় মেহের গ্রামের হাফিজুল ও মফিজুল শিকদার ইতালি যাওয়ার জন্য ২৪ লাখ টাকা দেন আল-আমিন নামের এক দালালকে। কিন্তু ২০২২ সালের ২৬ মার্চ বিমান থেকে নেমেই তারা বুঝতে পারেন এসেছেন সৌদি আরব! পরে সেখানে পুলিশ হাতে ধরে পড়ে একমাস জেল খেটে অবশেষে দেশে ফিরেন দুই ভাই।

একইভাবে প্রতারণার শিকার দত্তেরহাট ও চাপাতলী গ্রামের অন্তত ১৭ যুবক। তাদের প্রত্যেকের কাছ থেকে ১২-১৪ লাখ টাকা করে নেয় দালালচক্র। পরে সৌদি নিয়ে একটি ঘরে আটকে রেখে তাদের ওপর চালানো হয় নির্যাতন।

স্বজনদের কাছে পাঠানো মোবাইলে ধারণ করা ভিডিওতে দেখা যায়, একটি কক্ষে আটক ১৫-১৭ জন যুবক। তারা দেশে ফেরার জন্য সরকারের কাছে আকুতি জানাচ্ছেন।  

আর দালালদের চাহিদামতো মুক্তিপণ না দেওয়ায় যুবকদের খোঁজ মিলছে ছয় মাস ধরে। এ ঘটনায় জড়িতদের বিচার চাওয়ার পাশাপাশি সন্তানদের ফিরে পেতে মানববন্ধন করেছেন স্বজনরা।

হাফিজুল ও মফিজুল শিকদারের মা আছিয়া বেগম বলেন, আমার দুই ছেলেকে ইতালি নেওয়ার কথা। কিন্তু আল-আমিন তাদের সৌদি নিয়ে যান। পরে জেল খেটে আমার দুই ছেলে দেশ ফেরে। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে ১৭ যুবককে একইভাবে সৌদি নিয়ে প্রতারণ করেছে দালাল আল-আমিন ও তার লোকজন। পরে এই ঘটনার বিচার চেয়ে মামলা করেছি।

লোকমান খান নামের এক ভুক্তভোগী বলেন, আমাকে ইতালি নেওয়ার কথা বলে দালাল আল-আমিন আমার কাছ থেকে ১৪ লাখ টাকা নেন। পরে সৌদি আরব নিয়ে আমাকে অক্লান্ত পরিশ্রমের কাজ করান। পরে আমি অসুস্থ হয়ে পড়ি। তখন, আল-আমিন ও তার লোকজন আমাকে রেখেই পালিয়ে যান। অন্যমানুষ আমাকে অসুস্থ অবস্থায় সৌদিতে হাসপাতালে ভর্তি করেন। পরে আউট পাস নিয়ে দেশ ফিরে আসি। দালাল আল-আমিনের ফাঁদে পড়ে আমার সবকিছুই হারিয়েছি। এই ঘটনার বিচার চাই, আর আমার পাওনা টাকা ফেরত চাই।

নিখোঁজ ইলিয়াস বেপারীর মামাতো ভাই আলী আকবর বলেন, দালাল আল-আমিন আশা দিয়েছিলেন, ইলিয়াসকে সৌদি আরব থেকে ইতালি নেবে বলে ১২-১৩ লাখ টাকা নিয়েছেন আল-আমিন। কিন্তু ইলিয়াসকে নিয়ে যাওয়া হয় সৌদি আরব। কিছুদিন যাবার পর ইলিয়াসের কোনো খোঁজ পাচ্ছি না।

মাদারীপুর সদর উপজেলার মোস্তফাপুর ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য হাবিব হাওলাদার বলেন, মোস্তফাপুর ইউনিয়নের বেশ কয়েকজনের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে দালালচক্র। এ ব্যাপারে অভিযুক্ত আল-আমিনের বাড়িতে গিয়েও এর কোনো সমাধান হয়নি। যারা সৌদি আরব গিয়ে নিখোঁজ হয়েছেন, তাদের স্বজনরা প্রতিনিয়তই কান্নাকাটি করছেন।

অভিযুক্ত আল-আমিনের মা কাজল বেগম দাবি করেন, আমরা চক্রান্তের শিকার হয়েছি। আমার ছেলে আল-আমিন এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত না। মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাদের হয়রানি করা হচ্ছে।

মাদারীপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) মাসুদ আলম বাংলানিউজকে বলেন, অভিযুক্ত আল-আমিন বলাইরকান্দি গ্রামের আতিয়ার বেপারীর ছেলে। এই ঘটনায় আল-আমিন ও তার পরিবারের লোকজনসহ বেশ কয়েকজনের নামে দায়েরকৃত একটি মামলা তদন্ত করছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ও আরেকটি থানা পুলিশ। এ ঘটনায় প্রাথমিকভাবে আল-আমিন জড়িত থাকার ব্যাপারে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে। ভুক্তভোগীদের কথা চিন্তা করে শিগগিরই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬১৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ২০, ২০২৩
এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।