ঢাকা, সোমবার, ৩০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ মে ২০২৪, ০৪ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

বিচ্ছিন্ন সংঘর্ষ-ভাঙচুর শেষে হরতালের ইতি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৪০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৯, ২০২৩
বিচ্ছিন্ন সংঘর্ষ-ভাঙচুর শেষে হরতালের ইতি

ঢাকা: সারা দেশে বিচ্ছিন্ন কিছু সংঘর্ষ ও কয়েকটি ভাঙচুরের ঘটনার মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে বিএনপির ডাকা সকাল-সন্ধ্যার হরতাল। এ কর্মসূচি চলার সময় কোনো হতাহত হয়নি।

শনিবার (২৮ অক্টোবর) রাজনৈতিক দলগুলোর সমাবেশ ঘিরে রাজধানীতে দিনভর উত্তাপ, সংঘর্ষ ও প্রাণহানির মধ্যে হরতালের ডাক দেয় বিএনপি-জামায়াত ও সমমনা দলগুলো। সারা দিনের এ কর্মসূচিতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বিচ্ছিন্ন ককটেলবাজি, ভাঙচুর, গাড়িতে আগুন দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটে।

ঢাকার বাইরের বিভিন্ন এলাকায় সংঘর্ষ, পিকেটিং ও যানবাহনে আগুন দেওয়ার খবর পাওয়া গেছে। রেলপথ ও মহাসড়ক অবরোধের ঘটনাও ঘটেছে কোনো কোনো জায়গায়। পিকেটারদের রুখে দিতে অন্যান্যবারের মতোই রাজধানীসহ সারাদেশে তৎপর ছিল আইন শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী। বিশেষ করে রাজধানীতে কঠোর অবস্থানে ছিল পুলিশ।

তিন বছর আট মাস পর সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে ডাকা বিএনপি-জামায়াতের হরতালে ঢাকার বেশিরভাগ সড়কে যাত্রীবাহী বাস চলাচল তেমন চোখে পড়েনি। রাস্তায় ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা ও জনচলাচলও ছিল কম। দেখা মেলেনি চিরচেনা যানজটের। পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোয় ছিল পুলিশ প্রহরা। লাঠিসোটা হাতে জায়গায় জায়গায় ছিল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীদের সরব উপস্থিতি। চলেছে বিজিবির টহল।

রোববার সকালে রাজধানীর গুলশান-২ নম্বরের বাসা থেকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে আটক করে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। এছাড়া মির্জা আব্বাস ও বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের লালমাটিয়ার বাসায় তল্লাশি চালায় পুলিশের গোয়েন্দা শাখা ডিবি।

বিএনপির ডাকা সকাল-সন্ধ্যার হরতাল উপলক্ষে নয়াপল্টনে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে দিনভর কড়া নিরাপত্তা ছিল। সকালে থেকেই এ কার্যালয়ের সামনে পুলিশের কয়েকটি ব্যাটালিয়ন মোতায়েন ছিল। এছাড়াও, ঢাকা মহানগর পুলিশের নিয়মিত টহলদারি ছিল। বিএনপি নেতাকর্মীদের কর্মসূচির কারণে কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভকারীরা জড়ো হওয়ার আশঙ্কা ছিল। যে কারণে দিনভর কার্যালয়ের সামনে পুলিশের সদস্যরা টহল দিয়েছেন। কার্যালয়ের সামনের অংশটিও বেষ্টনী দিয়ে আটকে দেওয়া হয়েছিল।

বিএনপি ও জামায়াতের ডাকা হরতালের মধ্যে রাজধানীর গুলিস্তান, মোহাম্মদপুর ও বংশালে তিনটি বাস পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। রোববার সকাল ৯টা থেকে সাড়ে ১০টার মধ্যে এসব ঘটনা ঘটে বলে জানান ফায়ার সার্ভিস নিয়ন্ত্রণ কক্ষের কর্মকর্তা এরশাদ হোসাইন। মোহাম্মদপুরে বাসে আগুন দিয়ে পালানোর সময় ধাওয়া খেয়ে একজন নিহত হন বলে জানান তিনি।

বিএনপি-জামায়াত ও সমমনা দলগুলোর ডাকা হরতালের সমর্থন এবং যুবদল নেতা শামীম মোল্লা হত্যার প্রতিবাদে দৈনিক বাংলা ও ফকিরাপুল এলাকায় মিছিল-সমাবেশ করেছে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদল। সকালে দৈনিক বাংলা মোড় থেকে যুবদল কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির ১ নম্বর সহ-সভাপতি নুরুল ইসলাম নয়নের নেতৃত্বে এ মিছিল বের হয়।

হরতালের সমর্থনে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে বিক্ষোভ করেছে জামায়াতে ইসলামী। সকাল থেকে দলটির নেতাকর্মীরা রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ঝটিকা মিছিল করে। তুরাগ থানা এলাকায় সকালে তুরাগ মধ্য থানার আমির গাজী মনির হোসেনের নেতৃত্বে একটি মিছিল উত্তরা ১২ নম্বর সেক্টর খালপাড় থেকে শুরু হয়ে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে।

বিএনপি-জামায়াতের ডাকা হরতালে রোববার গাবতলী থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত কোনো বাস ছাড়েনি। কাউন্টার মালিকেরা জানান, যাত্রী সংকটের কারণে আজ একটিও বাস ছাড়তে পারেননি। তবে জরুরি প্রয়োজনে কিছু যাত্রীকে বাস ছাড়ার বিষয়ে খোঁজ নিতে দেখা গেছে। এছাড়া হরতালে ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে চোখে পড়েনি তেমন কোনো যানবাহন। মাঝে মধ্যে দুয়েকটি বাস চললেও সংখ্যায় তা খুবই কম।

সকাল-সন্ধ্যা হরতালে নগরীর বিভিন্নস্থানে পিকেটিং করছে বিএনপিসহ অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। বেলা ১২টার সময় মগবাজার মোড় থেকে রেলগেট পর্যন্ত অবরোধ রেখে বিক্ষোভ করেছে।

এদিকে বিএনপি-জামায়াতের হরতালের মধ্যেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ সমাবর্তনে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে মরণোত্তর ‘ডক্টর অব লজ’ ডিগ্রি দিতে বিশেষ এই সমাবর্তনের আয়োজন করা হয়।

বিএনপির ডাকা হরতালে বেলা সাড়ে ১১দিকে ঢিলেঢালা ভাব লক্ষ্য করা গেছে রাজধানীর মিরপুরে। তবে সকালে পল্লবীর সিটি ক্লাবে একটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে বলে জানা যায়। হরতালের প্রতিবাদে মিরপুর গোল চত্বরে শান্তি সমাবেশ করছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।

শনিবার নয়াপল্টনে মহাসমাবেশ চলাকালীন সংঘর্ষ শুরু হয় বিএনপি-পুলিশ ও বিএনপি-আওয়ামী লীগের। পরে বিকেল সোয়া তিনটার দিকে দলীয় বক্তব্য বন্ধ করে হরতালের ঘোষণা দেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সমাবেশে সভাপতি হিসেবে বক্তব্য দেওয়ার কথা ছিল তার, কিন্তু সেটি তিনি পারেননি।

হরতালের বিষয়ে বিএনপির কর্মসূচির তীব্র সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ। হরতালের বিপরীতে মাঠে থেকে বিএনপিকে প্রতিহত করার ঘোষণাও দেয় দলটি।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৯, ২০২৩
এইচএমএস/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।