ঢাকা, মঙ্গলবার, ৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

দুই নদীর ভাঙনে অস্তিত্ব সংকটে শীলপাড়া

মোমেনুর রশিদ সাগর, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৪০ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩, ২০২৩
দুই নদীর ভাঙনে অস্তিত্ব সংকটে শীলপাড়া

গাইবান্ধা: যুগযুগ ধরে দুদিক থেকে দুই নদীর ধারাবাহিক ভাঙনে ক্রমশ অস্তিত্ব হারাচ্ছে গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার কিশোরগাড়ি ইউনিয়নের মুংলিশপুর গ্রামের শিলপাড়া নামে হিন্দু অধ্যুষিত একটি এলাকা। যদিও মংলিশপুর গ্রাম জুড়েই ভাঙন দৃশ্য বিদ্যমান।

 

দ্বীপের মত ভেসে থাকা এলাকাটিতে এক সময়ে ২৫০টি পরিবারের বসতি থাকলেও এখন অবশিষ্ট রয়েছে মাত্র ৫০টি। ডিঙি নৌকা আর ভাঙা সড়কের জড়াজীর্ণ সাঁকোয় সর্বদা মন্থর তাদের জীবন-জীবিকার গতি। ভাঙনরোধসহ যেকোনো সংস্কারের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা এলাকাবাসীর।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, নদীর পৃষ্ঠ থেকে অনেক উঁচুতে অবস্থান পাড়াটির। পূর্বে করতোয়া পশ্চিমে আখিরা নদীর ক্রমশ ভাঙনে মানচিত্র থেকে মুছে যাচ্ছে এলাকাটি। ভূখণ্ডের তলদেশ ক্ষয়ে বসতবাড়ি-গাছপালাসহ নদীগর্ভে বিলীন। সেই সঙ্গে ভিটেমাটি হারা হচ্ছেন একের পর এক পরিবার। পাড়াটির শিশু থেকে বৃদ্ধ সবার চোখে-মুখে অস্তিত্ব রক্ষার করুণ আকুতি।

মুংলিশপুর গ্রামের বাসিন্দা অনন্ত কুমার পাল জানান, জন্মের পর থেকেই প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই করে আসছেন মুংলিশপু গ্রামের প্রতিটি মানুষ। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হারে অস্তিত্ব হারিয়েছে শিলপাড়াটি। এখানে এক সময় ২৫০টি পরিবারের বসবাস ছিল। সামনে থেকে আখিরা ও পেছন থেকে করতোয়া নদীর অব্যাহত ভাঙনে এ পর্যন্ত ২০০ পরিবার ভিটেমাটি হারিয়ে পাশের দিনাজপুর জেলায় বসতি গড়েছেন। বর্তমানে অবশিষ্ট ৫০ পরিবারের প্রতিটি দিনরাত কাটে ভাঙন আতঙ্কে।  

তিনি আরও জানান, এলাকাটিতে আজও লাগেনি উন্নয়নের কোনো ছোঁয়া। চলাচলে আজও ভরসা ডিঙি নৌকা। এছাড়া বর্ষায় কাঁদা মাখা রাস্তায় চলাচলের দুর্ভোগতো আছেই।  

পাড়াটির গ্রাম সভাপতি প্রভাত চন্দ্রশীল জানান, এলাকাটি পলাশবাড়ী উপজেলার অন্তর্গত হলেও দৈনন্দিন নানা প্রয়োজনে ডিঙি নৌকায় আখিরা নদী পার হয়ে পাশের দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলায় যাতায়াত করে থাকেন। সম্প্রতি আখিরা নদীর ভাঙনে সড়ক ধসে যাওয়ায় শীলপাড়ায় অবস্থিত জড়াজীর্ণ কাঠের সাকোটি ভেঙে পড়েছে। ফলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীসহ অন্যরা চলাচল করতে বাধ্য হচ্ছে।

তিনি আরও জানান, নদীতে পানি-স্রোত কম তথা আসন্ন শীত মৌসুমে পরিবেশ অনুকূলে থাকায় ভাঙন রোধসহ রাস্তা-সাঁকো সংস্কারের জন্য এটিই সঠিক সময়। তাই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।

শ্রীমতি মিনা রাণী জানান, নদীভাঙনের পাশাপাশি যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় তাদের প্রাপ্তবয়স্ক ছেলে-মেয়েদের বিয়ে হচ্ছে না। অত্র এলাকায় আত্মীয়তা করতে অনাগ্রহ দেখা যায়।

গণকপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থী বর্ষা ও চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী বর্ষা জানান, তাদের প্রতিদিন ঝুঁকিপূর্ণ কাঠের সাঁকো পার হতে হয়। এসময় ভয়ে তাদের হাত-পা কাঁপতে থাকে। তারা দ্রুত সাঁকোটি সংস্কারের দাবি জানায়।

কিশোরগাড়ি ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্য আলমগীর প্রামাণিক জানান, মুংলিশপুর গ্রামের শীলপাড়াটি নদী ভাঙনে ক্রমশ ছোট হয়ে আসছে। সরকারিভাবে প্রাপ্ত বরাদ্দ দিয়ে এ ধরনের ভাঙন মোকাবেলা সম্ভব নয়।  

এ ব্যাপারে পলাশবাড়ী নির্বাহী অফিসার ( ইউএনও) কামরুল হাসান জানান, সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান আবেদন করলে জড়াজীর্ণ সাঁকোটি সংস্কারে বরাদ্দ দেওয়া হবে।  

পলাশবাড়ী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান একেএম মোকেছদ চৌধুরী বিদ্যুৎ জানান, জরাজীর্ণ সাঁকোটির স্থলে ত্রাণের বরাদ্দ থেকে আগামীতে একটি সেতু নির্মাণের প্রস্তাবনা রয়েছে। এছাড়া এলাকাটিতে ভাঙন ঠেকাতে পানি উন্নয়ন বোর্ড চাইলে উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে।

গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাফিজুল হক জানান, এলাকাটিতে ভাঙন রোধ কি ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করা যায়। তার ওপর সমীক্ষা চলমান রয়েছে। প্রাপ্ত ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪০ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৩, ২০২৩
এসএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।