ঢাকা, মঙ্গলবার, ৭ শ্রাবণ ১৪৩২, ২২ জুলাই ২০২৫, ২৬ মহররম ১৪৪৭

জাতীয়

উপজেলা চেয়ারম্যানের বাড়িতে শিক্ষককে দেড় ঘণ্টা আটকে নির্যাতনের অভিযোগ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১:১৭, নভেম্বর ১০, ২০২৩
উপজেলা চেয়ারম্যানের বাড়িতে শিক্ষককে দেড় ঘণ্টা আটকে নির্যাতনের অভিযোগ অভিযুক্ত মোস্তফা ফরিদ আহমেদ চৌধুরী ও প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ নুরুল আমিন

যশোর: যশোরে এক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে দেড় ঘণ্টা ধরে শারীরিকভাবে নির্যাতন করার অভিযোগ উঠেছে সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। নিয়োগ ও ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গত বুধবার (৮ নভেম্বর) সকালে উপজেলা চেয়ারম্যানের বাড়িতে ডেকে নিয়ে এই নির্যাতন করা হয় বলে অভিযোগওই শিক্ষকের।

অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম মোস্তফা ফরিদ আহমেদ চৌধুরী। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকও। আর ভুক্তভোগী মোহাম্মদ নুরুল আমিন যশোর আদর্শ বহুমুখী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক।

নুরুল আমিনের অভিযোগ, নির্যাতনের ঘটনার আগে তিনি জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে যশোরের কোতোয়ালি মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরির (জিডি) আবেদন করেছিলেন। সেখানে তিনি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের হাতে নির্যাতনের শিকার হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন। নির্যাতনের ঘটনাটি জানাজানি হওয়ায় বর্তমানে ভয়ে তিনি বাড়ি থেকেও বের হতে পারছেন না।  

এছাড়া ওই বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট মোকাররম হোসেন টিপুও ভয়ে স্কুলে যেতে পারছেন না বলে অভিযোগ তার।

জানা যায়, আগামী ডিসেম্বরে যশোর আদর্শ বহুমুখী বলিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির মেয়াদ শেষ হবে। নিয়ম অনুযায়ী কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেন প্রধান শিক্ষক। বিদ্যালয়টির কয়েক শ’ গজ দূরে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তফা ফরিদ আহমেদ চৌধুরীর বাড়ি। ফলে বিদ্যালয়টির ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হতে ইচ্ছুক তিনি। কিন্তু তাকে সভাপতির পদ নিশ্চিত না করে নির্বাচন করার উদ্যোগ নেওয়ায় ক্ষিপ্ত হন মোস্তফা ফরিদ। এজন্য প্রধান শিক্ষককে একাধিকবার ফোন করে ও লোকজন পাঠিয়ে গালাগালি করেন তিনি।

ভুক্তভোগী প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ নুরুল আমিন জানান, বিদ্যালয়টিতে সম্প্রতি তিনজন কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। নিয়ম মতো ম্যানেজিং কমিটি তাদের নিয়োগ দিয়েছে। কিন্তু নিয়োগের আগেই উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তফা ফরিদ আহমেদ চৌধুরী প্রধান শিক্ষককে একাধিকবার ফোন করে নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ করার জন্য বলেন। পরবর্তীকালে নিয়োগ হয়ে গেলে উপজেলা চেয়ারম্যান ফোন করে প্রধান শিক্ষককে নিয়োগপ্রাপ্তদের তার বাড়িতে পাঠিয়ে দিতে নির্দেশ দেন। কিন্তু কর্মচারীরা না যাওয়ায় মোস্তফা ফরিদ প্রধান শিক্ষকের ওপর ক্ষিপ্ত হন। তিনি একাধিকবার ফোন করে হুমকি দেওয়ার পাশাপাশি তার লোকজনকে স্কুলে পাঠিয়ে প্রধান শিক্ষককে হুমকি দেন। এক পর্যায়ে বাধ্য হয়ে গত বুধবার (৮ নভেম্বর) সকাল ১০টার দিকে প্রধান শিক্ষক উপজেলা চেয়ারম্যানের বাসভবনে যান। সেখানে গেলে নিজের দোতলার বাসভবনে নিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান গালাগাল করেন প্রধান শিক্ষককে। পরে তার নিচের অফিসে বসে থাকা লোকজনকে ওপরে ফোন করে ডেকে নিয়ে নির্যাতন করতে নির্দেশ দেন।

ভুক্তভোগীর অভিযোগ, মোস্তফা ফরিদ আহমেদ চৌধুরীর উপস্থিতিতে ওই লোকজন দেড় ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে প্রধান শিক্ষককে নির্যাতন করেন। তারা প্রধান শিক্ষকের গোপনাঙ্গও চেপে ধরেন। মাথা, ঘাড়, মুখসহ বিভিন্ন স্থানে কিল, ঘুষি মারতে থাকেন। এক পর্যায়ে প্রধান শিক্ষক শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। পরে তিনি সেখান থেকে বেরিয়ে যশোর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নেন।

প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘আমি জীবনের নিরাপত্তাহীনতায় আছি। শিক্ষকতা জীবনে আমি কোনো অন্যায় করিনি। সততা-নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছি। আর এই বয়সে এসে আমি একজন জনপ্রতিনিধির কাছ থেকে এমন নির্যাতনের শিকার হবো, তা কখনো কল্পনাও করিনি। আমার বিচার চাওয়ার ভাষা নেই। হত্যার হুমকির হুলিয়া নিয়ে দিন পার করছি। প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া কারও কাছে বিচার চাইতেও পারছি না। আমি প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি কামনা করে ন্যায়বিচার চাইছি। ’

এই বিষয়ে অভিযুক্ত উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তফা ফরিদ আহমেদ চৌধুরীর মোবাইল ফোনে কয়েক দফায় ফোন করা হলেও তার সাড়া মেলেনি।

যশোর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. আহসান হাবিব বলেন, প্রধান শিক্ষক নুরুল আমিনকে দেড় ঘণ্টা ধরে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্যাতন চালিয়েছেন বলে ঘটনাটি আমি প্রধান শিক্ষকের মাধ্যমে শুনেছি। বিষয়টি অত্যন্ত নিন্দনীয়।

যশোর কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। অভিযোগ পেলে তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জিডির জন্য প্রধান শিক্ষকের লিখিত আবেদন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ওসি বলেন, সাধারণত ডিউটি অফিসাররা জিডির আবেদন গ্রহণ করেন। তারপর তদন্ত করে জিডি গ্রহণ করা হয়, ওই অভিযোগের তদন্ত চলছে।

এ ব্যাপারে যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জুয়েল ইমরান বাংলানিউজকে বলেন, ওই শিক্ষকের থানায় জিডির আবেদনটির তদন্ত চলছে।

বাংলাদেশ সময়: ২১১২ ঘণ্টা, নভেম্বর ১০, ২০২৩
ইউজি/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।