ঢাকা, রবিবার, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৯ মে ২০২৪, ১০ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

ভয়াল ১২ নভেম্বর 

এক পুকুরেই ছিল ২৫ লাশ!

শফিকুল ইসলাম খোকন, উপজেলা করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১২২ ঘণ্টা, নভেম্বর ১২, ২০২৩
এক পুকুরেই ছিল ২৫ লাশ! ভয়াল ১২ নভেম্বরের বর্ণনা দিলেন পাথরঘাটার আব্দুর রব

পাথরঘাটা (বরগুনা): আব্দুর রব, বয়স ৭২ বছর। এই বয়সে দেখেছেন বন্যাসহ অনেকরকম দুর্যোগ।

কিন্তু তার কথায়, ৭০ সালের জলোচ্ছ্বাসের মতো কোনো দুর্যোগ বা লাশের সারি দেখেননি তিনি।

১৯৭০ সালের ১২ নভেম্বরের প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ের ভয়ঙ্কর স্মৃতিচারণ করলেন আব্দুর রব। ওই দুর্যোগে প্রাণহানি হয় ৫ লাখের বেশি মানুষের। আজ ১২ নভেম্বর। দীর্ঘ বছররেও সেই ভয়াল দিনের কথা ভোলেনি উপকূলবাসী।  

কথা হয় উপজেলার লাকুরতলা গ্রামের ৭২ বছর বয়সী আব্দুর রবের সঙ্গে। আজও স্মৃতিশক্তি এখনো লোপ পায়নি। সেই ইতিহাসের বর্ণনা দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন।

১৯৭০ সালের ১২ নভেম্বরের ঘূর্ণিঝড়ের কথা জিজ্ঞাসা করা মাত্রই আব্দুর রব বলেন, ‘মোর বয়সে অনেক বন্যা দেখছি। ৭০ এর পানির বন্যার মতো বন্যার আর দেহি নাই। এই বন্যায় দেখেছি লাশ আর লাশ। ’ 

তিনি আরও বলেন, ‘বাড়ির কাছে একটি খাস পুকুরে ২৫ থেকে ৩০টি লাশ পেয়েছি। ওই লাশ এলাকাবাসীর সহযোগিতায় দাফন দিয়েছি। অনেক লাশের জানাজাও দেওয়ার সুযোগ হয়নি। আজও সেই কথা মনে পড়লে গাঁ শিউরে ওঠে। ’

কথা হয় ১০৯ বছর বয়সি আবূল হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন,ওই বন্যায় মোর পরিবারের ৫জন লোক মারা যায়। ’ সেই দিনের কথা বলতে গিয়ে আবুল হাশেম বলেন, সকাল হওয়ার পর দেখি লাশ আর লাশ। আজও চোখের সামনে ভাসে গাছে গাছে সারিবদ্ধ লাশ।  

আবুল আরও জানান, বন্যার সময় তাদের ঘর ভেঙে যাওয়ায় এবং পানি তলিয়ে যাওয়ায় তারা কাঁঠাল গাছের মাথায় উঠেছিলেন। ভাগ্যক্রমে তারা কয়েকজন বেঁচে গেলেও ছোট ভাই আদম আলী, তার স্ত্রী ও ছেলেসহ ৫জন সদস্য পানিতে ভেসে মারা যায়।  

প্রত্যক্ষদর্শী অপর একজন সিরাজুল হক মোল্লা, তারও বয়স ৮০ বছর। তিনি বলেন, সন্ধ্যার পরেই হঠাৎ ঝড়ো বাতাস শুরু। মুহূর্তের মধ্যে পানিতে তলিয়ে যায় সব এলাকা। ঘরবাড়ি, গাছপালা ভেঙে তছনছ হয়ে যায়। সকালে উঠেই দেখা যায় খাল, বিল, ধানক্ষেতে এবং গাছের মাথায় লাশ আর লাশ।  

তিনি আরও বলেন, এরকমের ভয়াবহ অবস্থা এবং লাশের সংখ্যা আমার বয়সে আর দেখিনি।

 ১৯৭০ সালের ১২ নভেম্বর শক্তিশালী ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়টি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে (বর্তমানে বাংলাদেশ) দক্ষিণাঞ্চলে আঘাত হানে। এ পর্যন্ত রেকর্ডকৃত ঘূর্ণিঝড়সমূহের মধ্যে এটি সবচেয়ে ভয়াবহ। এটি সর্বকালের সবচেয়ে ভয়ঙ্করতম প্রাকৃতিক দুর্যোগের একটি। সিম্পসন স্কেলে ‘ক্যাটাগরি ৩’ মাত্রার ঘূর্ণিঝড় ছিল এটি।

এ ঝড়ের কারণে প্রায় ৫ লাখ মানুষ প্রাণ হারায়। যার অধিকাংশই জলোচ্ছ্বাসে ডুবে মারা যান।  

১৯৭০ সালের ১২ নভেম্বরের প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ের দিনটিকে ‘উপকূল দিবস’ হিসাবে পালিত হচ্ছে আজ।  যেসব কর্মসূচি রয়েছে আজ - শোভাযাত্রা, আলোচনা সভা, ঘূর্ণিঝড়ে প্রয়াতদের স্মরণে মোমবাতি প্রজ্বলন এবং স্মারকলিপি পেশ।

এ দিবস উপলক্ষে বরগুনার পাথরঘাটায় পাথরঘাটা উপকূল সুরক্ষা আন্দোলনের আয়োজনে ‘উপকূল দিবস’র বেলা ১১ টায় প্রেসক্লাব চত্বরে র‌্যালি শেষে দোয়া অনুষ্ঠান করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১১১৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১২, ২০২৩
এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।