ঢাকা, শনিবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০২ নভেম্বর ২০২৪, ০০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

রাজৈরের বাজিতপুর ইউপিতে সচিব নেই একমাস, অন্যটিতে দুইজন!

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট     | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৫৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৫, ২০২৩
রাজৈরের বাজিতপুর ইউপিতে সচিব নেই একমাস, অন্যটিতে দুইজন!

মাদারীপুর: মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার বাজিতপুর ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) প্রায় একমাস ধরে সচিব নেই।  

অন্যদিকে, ইশিবপুর ইউনিয়নে কাজ করছেন দুইজন সচিব।

এ নিয়ে স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি জনসাধারণের মনে তৈরি হচ্ছে বিভ্রান্তি।  

জানা গেছে, জেলা প্রশাসনের নির্দেশ উপেক্ষা করে রাজৈরের ইশিবপুরে কাগজপত্রে স্বাক্ষর করছেন সদ্য বদলির অর্ডার হওয়া সচিব বাদল চন্দ্র মজুমদার। অথচ, ওই ইউনিয়নটিতে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করছেন আরেক সচিব তাপসী গোলদার। এতে বিপাকে পড়েছেন সাধারণ মানুষ।

আরও জানা গেছে, স্বাভাবিক বদলির অংশ হিসেবে রাজৈরের ইশিবপুর ইউপির সচিব বাদল চন্দ্র মজুমদারকে বাজিতপুরে বদলি করেন জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মারুফুর রশিদ খান। একই চিঠিতে গত ৮ অক্টোবর স্বাক্ষর করেন স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক মো. নজরুল ইসলাম।  

চিঠিতে বলা হয়, ২০ অক্টোবরের মধ্যে বদলিকৃত ইউনিয়নে যোগদান করে সরকারি আদেশ পালন করতে। ওই চিঠিতে হোসেনপুর ইউপির সচিব তাপসী গোলদারকে ইশিবপুরে বদলি করা হয়। নিয়ম অনুযায়ী ২০ অক্টোবরের মধ্যে তাপসী গোলদার ইশিবপুরে যোগ দেন।  

অথচ, বাদল চন্দ্র মজুমদার রয়ে গেছেন ইশিবপুরেই। এখনও স্বাক্ষর করছেন ইশিবপুরের কাগজপত্রে। একটি ইউনিয়নে দুই সচিব থাকায় স্থানীয়দের মধ্যে বাড়ছে বিড়ম্বনা।  

এদিকে বাজিতপুরে থাকা সচিব মামুন খন্দকারকে বদলি করা হয় বদরশাপা ইউনিয়নে। এতে সচিবের চেয়ারটি খালি রয়েছে বাজিতপুরে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এখনও বাদল চন্দ্র মজুমদার ইশিবপুর ইউপিতে বসেই কাগজপত্রে স্বাক্ষর করছেন। সদ্য যোগ দেওয়া আরেক সচিব তাপসী গোলদারও রয়েছেন সেখানে। এতে সাধারণ মানুষ বিষয়টি নিয়ে বিভ্রান্তিতে রয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্রে স্বাক্ষর করা বাদল চন্দ্র মজুমদারের কাগজ চ্যালেঞ্জ করলে বাতিল হয়ে যাওয়ার ভয়ে স্থানীয়রা।

স্থানীয়রা জানান, সচিবের পদটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একজনের পরিবর্তে অন্যজন স্বাক্ষর করলে ভবিষ্যতে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হতে পারে আমাদের। তাই সরকারি কাগজে যিনি রয়েছেন, তিনিই কার্যক্রম সঠিকভাবে পরিচালনা করবেন -এটাই প্রত্যাশা।

ইবিশবপুর ইউপির চেয়ারম্যান মোশারফ মোল্লা বলেন, ইউনিয়নের মানুষের কাজতো হচ্ছেই। কোনো কাজতো আটকে যাচ্ছে না। আমরাও চাই আগের সচিব তিনি আমাদের ইউনিয়নেই থাকুক। তিনি লোক হিসেবে অনেক ভালো।

ইশিবপুর ইউপিতে সদ্য যোগ দেওয়া সচিব তাপসী গোলদার বলেন, আমি ইশিবপুরে যাই আর হাজিরা খাতায় সই দেই। কোনো কাগজপত্রে আমাকে সই দিতে দেওয়া হয় না, বলেও না। আগের সচিব তিনিই কাগজপত্রে সই করেন। তবে কেন করেন, সেটা আমি জানি না।

বাজিতপুরে অর্ডার হওয়া সচিব বাদল চন্দ্র মজুমদার বলেন, ‘আমাকে স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক মো. নজরুল ইসলাম মৌখিকভাবে বলেছেন ইশিবপুরে থাকতে। আমার বাজিতপুরে যেতে কোনো সমস্যা নেই।  

মৌখিক নির্দেশে কাগজপত্রে স্বাক্ষর করা যায় কি না? জানতে চাইলে তিনি বলেন, স্যার বলেছেন, তাই করছি।

বাজিতপুর ইউপি চেয়ারম্যান হালিম ফকির বলেন, আমার ইউনিয়নে মাঝে মাঝে সচিব বাদল চন্দ্র মজুমদার আসেন। সরকারি নির্দেশ সবারই পালন করা উচিত।

রাজৈর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উপমা ফারিসা বলেন, বিষয়টিতো আমাকে কেউ আগে বলেনি। একই ইউনিয়নে দুই সচিবতো থাকতে পারেন না। খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ ব্যাপারে স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক মো. নজরুল ইসলাম জানান, জেলা প্রশাসনের নির্দেশ অমান্য করার সুযোগ নেই। সচিব বাদল চন্দ্র মজুমদারকে যেখানে অর্ডার করা হয়েছে, তিনি সেখানেই থাকবেন। অন্য ইউনিয়নে তিনি কার্যক্রম পরিচালনা করলে সেটা আইনগত বৈধ নয়। মৌখিক অভিযোগ সাপেক্ষে দুই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও সচিবকে তলব করা হচ্ছে। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মাদারীপুর জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. মারুফুর রশীদ খান বলেন, যে সচিব নির্দেশ অমান্য করেছেন, তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সাধারণ মানুষের ভোগান্তি কোনো ভাবেই মেনে নেওয়া যাবে না।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৫, ২০২৩
এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।