বরিশাল: বরিশাল মহানগর পুলিশের কাউনিয়া থানায় আটক থাকা কলেজছাত্র আব্দুল্লাহ বিন লাদেনকে কোতোয়ালি মডেল থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে কোতোয়ালি মডেল থানায় মাদক নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি মামলা দায়ের করেছেন কাউনিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) রেদওয়ান হোসেন রিয়াদ।
বুধবার (২২ নভেম্বর) কাউনিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসাদুজ্জামান এ তথ্য জানান। তিনি দাবি করেন, আটক ওই যুবকের কাছ থেকে মাদক (তিন পিস ইয়াবা ট্যাবলেট) উদ্ধার হয়েছে, এটা সত্যি।
গত মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) বরিশাল লঞ্চঘাটে এসআই রিয়াদের হাতে আটক হন আব্দুল্লাহ। ওই সময় তার সঙ্গে ছিলেন মোসলেম জমাদ্দার। তারা মেহেন্দিগঞ্জের শ্রীপুর থেকে উপবন নামের একটি লঞ্চে করে বরিশালে আসেন। আব্দুল্লাহকে সেখানে আটক করে কাউনিয়া থানায় নিয়ে রাখা হয়।
ওসি বলেন, আব্দুল্লাহকে কাউনিয়া থানার পুলিশ ধাওয়া দিয়ে ধরতে গিয়ে ঘটনাস্থল কোতোয়ালি মডেল থানার মধ্যে গিয়ে পড়ে। তাই নিয়মানুযায়ী উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মামলাটি কোতোয়ালি মডেল থানায় দায়ের করা হয়েছে এবং মামলার আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে কাউনিয়া থানা থেকে অল্প সময়ের মধ্যেই কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এখানে নিয়মের কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি।
তবে আব্দুল্লাহ বিন লাদেনের বাবা মোসলেম জোমাদ্দার দাবি করেছেন, তার ছেলেকে মিথ্যে অভিযোগে ফাঁসানো হয়েছে। আদালতে জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের একটি মামলায় আদালতে হাজিরা দিতে তিনি ও তার ছেলে মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে উপবন লঞ্চে মেহেন্দিগঞ্জের শ্রীপুর থেকে বরিশাল লঞ্চঘাটে এসে পৌঁছান। লঞ্চঘাট থেকে বের হতে না হতেই দুজন ব্যক্তি নিজেদের পুলিশ পরিচয় দেয় এবং তাদের তল্লাশি করে। তল্লাশি করে কিছু না পেলেও একজন আব্দুল্লাহকে মোটরসাইকেলে নেন এবং আরেকজন মোসলেমকে রিকশায় নিয়ে নগর ঘুরে বেড়ান।
মোসলেম বলেন, ঘুরে বেড়ানোর মধ্যেই পুলিশের কর্মকর্তা এসআই রেদওয়ান হোসেন রিয়াদ এক লাখ টাকা দাবি করেন। সেই টাকা চেয়ে বাড়িতে স্বজনদের কাছে মোবাইল ফোনে কল দিতে বাধ্য করেন। পরে একটি বিকাশ নম্বরও দেন এসআই। এরপর ৪০ হাজার টাকা ম্যানেজ করে দেওয়ার শর্তে আমার ছেলেকে কাউনিয়া থানায় আটকে রেখে আমাকে মোটরসাইকেলে করে বিকেল সাড়ে ৪টায় চরকাউয়া খেয়াঘাটে পৌঁছে দেন। তখন এসআই তার নম্বর দেন এবং টাকা ম্যানেজ করে পাঠালে ছেলেকে ছেড়ে দেওয়া হবে বলে জানান।
মোসলেম আরও বলেন, টাকা ম্যানেজ করতে না পেরে রাতে থানায় গিয়ে পুলিশের কর্মকর্তাদের কাছে বিষয়টি খুলে বলি, কিন্তু তারা তাতে কোনো ভ্রুক্ষেপ করেননি।
আব্দুল্লাহর চাচাতো ভাই আব্দুর রহিম বলেন, চাচা ও চাচাতো ভাইকে ডিবি পরিচয়ে লঞ্চঘাট থেকে তুলে নেওয়ার খবরে কোতোয়ালি মডেল থানায় যোগাযোগ করি। কিন্তু তারা সন্ধান না দিলে জরুরি সেবা ৯৯৯-এর সহায়তা চাই। পরে বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পারি কাউনিয়া থানার এসআই রিয়াদ তাদের ধরে নিয়ে গেছেন এবং টাকা না দিলে ছাড়বেন না। টাকার জন্য এসআই রিয়াদের দেওয়া বিকাশ নম্বরে যোগাযোগ করে জানতে পারি সেটি বরিশাল আমতলার মোড় এলাকায় অবস্থিত। এ ধরনের প্রমাণ থাকার পরও পুলিশ চাচাতো ভাইকে মিথ্যে মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে।
তিনি বলেন, প্রতিপক্ষের সঙ্গে জমিজমা নিয়ে যে বিরোধ রয়েছে, তার সূত্র ধরে দায়েরকৃত মামলায় হাজিরা না দিতে কিংবা নতুনভাবে ফাঁসাতে এ ধরনের ঘটনা ঘটানো হয়েছে। কারণ প্রতিপক্ষের এক স্বজন পলাশপুরের ব্যবসায়ী, যার সঙ্গে পুলিশের ভালো সম্পর্ক আছে বলে অনেকে জানে। তাই নিরীহ এ কলেজছাত্রকে না ফাঁসিয়ে বিষয়টি খতিয়ে দেখার দাবি জানাই।
কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন বাংলানিউজকে জানান, কাউনিয়া থানা পুলিশের দায়েরকৃত মামলায় নিয়মানুযায়ী আসামিকে আদালতে পাঠানো হবে।
তিনি বলেন, রাতেই আব্দুল্লাহকে কোতোয়ালি থানায় হস্তান্তর করে এজাহারটি দিয়ে গেছেন বাদী। মামলাটি কাউনিয়া থানা পুলিশের সদস্য দায়ের করলেও তদন্তভার পড়েছে কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশের।
এ বিষয়ে বরিশাল মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) মো. ফজলুল করিম বলেন, ঘটনাস্থল কোতোয়ালি থানা এলাকায় হওয়ায় মামলাটি এখানে নিয়মতান্ত্রিকভাবেই দায়ের হয়েছে। তদন্তও সঠিকভাবে করা হবে।
না জানিয়ে অন্য থানা এলাকায় অভিযান চালানো বা তুলে নেওয়া ব্যক্তিকে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে ঘোরানো, রাতে দীর্ঘ সময় এক থানায় আটকে রেখে পরে অন্য থানায় হস্তান্তর এবং দাবিকৃত টাকা না দেওয়ায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ফজলুল করিম বলেন, বিষয়গুলো তদন্ত করে দেখবে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ।
তবে এ খবর জানতে পারার পরপরই উপ-পুলিশ কমিশনারকে পুরো বিষয়টি তদন্ত করে দেখার নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো. সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, কোনো ধরনের কোনো ব্যত্যয় ঘটলে সেই অনুযায়ী অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এক্ষেত্রে পুলিশের প্রশাসনিক ব্যবস্থা প্রত্যাশা করে সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সাবেক নেত্রী ডা. মনীষা চক্রবর্তী বলেন, ঘটনার তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। আর ক্ষমতার জবাবদিহিতা থাকাও দরকার, পুলিশের ক্ষমতার জবাবদিহিতা না থাকলে এ ধরনের ঘটনা ঘটতেই পারে। তাই ক্ষমতা জবাবদিহিতার মধ্যে নিয়ে আসা দরকার।
আরও পড়ুন: বাবা-ছেলেকে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসিয়ে টাকা দাবির অভিযোগ এসআইয়ের বিরুদ্ধে
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ২২, ২০২৩
এমএস/এইচএ/