খুলনা: খুলনা সরকারি মহিলা কলেজের উদ্যোগে আয়োজিত পিঠা উৎসব ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করা হয়েছে।
শনিবার (৯ ডিসেম্বর) সকালে কলেজ প্রাঙ্গণে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে পিঠা উৎসবের উদ্বোধন করেন খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক।
পিঠা উৎসবে সভাপতিত্ব করেন খুলনা সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর টি এম জাকির হোসেন। এসময় শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
পরে অতিথিরা পিঠা উৎসবের বিভিন্ন স্টল পরিদর্শন ও মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন। কলেজের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে ৩৮টি স্টল দিয়ে সাজানো হয়েছে এবারের দিনব্যাপী পিঠা উৎসব। আর সেসব স্টলে প্রদর্শন ও বিক্রি করা হচ্ছে বাহারি নাম, দেশীয় সাজসজ্জা আর হরেক রকমের পিঠাপুলি। মেলা শেষ হবে বিকেল ৫টায়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, পিঠার মৌ মৌ গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে ক্যাম্পাসজুড়ে। হরেক রকমের পিঠাপুলি নিয়ে সাজানো হয়েছে প্রতিটি স্টল। বেলুন, প্ল্যাকার্ড আর ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে পুরো ক্যাম্পাস। বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা নানা নামে বাহারি সাজের সুস্বাদু পিঠা নিয়ে হাজির হয়েছে উৎসবে। পিঠার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- চিতই, ভাপা, পুলি, পাটিসাপটা, দুধচিতই, নকশি পিঠা, গোলাপ পিঠা ও জামাই পিঠার মতো বাহারি নামের পিঠা। শিক্ষার্থীদের বৈচিত্র্যময় উপস্থাপনায় কোলাহলমুখর হয়ে উঠেছে উৎসবস্থল।
খুলনা সরকারি মহিলা কলেজের অর্থনীতি বিভাগের অনার্স প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ফাহমিদা নাহিন ঐন্দ্রিলা বলেন, পিঠা বাঙালি সংস্কৃতি ও কৃষ্টির অবিচ্ছেদ্য অংশ। পিঠা উৎসবে এসে অনেক ভালো লাগছে। নানা স্বাদে মুখরোচক পিঠা খেয়েছি। পিঠা উৎসবের এ কৃষ্টিকে সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে হবে।
গণিত বিভাগের অনার্স প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী মেহেবুবা রহমান বলেন, গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য ধারণ ও সম্প্রীতির মেলবন্ধনকে অটুট রাখতে আমাদের এ আয়োজন। নগর সংস্কৃতির প্রভাবে হারিয়ে যাওয়া পিঠা নতুন প্রজন্মের কাছে পরিচিত করার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে মেলার মাধ্যমে।
খুলনা সরকারি মহিলা কলেজের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক বিকাশ রায় বাংলানিউজকে বলেন, পিঠা উৎসব কথাটির সঙ্গে বাঙালির যাপিত জীবনের স্মৃতিচারণ একান্তভাবে জড়িত। ঐতিহ্য অথবা সংস্কৃতি কালে কালে ভিন্ন রূপ পরিগ্রহ করে, তাই বাঙালির বর্তমান জীবনপ্রবাহে নানা বৈচিত্র্য এসেছে। আজকের জীবনযাত্রা একদিন ঐতিহ্যের তকমা পাবে। হয়তো আজকের কোনো দৈনন্দিন কর্ম ভবিষ্যতে উদযাপনের মধ্য দিয়ে মর্যাদা পাবে। প্রাচীন বাঙালির জীবনযাত্রায় খেজুরের রস, পিঠা খাওয়া ইত্যাদি ছিল অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। আজ সেসব দিনের স্মৃতিচারণ পুরোনো ঐতিহ্যকে লালনেরই নামান্তর। খুলনা সরকারি মহিলা কলেজের এ মহান উদ্যোগ বাঙালির সংস্কৃতিকে পুনরুজ্জীবিত করুক এ কামনা করি।
কলেজের অধ্যক্ষ প্রফসের টি এম জাকির বাংলানিউজকে বলেন, পিঠা বাঙালির চিরায়ত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অংশ। এ পিঠা উৎসব আমরা হারাতে বসেছিলাম। একসময় শুধু গ্রামের মানুষই পিঠা খেত। শহরে ব্যস্ততার কারণে পিঠার স্বাদ নিতে নগরজীবীদের কেউ গ্রামে গিয়ে পিঠা খেয়ে আসতো অথবা গ্রাম থেকে শহরে বসবাসকারী প্রিয়জনদের জন্য পিঠা তৈরি করে পাঠাতো স্বজনরা। গ্রামবাংলার মানুষের চিরায়ত ঐতিহ্য পিঠাপুলিকে শহরবাসীর কাছে পরিচিত করতে এ পিঠা উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। পিঠা উৎসবে ৩৮টি স্টল রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪১৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৯, ২০২৩
এমআরএম/আরবি