ঢাকা, বুধবার, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ০১ মে ২০২৪, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

‘লুটেরাদের’ থেকে মুক্তি চায় দলিত নেতারা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৯, ২০২৩
‘লুটেরাদের’ থেকে মুক্তি চায় দলিত নেতারা

ঢাকা: নাগরিক উদ্যোগের ‘লুটেরাদের’ হাত থেকে সংগঠনকে রক্ষার দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে বিডিইআরএম।  

শনিবার (৯ ডিসেম্বর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনী মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হয়।

লিখিত বক্তব্যে দলিত নেতা তাতপুরী জেমস বিশ্বাস বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে এক কোটিরও ওপরে দলিত বসবাস করে। তাদের জীবনের কী অবস্থা, তারা কীভাবে বেঁচে আছে? বাংলাদেশে বর্তমান দলিত জনগোষ্ঠী ব্রিটিশ আমলে ১৮৩৫ থেকে ১৮৫০ এর মধ্যে তিনবার এ অঞ্চলে নিয়ে আসা হয়। প্রথমত চা বাগানের জঙ্গল পরিষ্কার করার কাজে, দ্বিতীয়ত ঈশ্বরদী রেলওয়ে জংশনে পরিচ্ছন্নতা কর্মী হিসেবে ও ঢাকা মিউনিসিপালিটিতে পরিচ্ছন্ন-কর্মী হিসেবে। তখন থেকে চা বাগানে কুলি, রেলওয়ে, সিটি করপোরেশন ও পৌরসভাগুলোতে আমরা সবাই বংশ পরম্পরায় পরিছন্নতাসহ নানান পেশায় জড়িত। এখন পর্যন্ত এ পেশায় আমাদেরকে থাকতে হচ্ছে। পরিচ্ছন্নতা কাজকে সামাজিকভাবে ছোট করে দেখা হয় বলে আমরা নানান বৈষম্যের শিকার ও অধিকার বঞ্চিত। মানবিক অমর্যাদার শিকার আমরা।  

অমর্যাদা- অমানবিক পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য তারই পরিপ্রেক্ষিতে ২০০২ সালে বাংলাদেশ দলিত হিউম্যান রাইটস (বিডিএইচআর) নামে একটি সংগঠন গঠিত হয়। বাংলাদেশের সমস্ত দলিতদের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে প্রয়াত নেতা বিজি মূর্তি দলিত সংগঠনটি গড়ে তোলেন।  

তিনি জানান, ২০০৮ সালে ওয়ান ওয়ার্ল্ড অ্যাকশন নামক লন্ডনস্থ এক সংস্থা থেকে অর্থ পেয়ে বাংলাদেশ দলিত ও বঞ্চিত জনগোষ্ঠী অধিকার আন্দোলন (বিডিইআরএম) নামক জাতীয় সংগঠন করা হয়। সেসময় বাংলাদেশ দলিত হিউম্যান রাইটস নাগরিক উদ্যোগের প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেনের সঙ্গে আলোচনা কর এই জাতীয় প্ল্যাটফর্মটি গঠন করা হয়।

জেমস বিশ্বাস অভিযোগ করেন, বিডিইআরএম হওয়ার পর থেকে নাগরিক উদ্যোগের প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেন আমাদের দলিত নেতাদের ভুল বুঝিয়ে কৌশলে প্রকল্পটি নিজ এনজিওর দখলে নিয়ে পরিচালনা করতে থাকেন। দিনে-দিনে আমাদের জাতীয় সংগঠন বিডিইআরএম নেতাদের কোনো মত প্রকাশের সুযোগ না দিয়ে সব জায়গায় প্রচার করতে থাকেন নাগরিক উদ্যোগ দলিত জনগোষ্ঠীকে নিয়ে আন্দোলন করে। এ সংগঠনটির গঠনতন্ত্র পরিপন্থি নিজের ক্ষমতা বলে স্বেচ্ছাচারিতা ও নিয়ম নীতি তোয়াক্কা না করে দলিত নেতৃবৃন্দদের দিয়ে তার নিজের স্বার্থসিদ্ধি জন্য রদবদল করেন।

তিনি আরও অভিযোগ করেন, কোনো দলিত নেতা সামাজিক ও জাতীয়ভাবে বিভিন্ন পর্যায়ে পরিচিত হওয়া শুরু করলে তাকে অযোগ্য বলে তার অফিসে নিয়মকানুন না মানার অভিযোগে সাংগঠনিক পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। এ বিষয়ে কেউ প্রতিবাদ করলে তাকে নানা রকম হুমকি-ধামকি ও ভয়ভীতি দিয়ে নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়। চাকরি হারানোর ভয়ে দেখিয়ে অনেক দলিত ছেলে মেয়েকে অল্প টাকায় অনেক বেশি কাজ করিয়েছেন। এভাবে বিডিইআরএমের নেতৃবৃন্দদের পর্যায়ক্রমে সংগঠন থেকে সরিয়ে দেন।  

তিনি অভিযোগ করেন, ২০২৩ সালের এপ্রিলে বিডিইআরএম-এর জেলা পর্যায়ে সাংগঠনিক কাজে ভীম পল্লী ডেবিড রাজুকে ঢাকার বাইরে পাঠিয়ে পরে বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়।

জেমস বিশ্বাস আরও বলেন, নাগরিক উদ্যোগের কার্যক্রম দলিতদের প্রতি নির্যাতন নিপীড়নের কথা বলতে গেলে অনেক কিছু বলা যায়। যেমন-দলিত প্রকল্পগুলোতে কর্মী হিসেবে দলিত শিক্ষিত ছেলে-মেয়েদের না নিয়ে নাগরিক উদ্যোগের নির্বাহী জাকির হোসেনের লোকজন তার নিজের আত্মীয়-স্বজনদের দিয়ে প্রকল্প পরিচালনা করে থাকেন। আমাদের শিক্ষিত ছেলে-মেয়েরা মাস্টার্স পাশ করার পরও যোগ্যতা নেই বলে নিম্নস্তরের কাজে নিয়োগ দেওয়া হয়।

তিনি জানান, জাকির হোসেন বিভিন্ন দেশের প্রোগ্রামগুলোতে সুকৌশলে বাংলাদেশের দলিত নেতা হিসেবে অংশগ্রহণ করে থাকেন। বর্তমানে এশিয়াভিত্তিক দলিতদের সংগঠনের ভাইস-চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। কিন্তু জাকির হোসেন বাংলাদেশে কোনো দলিত নেতা নন।

জাকির হোসেন মুক্ত বিডিইআরএম চান জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন ৩টি দাবি জানান দলিত নেতারা।

এগুলো হলো:

১. বিডিইআরএম দলিত সংগঠনটিকে নাগরিক উদ্যোগের হাত থেকে মুক্তি।

২. বিডিইআরএমকে বিডিএইচআরের কাছে হস্থান্তর করা।

৩. নাগরিক উদ্যোগ নামক এনজিও ক্যাম্পেইনের নামে কোনো দলিত প্রকল্প করতে পারবে না।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে জাকির হোসেন বলেন, বিডিইআরএম একটি সামাজিক আন্দোলন। তারা কখনো কোনো অনুদান পায়নি। আমরা নাগরিক উদ্যোগ এনজিও থেকে তাদের সহায়তা করি। ডেভিড রাজুর অনিয়মের কারণেই তিনি চাকরিচ্যুত হয়েছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৭০৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৯, ২০২৩
এমকে/এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।