ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

মাদারীপুর মুক্ত দিবস আজ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৪১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১০, ২০২৩
মাদারীপুর মুক্ত দিবস আজ

মাদারীপুর: ১০ ডিসেম্বর মাদারীপুর মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে জেলাটি শত্রুমুক্ত হয়।

আজকের এই দিনে একটানা দু’দিন-এক রাত সম্মুখযুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে আত্মসমর্পণ করলে শত্রু মুক্ত হয় মাদারীপুর জেলা। হাজার হাজার মুক্তিকামী মানুষ বাঁধভাঙা জোয়ারের মতো জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে রাস্তায় নেমে আনন্দ-উল্লাসে ফেটে পড়ে।

জানা গেছে, ডিসেম্বরের প্রথম থেকেই মাদারীপুরের সব কয়টি থানা বীর মুক্তিযোদ্ধাদের দখলে চলে আসে। এ কারণেই হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা মাদারীপুর শহরের এ আর হাওলাদার জুট মিলের অভ্যন্তরে ও নাজিমউদ্দিন কলেজে অবস্থান নেয়। আর বীর মুক্তিযোদ্ধারা চারদিক থেকে তাদের ঘিরে রাখে।  

৮ ডিসেম্বর দুপুরে তৎকালীন মহকুমা প্রশাসক আবদুল মতিনের গাড়িচালক আলাউদ্দিন কলাগাছিয়া বীর মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে সংবাদ পৌঁছে দেন যে, ৯ ডিসেম্বর ভোরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী মাদারীপুর থেকে ফরিদপুরের উদ্দেশে পালিয়ে যাবে। এ সংবাদ পেয়ে বিভিন্ন অঞ্চলের তিন শতাধিক বীর মুক্তিযোদ্ধা বর্তমান সদর উপজেলার ঘটকচর থেকে সমাদ্দার ব্রিজের পশ্চিম পাড় পর্যন্ত মহাসড়কের দু‘পাশে প্রায় ৪ কিলোমিটারজুড়ে অবস্থান নেন। ৯ ডিসেম্বর ভোর ৫টার দিকে হানাদার বাহিনী গোলা-বারুদ, অস্ত্র ও কনভয়সহ তাদের বাঙালি দোসর রাজাকার, আলবদর, আলসামস ও মুজাহিদ বাহিনী নিয়ে ফরিদপুরের উদ্দেশে রওনা দেয়।  

ভোর সাড়ে ৫টার দিকে ঘটকচর ব্রিজ পার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আক্রমণ শুরু করে বীর মুক্তিযোদ্ধারা। এ পরিস্থিতিতে দ্রুত গাড়ি চালাতে থাকে হানাদার বাহিনীরা। অবস্থা বেগতিক দেখে তারা একটি কনভয় থেকে নেমে কভার ফায়ার করতে করতে আরও দ্রুত সব গাড়ি নিয়ে এগোতে থাকে। এ সময় হানাদার বাহিনীর ফেলে যাওয়া কনভয় থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধারা বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলা-বারুদ সংগ্রহ করে নেন।  

সমাদ্দার ব্রিজে ৯ ডিসেম্বর সারাদিন সারারাত এবং ১০ ডিসেম্বর সারাদিন সম্মুখযুদ্ধ চলে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর মধ্যে। তুমুল যুদ্ধের এক পর্যায়ে হানাদার বাহিনীর গোলা-বারুদ সীমিত হয়ে এলে ১০ ডিসেম্বর বিকেলে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষ থেকে হ্যান্ডমাইকযোগে পাকিস্তানি বাহিনীকে আত্মসমর্পণ করার জন্য বলা হয়।  

এতে সাড়া দিয়ে হানাদার বাহিনী রাইফেলের মাথায় সাদা কাপড় উড়িয়ে বাঙ্কার থেকে বেরিয়ে আসে এবং পাশের খাল থেকে পানি, গাড়ি থেকে শুকনো খাবার ও গোলা-বারুদ নিয়ে পুনরায় বাঙ্কারে ঢুকে গোলাগুলি শুরু করে। কিন্তু বীর মুক্তিযোদ্ধাদের তীব্র প্রতিরোধের মুখে সন্ধ্যার আগেই হানাদার বাহিনীর মেজর আবদুল হামিদ খটক ৩৭ পাকিস্তানি সেনা ও ১৪ মুজাহিদ নিয়ে ৫৩ পাকিস্তানি জল্লাদ বীর মুক্তিযোদ্ধা খলিল বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়। মিত্র বাহিনী ছাড়া বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের মধ্যদিয়ে মাদারীপুর শত্রুমুক্ত হয়। এই যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন খলিল বাহিনী প্রধান বীর মুক্তিযোদ্ধা খলিলুর রহমান খান। যুদ্ধে শহীদ হন মাদারীপুরের সর্বকনিষ্ঠ বীর মুক্তিযোদ্ধা সরোয়ার হোসেন বাচ্চু এবং যুদ্ধে ২০ হানাদার সেনা নিহত হয়।

আত্মসমর্পণের পর বীল মুক্তিযোদ্ধারা আত্মসমর্পণকারীদের অস্ত্রশস্ত্র কভার করে সারা রাত সমাদ্দার ব্রিজে অবরোধ করে রাখেন। পরদিন ১১ ডিসেম্বর সকালে তাদের নিয়ে যাওয়া হয় কলাগাছিয়ায় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্পে। ১২ ডিসেম্বর তাদের মাদারীপুরে এনে সাব-জেলে বন্দি করে রাখা হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১০, ২০২৩
এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।