ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

১০ ডিসেম্বর ভোলা মুক্ত দিবস

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১০, ২০২৩
১০ ডিসেম্বর ভোলা মুক্ত দিবস

ভোলা: আজ ১০ ডিসেম্বর ভোলা হানাদার মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে হানাদার মুক্ত হয় ভোলা।

দীর্ঘ নয় মাসের সশস্ত্র সংগ্রাম ও যুদ্ধের পর পাক হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা ভোলার মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধের মুখে ভোলা থেকে পালিয়ে যায়। আর তখনি সমগ্র ভোলার মানুষ আনন্দ উল্লাসে ফেটে পড়েন। স্বাধীনতার ৫১ বছর পর সেই স্মৃতি আজও মনে পড়ে ভোলার সাহসী সৈনিকদের।

জানা গেছে, মুক্তিযোদ্ধা চলাকালীন ভোলা শহরের পানি উন্নয়ন বোর্ড অফিস চত্বর দখল করে পাক-হানাদার বাহিনী ক্যাম্প বসায়। সেখান থেকে এক এক করে চালায় পৈশাচিক কর্মকাণ্ড। মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিকামী নিরীহ মানুষদের ধরে এনে এখানে হত্যা করা হতো।

এছাড়াও ভোলার খেয়াঘাট এলাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের ধরে এনে হত্যা করে তেতুলিয়া নদীতে ফেলে দেয়। মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ মানুষের রক্তে রঞ্জিত হয় তেতুলিয়ার পানি।

পাক-হানাদার বাহিনীরা বহু নারীকে ক্যাম্পে ধরে এনে রাতভর নির্যাতন করে সকাল বেলা লাইনে দাড় করিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে। তৎকালীন অনেক মানুষ মারা যায় ওই হানাদার বাহিনীর হাতে। সেখানে গণকবর দেওয়া হয় নিহতদের। সেটি এখন বধ্যভূমি নামে পরিচিত।

১৯৭১ সালে দেশ রক্ষায় সারাদেশের ন্যায় ভোলাতেও চলে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি। সরকারি স্কুল মাঠ, বাংলা স্কুল, টাউন স্কুল মাঠ ও ভোলা কলেজের মাঠের কিছু অংশে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ শুরু হয়।

মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে পাক হানাদার বাহিনীর সম্মুখযুদ্ধ হয় ভোলার ঘুইংঘারহাট, দৌলতখান, বাংলাবাজার, বোরহানউদ্দিনের দেউলা ও চরফ্যাশন বাজারে। ওই সব যুদ্ধে শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা শাহাদাত বরণ করেন। পাশাপাশি বহু পাক বাহিনীও মারা যায়। অবশেষে ১০ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে টিকে থাকতে না পেরে ক্যাম্প থেকে লঞ্চযোগে পাক বাহিনী পলায়ন করে। তখনও মুক্তিযোদ্ধারা তাদের ওপর গুলি বর্ষণ করে।

ওই দিনই ভোলার আকাশে উড়ানো হয় স্বাধীন দেশের পতাকা। ভোলা পরিণত হয় উৎসবের শহরে। রচিত হয় নতুন ইতিহাস।

ভোলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার শফিকুল ইসলাম জানান, ৯ ডিসেম্বর আমরা মুক্তিযোদ্ধারা ভোলা ওয়াপদা এলাকায় চারদিক থেকে পাক হানাদারদের ঘিরে ফেলি, এক পর্যায়ে তারা যখন দেখলো তাদের মুভ করার মত কোনো অবস্থান নেই তখন ভোর রাতের দিকে গুলি বর্ষণ করতে করতে তারা পালিয়ে যায়। তখন মুক্তিযোদ্ধারা তাদের প্রতিহত করার চেষ্টা করে। লঞ্চযোগে পালিয়ে যাওয়ার সময় চাঁদপুর এলাকায় মিত্রবাহিনীর বিমান হামলায় পাক হানাদারদের লঞ্চটি নিমজ্জিত হয়।

তিনি আরও জানান, ভোলায় পাক হানাদার বাহিনীর আসার পর আমরা মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করি। ভোলা সরকারি স্কুল এলাকা থেকে মুক্তিযোদ্ধারা চরফ্যাশন থানায় আক্রমণ করেন। সেকান থেকে ২৭টি অস্ত্র নিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা বিভিন্ন এলাকায় যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।

যুদ্ধের সময় আমরা মানুষের সহযোগিতা পেয়েছি, তারা আমাদের আন্তরিকভাবে গ্রহণ করেছিলেন। সেটা আমাদের চিরদিন স্মরণ থাকবে। ১০ ডিসেম্বর হানাদারমুক্ত হওয়ার পর ভোলার মানুষ মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে আনন্দ উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়ে।

প্রবীণ সাংবাদিক ও মুক্তিযোদ্ধা আবু তাহের বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় ভোলা ওয়াপদা ভবন দখল করে পাক-হানাদাররা শত শত মুক্তিকামী মানুষ ও মুক্তিযোদ্ধাদের নির্যাতন করে হত্যা করে। সেখানে অনেক নারী নির্যাতন হয়েছে। সে সমস্ত স্মৃতি আমরা আজও ভুলতে পারিনি। মুক্তিযোদ্ধারা তাদের জীবন বাজি রেখে ভোলাকে হানাদার মুক্ত করেন।  

এদিকে, ভোলা মুক্ত দিবস উপলক্ষে সকালে জেলা প্রশাসন ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদের পক্ষ থেকে র‌্যালি ও আলোচনা সভাসহ নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭০৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১০, ২০২৩
এসএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।