ঢাকা, শনিবার, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১, ১১ মে ২০২৪, ০২ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

চাঁদপুরে মাদরাসার অধ্যক্ষের কক্ষে ‘রহস্যজনক’ চুরি

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৪০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩০, ২০২৩
চাঁদপুরে মাদরাসার অধ্যক্ষের কক্ষে ‘রহস্যজনক’ চুরি

চাঁদপুর: চাঁদপুর সদরের হোছাইনপুর আলিম মাদরাসার অধ্যক্ষের কক্ষের জানালার গ্রিল কেটে টেবিলের ড্রয়ার থেকে রহস্যজনকভাবে চুরি হয়েছে ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা।  

এই ঘটনায় থানায় অভিযোগ করা হলেও পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে মাদরাসা পরিচালনা কমিটিকে বিষয়টি সমাধানের পরামর্শ দেন।

তবে চুরির ঘটনায় অধ্যক্ষের দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগ শিক্ষক ও এলাকাবাসীর।

শনিবার (৩০ ডিসেম্বর) দুপুরে সরেজমিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেছে, অধ্যক্ষের কক্ষের দরজা অক্ষত। কিন্তু ওই কক্ষের পেছনের জানালার গ্লাস ভাঙা এবং গ্রিল কাটা। সিসিটিভির মনিটার মাঝখান এবং দেয়াল ঘড়ি ভাঙা। অধ্যক্ষের টেবিলের ড্রয়ারের তালাও কাটা। কোনো ভাঙার চিহ্ন নেই। প্রতিষ্ঠানের লোকজন চুরির সঙ্গে জড়িত সন্দেহে তাৎক্ষণিক ঘটনাটি জানাজানি হয়নি।

প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২৭ ডিসেম্বর দিনগত রাত ১০টা থেকে পরদিন ২৮ ডিসেম্বর দুপুর সাড়ে ১২টার মধ্যে চুরির ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় ২৮ ডিসেম্বর মাদরাসার পিয়ন মো. নাজির আহম্মদ থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। এরপর ২৯ ডিসেম্বর দুপুরে চাঁদপুর সদর মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) লোকমান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। চুরির ঘটনার দৃশ্য দেখে তিনি বিষয়টি মাদরাসা কমিটির সঙ্গে বসে সমাধান করার পরামর্শ দেন। চুরি হওয়া কক্ষের দরজার চাবি ৩টি। একটি অধ্যক্ষের কাছে থাকে, একটি পিয়ন নাজির এবং অপর চাবিটি থাকে কম্পিউটার অপারেটর বশির উদ্দিনের কাছে।

স্থানীয় ইউপি সদস্য বিল্লাল হোসেন মাল জানান, চুরির ঘটনা জানতে পেরে আমরা অধ্যক্ষের কক্ষ এসে দেখেছি। সাধারণভাবে বুঝতে পেরেছি ঘটনাটি কক্ষের ভেতর থেকে ঘটিয়ে চুরির নাটক সাজিয়েছে। কারণ, ভাঙা গ্লাস বেইরে গিয়ে পড়েছে। পুলিশি তদন্ত চলার সময় আমিও উপস্থিত ছিলাম। উপস্থিত সকলের মনে হয়েছে চোর প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ কেউ। যে কারণে অধ্যক্ষকে বসে এটির সমাধান করার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়। ঘটনার চারদিন হলেও এখন পর্যন্ত সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ পরীক্ষা করা হয়নি।

স্থানীয় ব্যবসায়ী সুমন জানান, ঘটনার রাত আনুমানিক ৯টার পরে গ্লাস ভাঙার আওয়াজ শুনতে পাই। তবে কাউকে দেখা যায়নি। কারণ ওই সময় মাদরাসার সামনের খোলা জায়গায় স্থানীয় যুবকরা ব্যাডমিন্টন খেলছিল। তাদের কথাবার্তার শব্দ এবং আমার দোকানে রেকর্ডিং ওয়াজ চলছিল। যে কারণে গ্লাস ভাঙার শব্দ কাছের কেউ শুনতে পায়নি।

খেলতে আসা যুবক রাকিব প্রধানীয়া বলেন, আমরা ৯টার পরে ১০-১২ জন খেলতে আসি। রাত সাড়ে ১০টায় চলে যাই। ওই সময় মাদরাসার ভেতরে ওই কক্ষে কম্পিউটার অপারেটর বশির উদ্দিনকে দেখেছি।

মাদরাসার পিয়ন নাজির আহম্মদ বলেন, অধ্যক্ষ আগে পরে ১০ হাজার টাকা থাকলেও আমার কাছে রেখে যান। কিন্তু মাদরাসা বন্ধের দিন অর্থাৎ ১৮ ডিসেম্বর টাকার বিষয়ে তিনি কিছু জানাননি। চুরি হওয়ার পর তিনি বলছেন, ড্রয়ারে ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা রেখে গেছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক শিক্ষক জানান, গত সেপ্টেম্বর মাসে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে সেকেন্ডারি এডুকেশন ডেভেলপমেন্ট (এসইডিপি) প্রকল্পের ৫ লাখ টাকা অনুদান আসে মাদরাসার নামে। এই টাকা নির্দিষ্ট খাতে ব্যয় করার প্রয়োজনীয় নির্দেশনা রয়েছে। এর মধ্যে শিক্ষকদের জন্য বরাদ্দ ১ লাখ এবং অসহায় মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য ৭৫ হাজার টাকা। চুরির ঘটনার পর অধ্যক্ষ বলছেন এই টাকাই চুরি হয়েছে। বিষয়টি খুবই রহস্যজনক। তার কাছে শিক্ষকরা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার আগে টাকা খাতওয়ারি ব্যয় করার কথা বললেও তিনি নানান কথা বলেন।

অধ্যক্ষ মো. নিজাম উদ্দিন বলেন, মাদরাসা ১৮ ডিসেম্বর বন্ধের ব্যাংক থেকে ২ লাখ ২৫ হাজার টাকা উত্তোলন করেছিলাম। সেখান থেকে ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। বাকি ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা টেবিলের ড্রয়ারে রেখে যাই। টাকা রাখার বিষয়টি কাউকে জানাইনি।  

মাদরাসার নানা সমস্যার কারণে টাকাগুলো বণ্টন করেননি এবং প্রতিষ্ঠান খোলা হলে বিতরণ করতেন বলে জানান অধ্যক্ষ।

তিনি আরও বলেন, ঘটনার রাত ৮টার পর সিসিটিভি ক্যামেরা বন্ধ হয়ে যায়। তবে ওই সময় মাদরাসায় বিদ্যুৎ ছিল। এটি যদি কোনো ধরনের পরিকল্পিত হয়, তাহলে তদন্তে বেরিয়ে আসবে। ওই কক্ষের চাবি যেহেতু তিনজনের কাছে তাহলে তিনজনই জবাবদিহিতার মধ্যে আছেন।

চাঁদপুর সদর মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) লোকমান জানান, আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে যে পরিস্থিতি দেখেছি, তাতে মনে হয়েছে এটি প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সমাধান করতে হবে। যে কারণে অধ্যক্ষকে বলেছি তিনি যেন কমিটির লোকদেরকে নিয়ে বিষয়টি যেন সমাধান করেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩০, ২০২৩
এসএএইচ
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।