ফরিদপুর: ফরিদপুর-৩ (সদর) আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য প্রার্থী এ কে আজাদ তার প্রতিদ্বন্দ্বী নৌকার প্রার্থী শামীম হক ও তার সমর্থকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে বলেন, ‘আমার নেতাকর্মী ও সমর্থকদের হামলা-মামলা ও ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। আতঙ্ক সৃষ্টি করা হচ্ছে।
শনিবার (০৬ জানুয়ারি) দুপুর ১২টার দিকে এ কে আজাদের ফরিদপুর শহরের ঝিলটুলী মহল্লার বাসভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন এ কে আজাদ।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান এ কে আজাদ।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন- আমি আব্দুল কাদের আজাদ (এ কে আজাদ)। বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার একজন সৈনিক। শেখ হাসিনার চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের অগ্রগতির জন্য যা করা দরকার তা করে যাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট সরকার, স্মার্ট অর্থনীতি ও স্মার্ট সমাজ গঠন করতে আমরা প্রস্তুত। সেজন্য বড় লক্ষ্য নিয়েই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ফদিরপুর-৩ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আমি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছি।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, তবে খুব দুঃখের সঙ্গে জানাতে হয়, বাংলাদেশকে বেকারত্ব ও ক্ষুধামুক্ত করার এই মিশনে ঈগলের পক্ষে জনসমর্থন দেখে, তা নস্যাৎ করার চেষ্টা করছে জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি শামীম হক ও তার সমর্থকরা। যিনি নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করছেন। সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনে বারবার নানা কায়দায় বাধার সৃষ্টি করছেন। এতে সরকারের সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে। গত ১৮ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে ঈগল সমর্থক নেতাকর্মীদের ওপর হামলা, মামলা, ভয়ভীতি অব্যাহত রয়েছে। ক্যাম্প পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনাও ঘটাচ্ছে। এসব ঘটনায় ৫টি মামলা এবং ১৪টি জিডি করার পরও দু/একটি ছাড়া তেমন কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি।
এ কে আজাদ বলেন, সর্বশেষ গতরাতেও আমার নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করেছে নৌকা সমর্থকরা। শুক্রবার (০৫ জানুয়ারি) রাতে ফরিদপুর সদরের আলিয়াবাদ ইউনিয়নে পলি মেম্বারের বাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটেছে। ৬ জনকে কুপিয়ে আহত করা হয়েছে। মাচ্চরে হামলার ঘটনা ঘটেছে। সেখানে তিনজনকে আহত করা হয়েছে। অম্বিকাপুরে আবু সাইদ চেয়ারম্যানের বাড়ির কাছ থেকে ঈগলের সমর্থক তোতা চৌধূরী ও রইস মণ্ডলকে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি পুলিশ।
তিনি দাবি করেন, আমার সমর্থক শহর যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও গাজী সোহাগকে হুমকি দেওয়া হয়েছে। ভোটের মাঠে ভীতি সঞ্চার করতে ও সুষ্ঠু পরিবেশ বাধাগ্রস্ত করতে হামলা-হুমকি-ভয় অব্যাহত রয়েছে। যদিও সরকার বারবার একটি সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের কথা বারবার বলে আসছে। এছাড়া আমার সমর্থক ও নেতাকর্মীদের নামে সাজানো ও মিথ্যা মামলা দেওয়া অব্যাহত রয়েছে।
তিনি অভিযোগ করেন, পারিবারিক ঘটনাকে কেন্দ্র করে কানাইপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান বেলায়েত ফকিরকে হুকুমের আসামি করা হয়েছে। বিনা ওয়ারেন্টে আমার অনেক নেতাকর্মীকে এখনও গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। মামলা নিয়েও প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে অনেকেই। প্রশাসনের কাছে অনুরোধ করবো সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ বজায় রাখতে সব ধরনের উদ্যোগ নেন। মানুষ যাতে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারে। নির্বাচনের পরিবেশকে অস্থিতিশীল করতে আমার নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। তারা যাতে বাসায় না থাকেন এই ভয়ও দেখানো হয়। শামীম হকের বাহিনী এই হুমকি দিচ্ছে।
তিনি আরও অভিযোগ করে বলেন, একইসঙ্গে ঈগলের সমর্থক নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারও অব্যাহত রয়েছে। গতরাতেও পুলিশ ঈগল সমর্থক একাধিক নেতাকর্মীর বাসায় হানা দিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়েছে। এতে করে প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এমনকি গতরাতে ৩ জন ঈগল সমর্থককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এ ছাড়া, ফরিদপুর জেলার আলিয়াবাদ ইউনিয়নে স্থানীয় ইউপি মেম্বারসহ ৬ জন সমর্থককে পিটিয়ে জখম করেছে নৌকা সমর্থকের সন্ত্রাসীরা। যার একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
ঈগল প্রতীকের এ স্বতন্ত্র প্রার্থী সংবাদ সম্মেলন করার সময়ে তাৎক্ষণিক ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, আমি যখন আপনাদের সঙ্গে সংবাদ সম্মেলন করছি, ঠিক এই সময়টাতেই অনেক নেতাকর্মীকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। নির্বাচনের বাকি আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা। এর মধ্যে কোথাও কোথাও নিজেরা নিজেদের ক্যাম্পে আগুন দিয়ে আমার নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি অব্যাহত রেখেছে। যাতে করে নির্বাচন ঘিরে এক ধরনের আতঙ্ক বিরাজ করছে। যেখানে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষ্যে ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়াটা আমার লক্ষ্য, সেখানে আমার প্রতিপক্ষ শামীম হক শেষ মুহূর্তে এসে ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে যেতে বাধা সৃষ্টি করছেন। এমন পরিস্থিতিতে গণমাধ্যম, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সাধারণ মানুষ এবং সরকারই পারে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন পরিবেশ তৈরি করতে। তাই সাংবাদিকদের সহযোগিতা কামনা করছি।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি সুবল চন্দ্র সাহা, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নির্বাহী সদস্য বিপুল ঘোষ, জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শামসুল হক ভোলা মাস্টার, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি ফারুক হোসেন, জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দা নুসরাত রাসুল তানিয়াসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ফরিদপুর জেলা রিটার্নিং অফিসার (ডিসি) মো. কামরুল আহসান তালুকদার বাংলানিউজকে বলেন, নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে আমরা সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছি। প্রশাসন কোনো পক্ষপাতিত্ব করছে না। আমরা নিরপেক্ষ দায়িত্ব পালন করছি। দু'টি পক্ষ থেকেই অসংখ্য অভিযোগ পাচ্ছি। অভিযোগ পাওয়া মাত্রই তদন্ত করে এসপি সাহেবকে ব্যবস্থা নিতে বলা হচ্ছে।
এসময় তিনি সাংবাদিকদের পক্ষপাতিত্বহীনভাবে সংবাদ পরিবেশনের অনুরোধ জানান।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৬, ২০২৪
আরএ