ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আজ

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০০২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১০, ২০২৪
বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আজ

ঢাকা: বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস ১০ জানুয়ারি। ১৯৭২ সালের এই দিনে পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে বঙ্গবন্ধু স্বদেশের মাটিতে ফিরে আসেন।

মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে দীর্ঘ ৯ মাস পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি ছিলেন বাঙালির স্বাধীনতার মহানায়ক। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের বিজয় অর্জনের পর বন্দি বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয় পাকিস্তান। সেখান থেকে লন্ডন ও দিল্লি হয়ে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে প্রত্যাবর্তন করেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি শেখ মুজিবুর রহমান।

স্বদেশে ফিরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে উত্তাল জনসমুদ্রের সামনে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধু সদ্য স্বাধীন দেশের জনসাধারণের উদ্দেশে বলেন, ‘যে মাটিকে আমি এত ভালোবাসি, যে মানুষকে আমি এত ভালোবাসি, যে জাতিকে আমি এত ভালোবাসি, আমি জানতাম না সে বাংলায় আমি যেতে পারব কি না। আজ আমি বাংলায় ফিরে এসেছি বাংলার ভাইয়েদের কাছে, মায়েদের কাছে, বোনদের কাছে। বাংলা আমার স্বাধীন, বাংলাদেশ আজ স্বাধীন। ’

১৯৭১ সালে ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণার পর পাকিস্তানের হানাদার বাহিনী বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিবকে বার বার হত্যার চেষ্টাও চালানো হয়। মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীর পরাজয় এবং আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের বিজয় অর্জিত হলেও বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দিতে কালক্ষেপণ করা হয়। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর জনপ্রিয়তা এবং বিশ্বজনমতের চাপের কাছে পাকিস্তান বঙ্গবন্ধুকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি সকালে পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তিলাভের পর একটি পাকিস্তানি সামরিক বিমানে করে গোপনে তাকে লন্ডনে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ফেরার পথেই বঙ্গবন্ধু বিশ্বনেতাদের কাছ থেকে ব্যাপক সম্মানে ভূষিত হন।

লন্ডনে ব্রিটিশ সরকার বঙ্গবন্ধুকে অভূতপূর্ব সম্মান দেখায়। বঙ্গবন্ধুর প্লেনটি হিথ্রো বিমানবন্দরে অবতরণ করার পর তিনি প্লেন থেকে নেমে ভিআইপি লাউঞ্জে এলে তাকে ব্রিটিশ বৈদেশিক দপ্তরের কর্মকর্তারা স্বাগত জানান। কিছুক্ষণের মধ্যে সেখানে ব্রিটিশ ফরেন অফিসের দক্ষিণ এশিয়া বিভাগের প্রধান কর্মকর্তা স্যার ইয়ার মাদারল্যান্ড উপস্থিত হয়ে জানান ব্রিটিশ সরকার বঙ্গবন্ধুকে রাষ্ট্রীয় অতিথির মর্যাদা দিয়েছে। বঙ্গবন্ধুকে ব্রিটিশ সরকারের সম্মানিত অতিথি হিসেবে লন্ডনের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত হোটেল ক্যারিজেসে নিয়ে যাওয়া হয়।

অল্প সময়ের মধ্যে ব্রিটিশ লেবার পার্টির নেতা (পরে প্রধানমন্ত্রী) হ্যারল্ড উইলসন বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে যান হোটেলে। বঙ্গবন্ধু যখন লন্ডনে পৌঁছান ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হিথ ছিলেন লন্ডনের বাইরে। বঙ্গবন্ধুর পৌঁছানোর কথা শুনে পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি বাতিল করে প্রধানমন্ত্রী হিথ ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটে ছুটে আসেন। ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটে বঙ্গবন্ধুকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হিথ।

সৌজন্য সাক্ষাৎ শেষে বিদায়ের মুহূর্তে প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হিথ প্রথাগত প্রটোকল ভেঙে নিজ হাতে গাড়ির দরজা খুলে বঙ্গবন্ধুকে গাড়িতে তুলে দিয়ে নজিরবিহীন সম্মান দেখান।

এরপর লন্ডন থেকে বঙ্গবন্ধু আসেন দিল্লিতে। সেখানে পালাম বিমানবন্দরে বঙ্গবন্ধু নামার পর তাকে ভারতের রাষ্ট্রপতি ভি ভি গিরি এবং প্রধানমন্ত্রী ইন্দ্রিরা গান্ধী স্বাগত জানান। দিল্লি থেকে বঙ্গবন্ধু ঢাকায় আসেন।

রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে বাঙালি জয়লাভ করলেও যার নেতৃত্বে যুদ্ধ হয়, সেই নেতার জন্য জাতি অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে থাকে। ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুকে দেখার জন্য ঢাকায় জনতার ঢল নামে। বঙ্গবন্ধুকে স্বাগত জানাতে তেজগাঁও বিমানবন্দর থেকে শুরু করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান (তৎকালীন রেসকোর্স ময়দান) ছিল জনসমুদ্র। বিমান থেকে নেমে বাংলার মাটিতে পা দিয়েই বঙ্গবন্ধু আবেগে কেঁদেছিলেন। আবেগাপ্লুত ও কান্নাজড়িত কণ্ঠেই তিনি রেসকোর্স ময়দানে লাখো জনতার সামনে ভাষণ দেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, “আমি আজ বাংলার মানুষকে দেখলাম, বাংলার মাটিকে দেখলাম, বাংলার আকাশকে দেখলাম, বাংলার আবহাওয়াকে অনুভব করলাম। বাংলাকে আমি সালাম জানাই। আমার সোনার বাংলা, তোমায় আমি বড় ভালোবাসি। বোধহয় তার জন্যই আমায় ডেকে নিয়ে এসেছে। আমি আমরা হার মানবো না, আমরা হার মানতে জানি না। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন—‘সাত কোটি বাঙালিরে হে মুগ্ধ জননী রেখেছো বাঙালি করে মানুষ করোনি’। কবিগুরু আজ মিথ্যা প্রমাণ হয়ে গিয়েছে। আমার বাঙালি আজ মানুষ। আমার বাঙালি আজ দেখিয়ে দিয়েছে দুনিয়ার ইতিহাসে এত লোক আত্মাহুতি, এত লোক জান দেয় নাই। তাই আমি বলি আমায় দাবায় রাখতে পারবা না। ”

বাংলাদেশ সময়: ০০০১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১০, ২০২৪
এসকে/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।