ময়মনসিংহ: ময়মনসিংহে প্রায় ২০০ মণ দুম্বার মাংস সরকারি কর্মচারী, ক্ষমতাসীন দলের নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে ভাগাভাগি হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। দরিদ্র ও দুস্থদের জন্য সৌদি আরব সরকার থেকে পাঠানো এসব দুম্বার মাংস বিতরণে এমন অনিয়মের খবরে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে সচেতন মহলে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা অফিস সূত্র জানায়, কয়েকদিন আগে সন্ধ্যায় ৪০০ কার্টন দুম্বার মাংস এ জেলার ১৩টি উপজেলার জন্য বরাদ্দ আসে মন্ত্রণালয় থেকে। পরে ওই দিনই তা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী উপজেলাগুলোতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তারা তা বণ্টন করেছেন। প্রতিটি কার্টনে ২০ থেকে ২৫ কেজি করে মাংস থাকার কথা।
সূত্র মতে, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এসব দুম্বার মাংস দরিদ্র, দুস্থদের মধ্যে এবং এতিমখানা ও মাদরাসায় বিতরণের নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু এ নির্দেশনা উপেক্ষা করেছেন উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টরা। এমন অভিযোগ একাধিক এতিমখানা কর্তৃপক্ষের।
জেলার সদর উপজেলার খাগডহর দারুল কোরআন এতিমখানা ও মাদরাসার পরিচালক মোহাম্মদ মাহাবুবুল আলম বলেন, আমরা দুম্বার মাংস পাইনি। কবে কখন কারা তা বণ্টন করেছে, তা আমিসহ অনেকেই জানে না।
ময়মনসিংহ নগরের দিঘারকান্দা আল মানার এতিমখানা ও মাদরাসার পরিচালক মুহাম্মদ সাইয়েদুর রশিদ বলেন, দুই বছর ধরে আমি এ প্রতিষ্ঠানে ভারপ্রাপ্ত সুপার পদে দায়িত্ব পালন করছি। কিন্তু আমার প্রতিষ্ঠানের এতিমরা এবার এবং গত বছরও দুম্বার মাংস পায়নি।
একই অবস্থা সদর ও ত্রিশাল উপজেলাসহ জেলার ১৩টি উপজেলাতেই।
আর এ কারণেই দুম্বার মাংস দরিদ্র ও দুস্থদের মধ্যে বিতরণ না করার প্রতিবাদ জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন গৌরীপুর পৌরসভার মেয়র সৈয়দ মো. রফিকুল ইসলাম।
তিনি তার ব্যক্তিগত আইডিতে পোস্ট করে বলেন, উপজেলা পরিষদে গরিব দুস্থদের জন্য আসা দুম্বার মাংস মুহূর্তেই হাওয়া। পৌরসভাসহ উপজেলার সব ইউনিয়নের জন্য বরাদ্দকৃত গরিবদের এ সামান্য বিষয়টিও দুর্নীতির বাইরে নয়। দুম্বার মাংস সুষ্ঠুভাবে বিতরণ না করে নেতাদের দিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে অনেকেই অভিযোগ করছেন। গরিবের হক নষ্ট করার তীব্র প্রতিবাদ জানাই।
জেলার ফুলবাড়ীয়া উপজেলার শাহ আলামিয়া আল-আমিন মোহাইমিনুল ইসলামিয়া এতিমখানার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও বিশিষ্ট সাংবাদিক মো. শামসুল আলম খান বলেন, এ এলাকার বর্তমান সংসদ সদস্য আব্দুল মালেক সরকার উপজেলা চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায় গত বছর উপজেলার ২১টি এতিমখানা দুম্বার মাংস পেয়েছিল। কিন্তু এবার তিনি সংসদ সদস্য হওয়ার পর কেউ দুম্বার মাংস পায়নি।
ইউএনওকে (উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা) ফোন করলে তিনি বলেন, আমি জানি না, বলেই তিনি দ্রুত ফোন রেখে দেন। পরে পিআইওকে ফোন করলে তিনি বলেন, ইউএনও স্যার এবং সংসদ সদস্য বণ্টন করেছেন, আমি জানি না। শুনেছি এবার ৩২ কার্টন মাংস এসেছিল।
তবে এ ঘটনার বিষয়ে জানতে একাধিকবার ফোন করেও ফুলবাড়ীয়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং পিআইও’র বক্তব্য জানা যায়নি।
এ বিষয়ে জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মোহাম্মদ ছানুয়ার হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী উপজেলাগুলোতে দুম্বার মাংস পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে কে, কোথায় কীভাবে তা বণ্টন করেছে, আমার জানা নেই। আপনি (প্রতিবেদক) উপজেলাগুলোতে খোঁজ নেন।
কিন্তু বারবার ফোন করলেও দুম্বার মাংস বণ্টন করা হয়েছে জানান জেলার একাধিক পিআইও। কিন্তু তারা বণ্টনের তালিকা দিতে পারবেন না বলেও বাংলানিউজকে জানিয়েছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৩, ২০২৪
এসআই