ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

শিক্ষিকাকে ইভটিজিং করায় ছাত্রকে শাসন, বেত্রাঘাতের ভিডিও ভাইরাল

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৩, ২০২৪
শিক্ষিকাকে ইভটিজিং করায় ছাত্রকে শাসন, বেত্রাঘাতের ভিডিও ভাইরাল

ফেনী: প্রাথমিক স্কুলের এক শিক্ষককে ‘ইভটিজিং’ করায় অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রকে শাসন করেছেন শিক্ষকরা। তাকে বেত্রাঘাত করা হয়, সেই ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।

মঙ্গলবার (২৩ জানুয়ারি) দুপুরে ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলার চাঁদগাজী হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজের অফিস কক্ষে ঘটনাটি ঘটে। শিক্ষককে উত্ত্যক্তকারী ছাত্র এ স্কুলের ছাত্র।

ভিডিওয় দেখা যায়, চাঁদগাজী হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও ছাগলনাইয়া উপজেলা চেয়ারম্যান মেজবাউল হায়দার চৌধুরী সোহেল ওই ছাত্রকে প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক ও অন্যান্য ছাত্রীদের সঙ্গে অশোভন আচরণের কারণ জিজ্ঞেস করেন। পরে তিনি ছাত্রের দুই হাতে বেত্রাঘাত করেন।

এ সময় তিনি বলেন, তোমাদের জন্য মেয়েরা স্কুলে আসতে পারে না। তুমি এ সাহস পাও কোথায়? শিক্ষিকা তোমার মায়ের মতো। তুমি যে কাজ করেছ ভবিষ্যতে আর এই কাজ করবে না বলে প্রতিশ্রুতি দাও। সামনে কান ধরো। কান ধরে বলো- আমি আর জীবনে ইভটিজিং করবো না, চারদিকে ঘুরে ঘুরে বলো আমি আর জীবনে ইভটিজিং করবো না। জীবনে এই কাজ আর করব না। তোমার সাথে আর কে কে আছে এদের নাম বলো।

তখন ওই ছাত্র আরও দুজনের নাম জানায়। নাম শোনার পর সোহেল চেয়ারম্যান তাকে প্রতিজ্ঞা করান- ইভটিজিং করা পাপ, খারাপ কর্ম, আমি জীবনে এ কাজ করব না। মেয়েরা সবাই আমার বোন। এদেরকে পড়ালেখার সুযোগ করে দেব। আর কখনো ইভটিজিং করবো না। আমি ভালো হয়ে যাব।

অন্যান্য শিক্ষকরা তখন ওই ছাত্রকে চেয়ারম্যানের পা ছুঁয়ে মাফ চাইতে বলেন। ছাত্রটি সেটি মেনে নিয়ে সোহেলের পা ধরতে যায়। কিন্তু তিনি সেটি করতে না দিয়ে ছাত্রকে তার মোবাইল ফোন ফেরত দেন।

ভিডিওয় কয়েকজনকে মোবাইলের মাধ্যমে শাসনের ঘটনাটি ভিডিও করতে দেখা যায়। পরে তারাই ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে ভাইরাল করে দেন। ভিডিও দেখে অনেকেই মন্তব্য করেন। কেউ বলেন, চেয়ারম্যান সঠিক শাসন করেছেন। আবার কেউ ভিডিও ভাইরাল করার বিরোধিতা করেন। ওই ছাত্রের ভবিষ্যতে এ ভিডিও নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলেও মন্তব্য করেন কেউ কেউ।

একজন লেখেন- শাসন করার নামে একজন কিশোরকে শোধরানোর সুযোগ না দিয়ে ভিডিও করে সেটি ভাইরাল করে দেওয়া অপরাধ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চাঁদগাজী হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও ছাগলনাইয়া উপজেলা চেয়ারম্যান এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মেজবাউল হায়দার চৌধুরী সোহেল বলেন, ইভটিজিংয়ের ঘটনায় ভুক্তভোগী শিক্ষক আমাকে বিচার দিলে আমি প্রাথমিকভাবে ওই ছাত্রকে ডাকিয়ে আমি শাসন করে দিয়েছি। বড় কোনো ঘটনা না হওয়ায় আইনি ব্যবস্থা নিইনি। এটি করলে আবার ছেলেটির ভবিষ্যৎ খারাপ হতো। তাই তাকে সতর্ক করার জন্য বেত দিয়ে কয়েকটি বাড়ি দিয়েছি। এর মাধ্যমে ও সতর্ক হবে, ইভটিজিংয়ের পথ থেকে ফিরে আসবে। ভিডিও ভাইরালের বিষয়টি তিনি জানেন না বলেও জানান।

ছাগলনাইয়া চাঁদগাজী স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ তাহেরা বেগম বলেন, এক শিক্ষককে গত শুক্রবার ইভটিজিং করায় আমাদের এক ছাত্রকে স্থানীয় উপজেলা চেয়ারম্যান শাসন করে বেত দিয়ে কয়েকটি বাড়ি দিয়েছেন। ভিডিও ভাইরালের বিষয়টি আমি জানি না।

ফেনীর পুলিশ সুপার জাকির হাসান বলেন, যে কেউ ইচ্ছে করলেই আইন নিজের হাতে তুলে নিতে পারে না। যদি কেউ অন্যায় করে তাকে প্রশাসনের মাধ্যমে বিচারের আওতায় আনতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ২১০৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৩, ২০২৪
এসএইচডি/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।