ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

রিকশাচালক স্বামীর সহযোগিতায় মাস্টার্স পাস করা সীমানুর পেলেন চাকরি

কাওছার উল্লাহ আরিফ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৩৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৪, ২০২৪
রিকশাচালক স্বামীর সহযোগিতায় মাস্টার্স পাস করা সীমানুর পেলেন চাকরি স্বামী ফেরদৌস মণ্ডলের রিকশায় যাতায়াত করেই এমএ পাস করেন সীমানুর

বগুড়া: বগুড়ায় রিকশা চালান ফেরদৌস মণ্ডল। অর্থাভাবে নিজের পড়ালেখা বেশিদূর নিয়ে যেতে না পারলেও রিকশা চালিয়ে স্ত্রী সীমানুর খাতুনকে করেছেন উচ্চশিক্ষিত।

 

বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ থেকে দ্বিতীয় বিভাগে মাস্টার্স পাস করেছেন সীমানুর।

আর সেই রিকশাচালকের মাস্টার্স পাস স্ত্রী সীমানুর খাতুন এখন বগুড়া জেলার অন্যতম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কালেক্টরেট স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রাথমিক শাখার সহকারী শিক্ষক। আগামী ১ ফেব্রুয়ারির থেকে স্কুলে পাঠদান শুরু করবেন সীমানুর।

গত ১৫ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় সীমানুরের হাতে চাকরির নিয়োগপত্র তুলে দেন বগুড়ার জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলাম। নিয়োগপত্র পেয়ে স্কুলে গিয়ে যোগদান করেন সীমানুর।

চাকরির সঙ্গে মিলেছে সীমানুরের স্বামীর রিকশা কেনার ঋণ পরিশোধের ২৫ হাজার টাকা ও বাড়ি সংস্কারের টিন।  

এছাড়া আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে রিকশাচালকের উচ্চশিক্ষিত স্ত্রী যেন শক্তিশালী আর্থিক ভিত্তিতে পৌঁছাতে পারে সে জন্য একটি ল্যাপটপও উপহার দেওয়া হয়েছে।  

সীমানুরের হাতে চাকরির নিয়োগপত্র তুলে দিচ্ছেন বগুড়ার জেলা প্রশাসক

স্ত্রীকে উচ্চশিক্ষিত করতে রিকশা চালানো ফেরদৌসের সংগ্রাম গল্প-উপন্যাসকে যেন হার মানিয়েছেন।

বগুড়ার গাবতলী উপজেলার নশিপুর ঠিকাদারপাড়া এলাকার ফেরদৌস মন্ডল টাকার অভাবে ফরম ফিলাপ করতে না পেরে এসএসসি পরীক্ষা দেওয়া হয়নি। নিজে পড়াশুনা না করতে পারলেও রিকশা চালিয়ে সংসারে খরচ মিটিয়ে স্ত্রীকে উচ্চশিক্ষিত করেছেন। স্বামীর রিকশায় যাতায়াত করে এমএ পাস করেছেন তিনি।  

শত বাধা বিপত্তি ও কষ্ট উপক্ষো করে তীব্র শীত বা দাবদাহের মাঝে রিকশার প্যাডেল ঠেলতে পা ও হাত অসাড় হয়ে এলেও কখনো দমেনি ফেরদৌস। দিনরাত শ্রম দিয়ে অর্থ উপার্জন করে স্ত্রীকে পড়ালেখার খরচ বহন করেছেন।

সন্তানসহ সীমানুর খাতুন

শত প্রতিকূলতাকে উপেক্ষা করে রিকশা চালানোর ফাঁকেই স্ত্রীর জন্য চাকরি খুঁজেছেন তিনি। এ বিষয়ে গণমাধ্যমে  প্রতিবেদন প্রকাশ হলে তা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নজরে আসে।  

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় ভাগ্য বদলে যায় প্রত্যন্ত গ্রামের দরিদ্র পরিবারটির। রিকশাচালক ফেরদৌসের স্ত্রী এখন বগুড়ার অন্যতম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের একজন সহকারী শিক্ষক।

এদিকে চাকরি পাওয়ার পর নারী শিক্ষার প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি বদলে গেছে ফেরদৌস মণ্ডলের পরিবার এবং প্রতিবেশীদের। তারাও চাচ্ছেন মেয়ে হোক বা গৃহবধূ; সবাইকে শিক্ষিত করতে। সম্প্রতি ফেরদৌসের পরিবার এবং তার প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বলে এমনটাই জানা গেছে।

সীমানুর খাতুন জানান, তার স্বামী একদিকে রিকশা চালিয়ে সংসার খরচ চালিয়েছেন আবার তার পড়াশুনার খরচও যুগিয়েছেন। মাঝেমধ্যেই কলেজে যাওয়ার ভাড়া না থাকলে স্বামী ফেরদৌস তাকে রিকশায় করে নিয়ে যেতেন আবার ক্লাস শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করে সঙ্গে করে নিয়ে আসতেন। তার স্বামী তার জন্য যা করেছেন এমন ঘটনা বিরল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে চাকরি দিয়েছেন তাতে তিনি আনন্দিত, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য প্রাণভরে দোয়া করছেন তিনি।

রিকশাচালক ফেরদৌস মণ্ডল জানান, টাকার অভাবে তিনি পড়াশুনা করতে পারেননি। তাই স্ত্রীকে শিক্ষিত করতে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন। রিকশা চালিয়ে সংসারের খরচ জুগিয়ে স্ত্রীকে উচ্চশিক্ষিত করেছেন। এমএ পাস স্ত্রীর চাকরির জন্য তিনি বিভিন্ন জনের দ্বারস্থ হয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার মতো প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন এটা তার জীবনের সবচেয়ে আনন্দের।

ফেরদৌসের বড় ভাই লতিফ মণ্ডল বলেন, প্রধানমন্ত্রী আমাদের শিখিয়ে দিলেন, লেখাপড়া করলে চাকরি পাওয়া যায়। এটা তো আমরা জানতে পারলাম। এখন আমরা সাবধান হয়ে যাব। যেভাবেই হোক পরিশ্রম করে ছেলে-মেয়েকে, স্ত্রীকে লেখাপড়া শিখিয়ে শিক্ষিত করে তুলব। যাতে করে তারা নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে পারে।

বগুড়া কালেক্টরেট পাবলিক স্কুল ও কলেজের প্রধান শিক্ষক মো. আল মামুন সরদার বলেন, গত ১৫ জানুয়ারি সীমানুর খাতুনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। তবে তিনি একটি এনজিওতে ছোট বাচ্চাদের পড়ান। সেখানকার কাজ বুঝে দিয়ে ফেব্রুয়ারির ১ তারিখ থেকে স্কুলে পাঠদান শুরু করবেন। সীমানুর খাতুন একজন সংগ্রামী নারী। তার স্বামীর রিকশা চালানোর অর্থ দিয়ে তিনি এমএ পাস করেছেন। এমন একজন নারীকে আমাদের এখানে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পেরে আমরাও বেশ আনন্দিত। তার মতো আরও যারা সংগ্রামী নারী রয়েছে তাদের কাছে এটি একটি দৃষ্টান্ত হবে।

বগুড়া জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলাম জানান, এই দম্পতির বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ায় তা প্রধানমন্ত্রীর নজরে আসে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই দম্পতিকে অনুপ্রেরণা দিয়েছেন, তাদের পাশে থাকার জন্য আমাদের নির্দেশনা দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় এই পরিবারসহ এমন আরও যারা সামনে এগিয়ে যেতে চায় তাদের পাশে প্রশাসন সবসময় রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭১৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৪, ২০২৪
কেইউএ/এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।