বরিশাল: ভুয়া কার্যাদেশের কাগজপত্র দেখিয়ে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের উজিরপুর অংশের বিভিন্ন প্রজাতির বেশ কিছু মূল্যবান গাছ গেটে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে একটি চক্রের বিরুদ্ধে। যদিও বিষয়টি টের পেয়ে স্থানীয় সড়ক বিভাগের কর্মকর্তারা সেখানে অভিযান চালিয়ে কেটে ফেলা গাছগুলো জব্দ করেন।
চক্রটির গাছ কেটে নেওয়ার এ কাণ্ড গত মঙ্গলবার (২৩ জানুয়ারি) থামিয়েছেন বরিশালের সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) সড়ক শাখার কর্মকর্তারা। সওজের উপ-সহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) অরুণ কুমার বিশ্বাস জানান, উজিরপুর উপজেলার বামরাইল থেকে জয়শ্রী পর্যন্ত এলাকায় বর্তমানে গাছ কাটার কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আমরা মহাসড়কের পাশের গাছ কাটার অনুমতি দিতে পারি না। এটা সড়ক ও জনপথের আরেকটি বিভাগ দিয়ে থাকে। ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক প্রশস্তকরণের কাজ চললেও বেশিরভাগ গাছ সেই সীমানার বাইরে রয়েছে। কিন্তু সম্প্রতি কিছু ভুয়া কাগজ দেখিয়ে উজিরপুর উপজেলায় ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের পাশের বেশ কিছু গাছ কেটে নেওয়ার কার্যক্রম শুরু করে অসাধু চক্র। খবর পেয়ে আমরা সেখানে গেলে তারা কিছু কাগজপত্র দেখায়, যা পরবর্তীতে যাচাই-বাছাই করে ভুয়া প্রমাণিত হয়। এরপর আমরা গত মঙ্গলবার (২৩ জানুয়ারি) সেখানে গিয়ে মহাসড়কের পাশের গাছ কাটায় বাধা দিই।
তিনি বলেন, আমাদের উপস্থিতি টের পেয়ে গাছ কাটার সঙ্গে যারা জড়িত ছিল তারা পালিয়ে যায়। পরে আমরা ওই দিন কাটা গাছগুলো ঘটনাস্থলে রেখে পাহারা দেওয়ার ব্যবস্থা করি এবং পরের দিন বুধবার (২৪ জানুয়ারি) জব্দ করে নিয়ে আসি। আর ওই এলাকায় নজরদারি রাখা হয়েছে, বর্তমানে কোনো গাছ কাটার খবর আমাদের জানা নেই। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে, তারা এ বিষয়ে নিয়মানুযায়ী ব্যবস্থা নেবেন।
জানা গেছে, বেশ কিছু গাছ কেটে নেওয়ার পর স্থানীয়রা বিষয়টি বরিশাল সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) নির্বাহী প্রকৌশলীকে অবহিত করেন। তিনি সওজের ঢাকার প্রধান কার্যালয়ে বৃক্ষপালনবিদের নির্বাহী প্রকৌশলী সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে পারেন, গাছের কোনো টেন্ডার হয়নি।
বরিশাল সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুদ মাহমুদ সুমন সাংবাদিকদের জানান, গাছ কাটার দায়িত্বপ্রাপ্তরা উপ-বিভাগীয় বৃক্ষ পালনবিদের ঢাকা কার্যালয়ের এক কর্মকর্তার স্বাক্ষরিত কার্যাদেশ দেখিয়েছেন। একটি এগ্রো ফার্মের নামে কার্যাদেশ দেখিয়ে গাছ কেটে লুট করে নেওয়ার চেষ্টা চালানো হয়।
তিনি বলেন, এ বিষয়ে ঢাকার প্রধান কার্যালয়ে বৃক্ষপালনবিদের নির্বাহী প্রকৌশলী মীর মুকুট আহমেদের কাছে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি সড়ক ও জনপথ বিভাগ থেকে কোনো গাছ কাটার টেন্ডার হয়নি। এমনকি এগ্রো প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে যে কার্যাদেশ দেখানো হয়েছে সেটিও ভুয়া। তাৎক্ষণিক সড়ক ও জনপথের বরিশাল উপ-সহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) অরুণ কুমার বিশ্বাসকে ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়। তিনি বেশ কিছু কাটা গাছ জব্দ করে নিয়ে এসেছেন। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে স্থানীয়ভাবে গৌরনদী উপজেলার খাঞ্জাপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য মো. হাবুল বেপারীর গাছ কাটার ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা জানা গেছে। যদিও তিনি দাবি করেছেন, গাছ কাটার ওই কার্যাদেশ যে ভুয়া তা তিনিই বুঝতে পারেননি। তিনি সড়ক ও জনপথের ঢাকা অফিসের এক কর্মকর্তার মাধ্যমে গাছ কাটার অনুমতি নিয়েছিলেন।
আর যে এলাহী এগ্রো এন্টারপ্রাইজের অনুকূলে কার্যাদেশ দেখানো হয়েছে, সে প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী গৌরনদী উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান ফরহাদ মুন্সি বলেছেন, তারা কোনো গাছের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত নন। তিনি আরও বলেছেন, তার প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার করে এ ধরনের কাজ কেউ করলে তাদের বিরুদ্ধে আইনের আশ্রয় নেবেন।
বাংলাদেশ সময়: ২০৫৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৫, ২০২৪
এমএস/এইচএ/