নীলফামারী: নতুন নতুন রেলপথ চালু ও পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ চালুর পর বেড়েছে কোচের চাহিদা। নতুন ট্রেন চালু করতে অনেক কোচ প্রয়োজন।
রেলসূত্র জানায়, বর্তমান সরকার রেল বান্ধব। ফলে সারা দেশে রেলপথ বাড়ানো হচ্ছে। পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ চালুর পর পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়েতে বেশ কিছু নতুন ট্রেন চালু হয়েছে। দিতে হচ্ছে কোচের জোগান। ফলে সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার ওপর চাপ বেড়েছে।
সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার ক্যারেজ শপের (উপকারখানা) ইনচার্জ ঊর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোমিনুল ইসলাম বলেন, এখানে প্রতিদিন তিন ইউনিট কোচ মেরামতের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। আমরা চলতি অর্থ বছরে জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ছয় মাসে ৩১৭টি কোচ মেরামত করেছি। অর্থাৎ প্রতিদিন চার ইউনিট মেরামত কাজ হয়েছে এখানে।
কারখানা সূত্র জানায়, সৈয়দপুর কারখানায় লোকবল সংকট রয়েছে। এখানে ২ হাজার ৮৫৯ জনের স্থলে লোকবল রয়েছে মাত্র ৮২০ জন। কারখানার ২৮টি উপকারখানায় (শপ) উৎপাদন চলছে সীমিত সংখ্যক লোক নিয়ে। মাত্র ২৮ শতাংশ লোক কর্মরত আছেন ১১০ একর জমির ওপর গড়ে ওঠা বিশাল ওই কারখানাটিতে। এছাড়া কারখানায় বাজেট স্বল্পতাও রয়েছে।
চলতি বছরে মাত্র ২০ কোটি টাকা বাজেট মিলেছে। বাজেটের টাকায় মেরামত কাজে ব্যবহৃত উৎপাদন ও উপকরণ সংগ্রহ করা হয়ে থাকে। তবে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন হয়ে থাকে রাজস্ব খাত থেকে। সূত্রটি বলছে, কারখানার উৎপাদন স্বাভাবিক রাখতে শূন্যপদে লোক নিয়োগ জরুরি। একইভাবে বাজেট দ্বিগুণ করা হলে উৎপাদন স্বাভাবিক রাখা সম্ভব।
কারখানা সূত্রে জানায়, চাহিদা অনুযায়ী অবিশ্রান্ত কাজ করছেন কারখানার শ্রমিক-কর্মচারীরা। রেলপথে চলাচলের পর অনুপোযোগী হয়ে পড়া কোচগুলো সৈয়দপুর কারখানায় এনে প্রয়োজনে মেরামত সেরে পুনরায় পাঠিয়ে দেওয়া হয় রেলপথে।
সরেজমিনে দেখা যায়, ব্যাপক কর্মযজ্ঞ চলছে সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানায়। ক্যারেজ শপে চলছিল ভারী মেরামত কাজ। একটি ক্যারেজের বগির ওপর (আন্ডার ফ্রেম) ক্রেনের মাধ্যমে স্থাপন করা হচ্ছে সুপার স্ট্রাকচার। পাশেই বগি শপে চলছিল চ্যাসিজ মেরামতের কাজ।
এছাড়া ক্যারেজ শপে চলছে রেলকোচে রঙের প্রলেপ। ১২ হাজার রকম যন্ত্রাংশ তৈরি হয় মেশিনসহ কয়েকটি শপে। যা রেলকোচ, ওয়াগন ও ইঞ্জিনে ব্যবহার করা হয়। একটি শপে ট্রেনের ব্রেক তৈরি হচ্ছিল। একটিতে তৈরি হচ্ছিল একটি কোচের সঙ্গে অপর কোচকে জুড়ে দেওয়ার কাপলিং যন্ত্র। এছাড়া ঢাকায় পুড়ে যাওয়া তিনটি কোচও আনা হয়েছে কারখানায়। যেগুলো মেরামত করছিলেন শ্রমিকরা। সব মিলিয়ে বিশাল কর্মযজ্ঞ।
এ নিয়ে কথা হয় সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার বিভাগীয় তত্ত্বাবধায়ক (ডিএস) সাদিকুর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, এখন কাজে তৎপরতা অনেক বেশি। দেশের রেলপথ বাড়ছে।
তাই আমাদের ওপর চাপও বেড়েছে। তিনি কারখানাটিতে লোকবল সংকট নিরসনের ওপর গুরুত্ব দেন। তবে সীমাবদ্ধতার মধ্যেও কারখানার গতি নজিরবিহীনভাবে ধরে রেখেছে শ্রমিক কর্মচারীরা। তিনি এজন্য ধন্যবাদ জানান সংশ্লিষ্টদের।
পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের প্রধান যন্ত্র প্রকৌশলী মুহাম্মদ কুদরত ই-খুদা বলেন, এখন ম্যানেজমেন্ট লেভেল অনেক ভালো। মূলত ব্যবস্থাপনার কারণেই সৈয়দপুর কারখানায় উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব হয়েছে। অবিলম্বে রেলওয়ের সব রকম সীমাবদ্ধতা দূর করতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সজাগ আছে।
নীলফামারী-৪ আসনের সংসদ সদস্য সিদ্দিকুল আলম বলেন, সীমাবদ্ধতার মধ্যেও সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানায় অনেক কাজ হচ্ছে। তবে কারখানাটি আধুনিকায়ন জরুরি হয়ে পড়েছে। আর এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানানো হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬২০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৯, ২০২৪
এসআরএস