ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

স্বর্ণের মান যাচাইয়ের মেশিন ক্রেতা-বিক্রেতাদের শক্তভাবে ধরা হবে : শিল্পমন্ত্রী

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩১২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০২৪
স্বর্ণের মান যাচাইয়ের মেশিন ক্রেতা-বিক্রেতাদের শক্তভাবে ধরা হবে : শিল্পমন্ত্রী

ঢাকা: দেশে যারা স্বর্ণের মান যাচাই বা হলমার্ক দেওয়ার মেশিন কেনা-বেচা করেন, তাদের শক্ত হাতে ধরা হবে বলে জানিয়েছেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন।

তিনি বলেন, দোকানের পেছনে বসে হলমার্ক দিয়ে নিজের মাল নিজে বিক্রি করবেন এটা হতে পারে না।

আমাদের বিএসটিআই, অ্যাক্রিডিটেশন বোর্ডের মাধ্যমে ধরা হবে। শীঘ্রই আমরা একটি সুনির্দিষ্ট নীতিমালা তৈরি করবো। রপ্তানি বাজারে প্রবেশ করতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যেটা, তা হলো স্বর্ণের মান উন্নয়ন করতে হবে। এ জন্য বিএসটিআই প্রস্তুত আছে।

শনিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরার (আইসিসিবি) নবরাত্রি হলে বাজুস ফেয়ারের সমাপনী দিনে (তৃতীয় দিন) ‘অলংকারের মান নিয়ন্ত্রণে করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

বাজুসের সহ-সভাপতি এম এ হান্নান আজাদের সভাপতিত্বে সেমিনারে অতিথি হিসেবে ছিলেন বিএসটিআইয়ের মহাপরিচালক এস এম ফেরদৌস আলম ও এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি আবদুল আউয়াল মিন্টু। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাজুসের সহ-সভাপতি সমিত ঘোষ অপু ও ডায়মন্ড বিশেষজ্ঞ তানভির আল মাহমুদ খান।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিল্পমন্ত্রী বলেন, আমরা ব্যবসাবান্ধব সরকার। তাই আমরা ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা করতে চাই। আমরা বিশ্বের যে জায়গায় যেতে চাই সেখানে এ শিল্পের একটা বাজার খুঁজছি। এ জন্য আমাদের পণ্যের বহুমুখীকরণ করতে হবে।

তিনি বলেন, মাশরুমের মতো টেস্টিং ল্যাবরেটরি হয়েছে। আপনি বিক্রি করার জন্য নিজের সার্টিফিকেট দেবেন, সেটা হতে পারে না। এখানে সরকারের দায়িত্ব  আছে। আমাদের সঠিক দায়িত্ব পালন করতে হবে। এক্ষেত্রে আমাদের শক্ত ভূমিকা নিতে হবে। জেলায় জেলায় যেভাবে ল্যাব হচ্ছে, এটা ভালো লক্ষণ না। এখানে প্রতারণা হওয়ার আশঙ্কা বেশি। এ জন্য সরকারের একটি শক্ত নীতিমালা প্রয়োজন এবং আমরা সেখানে আছি।

নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বলেন, যারা এটি শুরু করেছেন এবং নেতৃত্বে আছেন তারা সুসংগঠিতভাবে এই শিল্পকে আধুনিকীরণ করে বড় বাজারে প্রবেশ করাবেন বলে আমি আশাবাদী। পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ বাজারে ভোক্তাদের না ঠকিয়ে সঠিক মানের পণ্য বিক্রি ও আস্থার জায়গাটা ফিরিয়ে আনবেন। আজকের এই সেমিনার অত্যন্ত সময়োপযোগী ও প্রয়োজনীয়। এ জন্য বাজুসের প্রেসিডেন্ট সায়েম সোবহান আনভীরসহ সব নেতাদের ধন্যবাদ জানাই। আপনারা একটি সাহসী ভূমিকা নিয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, আমাদের সুনির্দিষ্ট নীতিমালা নেই। শীঘ্রই আমরা একটি নীতিমালা তৈরি করবো। আজকে আমরা আপনাদের কাছ থেকে অনেক কিছু পেয়েছি, যা একটি নীতিমালা তৈরি করতে সরকারের জন্য অনেক সহজ হবে। এই স্বর্ণ নীতিমালায় যাতে ব্যবসায়ীদের জন্য সব সুযোগ সুবিধা থাকে এবং ভোক্তারা যাতে প্রতারিত না হয় সে ব্যবস্থা করা হবে।

মন্ত্রী বলেন, আর একটি বিষয় হলো, আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশ করতে হলে হলমার্ক থাকতে হবে। রপ্তানি বাজারে প্রবেশ করতে স্বর্ণের মান উন্নয়ন করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এ জন্য বিএসটিআই প্রস্তুত আছে। আমাদের কেন্দ্রীয় ল্যাব, অ্যাক্রিডিটেশন বোর্ড (বিএবি) আছে। যারা মেশিন কেনা-বেচা করছেন তাদেরও দেখতে হবে। তাদের কারা অনুমোদন দিয়েছে মেশিন বানানোর ও বিক্রি করার তা শক্তভাবে দেখতে হবে। দোকানের পেছনে বসে হলমার্ক দিয়ে নিজের মাল নিজে বিক্রি করবেন এটা হতে পারে না। আমাদের বিএসটিআই ও অ্যাক্রিডিটেশন বোর্ডের মাধ্যমে এটাকে শক্তহাতে ধরতে হবে। আমরা আপনাদের ভয় দেখাতে চাই না। আমরা একদিনেই সব পারি। কিন্তু সেটা করতে চাই না। আমরা ব্যবসাবান্ধব, চাই ব্যবসাটা চলুক।

শিল্পমন্ত্রী বলেন, প্রাচীনকাল থেকেই বিয়ে থেকে শুরু করে সব জায়গায় স্বর্ণের প্রচলন আছে। স্বর্ণ বিক্রি করতে গেলে বোঝা যায় আসল না নকল। আজকে আমরা চিন্তা করবো নতুন নেতৃত্বে যারা আছেন আধুনিক প্রযুক্তি দিয়ে বিশ্ববাজারে প্রবেশ করবো। ইতোমধ্যে আমরা দেখেছি দুবাইয়ের কয়েকটি কোম্পানি আমাদের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। সেখানে রিফাইনারি করা হচ্ছে। বসুন্ধরা গ্রুপ, নিটল গ্রুপসহ আরও অনেকেই রিফাইনারি করছে। আমাদের রিফাইনারির র’ম্যাটারিয়ালের পিউরিটি যদি থাকে তাহলে অনেকটা সহজ হয়ে যাবে, চোরাপথে আমদানিগুলো বন্ধ হবে।

শিল্পমন্ত্রী আরও বলেন, স্বর্ণের বারগুলো যদি নিজস্ব কারখানায় তৈরি হয়, সেটার পিউরিটি থাকবে, মার্কিং থাকবে ও সহজলভ্য হবে। একইসঙ্গে বিশাল কর্মসংস্থান হবে সারা বাংলাদেশে। তাদেরও মান উন্নয়ন হবে, আন্তর্জাতিক মানের হবে। দুবাইসহ অন্যান্য জায়গায় আমাদের ছেলে-মেয়েরা কাজ করছেন, তাদের সেই মান আছে। আমাদের এখানে ইনস্টিটিউট হচ্ছে, এ জন্য বাজুসকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। তাদের অধীনে বেশ কিছু ইনস্টিটিউট হচ্ছে। তাদের সঙ্গে আমাদের বিএসটিআই কাজ করবে এটা আমি বলতে পারি।

সেমিনারে বিভিন্ন জেলা থেকে আসা স্বর্ণের মাননিয়ন্ত্রক এবং ব্যবসায়ীরা বলেন, মফস্বল এলাকায় সেভাবে স্বর্ণের মান নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে না। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, স্বর্ণ এক ল্যাবে নকল আসে, অন্য ল্যাবে গিয়ে তা আসল হয়ে যায়। সেসব ল্যাবে ইচ্ছাকৃতভাবে ভুল সার্টিফিকেট দেওয়া হয়, যা এই জুয়েলারি খাতের ব্যবসার জন্য ক্ষতিকর। এই অবস্থার অবসান পেতে হলে বাজুস এবং সরকারের পক্ষ থেকে কঠোর নজরদারি করা প্রয়োজন। পাশাপাশি গোল্ডের মানের ক্ষেত্রে হলমার্ক ল্যাবের সার্টিফিকেটের পাশাপাশি বিএসটিআইয়ের সমন্বয় থাকা প্রয়োজন।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে স্বর্ণের মান নিয়ে বাজুসের সহ-সভাপতি সমিত ঘোষ অপু বলেন, স্বর্ণের মান নিয়ে যখন কথা বলি, তখন একটি নাম সবার প্রথমে আসে। তা হচ্ছে হলমার্ক। এই হলমার্ক পরীক্ষাগারে স্বর্ণের মান নির্ণয় করে, যা ক্রেতাদের কাছে একটি নির্ভরযোগ্যতা পেয়ে এসেছে। আমরা গ্রাহকদের সবসময় বলি, হলমার্ক করা ছাড়া যেন স্বর্ণ না কেনেন। এক্ষেত্রে বাজারে হলমার্কের ভুয়া সার্টিফিকেট ব্যবহার করে কিছু অসাধুরা। এ বিষয়ে সরকারের নজরদারি বাড়াতে হবে। তাহলে ক্রেতারা কম প্রতারিত হবেন।

বাংলাদেশ সময়: ২২৫৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০২৪
জিসিজি/ইএসএস/এসসি/এফআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।