ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৯ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

সংসদ অধিবেশনে মেনন

‘দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সিন্ডিকেট ভাঙতে’ সরকারকে নিজের মানুষের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নিতে হবে

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৫০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০২৪
‘দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সিন্ডিকেট ভাঙতে’ সরকারকে নিজের মানুষের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নিতে হবে

ঢাকা: দেশি-বিদেশি চক্রান্ত ব্যর্থ করে সুষ্ঠুভাবে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন সম্পন্ন হলেও এ সম্পর্কে জনমানুষের অনাস্থাবোধ দূর করা যায়নি বলে মন্তব্য করেছেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন। সরকারের প্রধান চ্যালেঞ্জ ‘দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সিন্ডিকেট ভাঙতে’ নিজের মানুষের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নিতে হবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

মঙ্গলবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনা ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকুর সভাপতিত্বে মেনন বলেন, এবারই সর্বপ্রথম এত অধিক সংখ্যক স্বতন্ত্র সদস্য সংসদে এসেছেন। ফলে সংসদে কিছু নতুন রীতির সৃষ্টি হবে। কিন্তু সেটা এমন না হয় যাতে সংসদীয় রীতির সৌন্দর্য নষ্ট হয়।

তিনি বলেন, রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও এটি একটি নতুন অভিজ্ঞতা। নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক করতে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনকে উন্মুক্ত করে দিয়েছিলেন। দলের ক্ষেত্রে এর প্রতিক্রিয়া হিসেবে উপজেলা নির্বাচনকেও উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। রাজনৈতিক ক্ষেত্রে এর প্রতিক্রিয়ায় নতুন কোনো রাজনৈতিক ব্যবস্থা জন্ম নেবে কিনা সেটা দেখার বিষয়।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা সে ধরনের নতুন রাজনৈতিক ব্যবস্থার কথা বলছেন। এই ব্যবস্থায় ধনীরাই থাকবে, গরিব-মধ্যবিত্ত সাধারণ মানুষ নয়। নির্বাচন কমিশন সেই লক্ষ্যে উপজেলা চেয়ারম্যানের জামানত এক লাখ, ভাইস-চেয়ারম্যানের জামানত ৭০ হাজার টাকা নির্ধারণ করেছেন।

মেনন আরও বলেন, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশি-বিদেশি চক্রান্ত ছিল। যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচনের নামে ভিসা নীতি, শ্রমিক অধিকার নীতি প্রয়োগের হুমকি দিয়ে আসছিল। এই পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে তখনই বলেছিলাম অবাধ নির্বাচন নয়, রেজিমচেঞ্জ বা সরকার পরিবর্তনই তাদের লক্ষ্য। এদেশে তাদের স্বাভাবিক সহযোগী ছিল এনপি-জামায়াত। তারা দেশের অভ্যন্তরে সরকার পতনের আন্দোলনের নামে সব ধরনের অরাজকতা সৃষ্টি করার প্রয়াস নিয়েছিল। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ় রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ও জনগণের প্রতিরোধ তাদের সকল ষড়যন্ত্রকে ব্যর্থ করে দিয়েছিল। আগুন সন্ত্রাস, ট্রেনে মানুষ পুড়িয়ে মারা, রেল লাইন উপড়ে ফেলা নানা জটিল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে এই নির্বাচনটি হয়ে যাওয়া দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র এবং অসাংবিধানিক ধারার বিরুদ্ধে বিশেষভাবে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে একটি রাজনৈতিক বিজয়।

তবে এ কথা সত্য যে নির্বাচন সম্পর্কে জনমানুষের যে অনাস্থাবোধ তা দূর করা যায়নি। কালো টাকার প্রভাব, বিশেষ সংস্থার নিয়ন্ত্রণ, কোনো কোনো ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের অসহায়ত্ব, শহরাঞ্চলগুলোয় ভোটারদের নগণ্য উপস্থিতি নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতাকে ক্ষুণ্ণ করেছে। কিন্তু তা কোনোক্রমেই নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে না। নির্বাচন অনুষ্ঠান, সরকার গঠন সবই সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে। এখন প্রধান চ্যালেঞ্জ ক্রমবর্ধমান দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে আনা। এটা একইভাবে আওয়ামী লীগের নির্বাচনের ১১টি প্রধান প্রতিশ্রুতির প্রথম প্রতিশ্রুতি। বাজার সিন্ডিকেট না ভাঙার কোনো কারণ নাই। কারণ, কারা বাজার নিয়ন্ত্রণ করে সরকারের তা জানা। অন্য দলকে এ ব্যাপারে দোষ দিয়ে লাভ নেই। নিজের মানুষের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নিতে হবে। আমরা এ ব্যাপারে গণ-বণ্টন ব্যবস্থার পূর্ণ রেশনিং চালু করার কথা বলেছিলাম। সরকারকে বিষয়টা আরেকবার বিবেচনার জন্য বললাম।

ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি আরও বলেন, বর্তমান অর্থনীতিক পরিস্থিতি অর্থনীতি ক্ষেত্রে নয়া উদারনীতিবাদ অনুসরণের ফসল। এই নীতিতে মুষ্টিমেয়ের হাতে সম্পদের কেন্দ্রীভবন ঘটে। বাংলাদেশে এই নয়া উদারনীতিবাদেরও বিকৃত প্রয়োগ ঘটছে। দুবৃত্তায়িত এই অর্থনীতি বিস্তৃত হয়েছে রাজনীতি ক্ষেত্রে। সমাজতন্ত্রের লক্ষ্য দুরে থাক, আওয়ামী লীগ যে মিশ্র অর্থনীতির কথা বলেছে তার থেকে তারা আজ যোজন যোজন দূরে। দেশে জন্ম নিয়েছে ক্রনি ক্যাপিটালিজম।

উল্লেখ্য, ক্রনি ক্যাপিটালিজম হলো পুঁজিপতি ও রাজনীতিকদের মধ্যকার বন্দোবস্ত, যার মাধ্যমে পুঁজিপতিরা বৈধ বা অন্য উপায়ে সম্পদ আহরণ করেন এবং রাজনীতিকরা ক্ষমতা টিকিয়ে রাখেন। এ ব্যবস্থায় রাজনৈতিক দল, রাজনীতিক, মন্ত্রী, আমলারা অর্থের জন্য ব্যবসায়ীদের ব্যবহার করার বিনিময়ে তাদের নৈতিক-অনৈতিক সুযোগ-সুবিধা দিতে বাধ্য থাকে। দেশে সুশাসনের অভাব হলে ক্রনি ক্যাপিটালিজম বা স্বজনতোষী পুঁজিবাদের বিস্তার ঘটে।

মেনন আরও বলেন, ক্রনি ক্যাপিটালিজমের স্বাভাবিক সম্পর্ক সাম্রাজ্যবাদের সাথে। আর সাম্রাজ্যবাদের স্বাভাবিক মিত্র মৌলবাদ। বাংলাদেশ সেই পরিণতির দিকে এগিয়ে চলেছে কিনা সেটাই দেখার বিষয়। এই ক্ষেত্রে রোহিঙ্গা সমস্যা খুবই প্রাসঙ্গিক। মানবতা থেকে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়া হলেও তারা আজ বাংলাদেশের নিরাপত্তা ও সামাজিক স্থিতিশীলতার প্রতি প্রত্যক্ষ হুমকিতে পরিণত হয়েছে। মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধের অবশ্যম্ভাবী প্রতিক্রিয়া বাংলাদেশের ওপর পড়ছে। এই হুমকির মুখে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও অখণ্ডতা রক্ষা করা আজ কর্তব্য।

বাংলাদেশ সময়: ২০৪৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০২৪
এসকে/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।