ঢাকা: রাজধানীর বনানীর এফআর টাওয়ারে আগুনের ঘটনা তদন্ত করে ৬২ জন লোকের বিরুদ্ধে রিপোর্ট দেওয়া হয়েছিল; কিন্তু চার্জশিট দেওয়ার সময় অনেকের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে এবং আজ পর্যন্ত সেই মামলার অভিযোগ গঠন পর্যন্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম।
তিনি স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল করে এ ধরনের ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিচার করার আহ্বান জানান।
শনিবার (২ মার্চ) জাতীয় সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের উপর আনা ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে শ ম রেজাউল করিম এ কথা জানান।
এ সময় স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন।
শ ম রেজাউল করিম বলেন, বড় বড় অপরাধীদের বিচার হয়েছে। সেক্ষেত্রে দায়মুক্তি থেকে আমরা বেরিয়ে এসেছি। কিন্তু কিছু কিছু জায়গায় আরও কঠিন পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। বনানীর এফ আর টাওয়ারে আগুন লাগার পর সেই সময় আমি গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলাম। আমি তখন গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে কাজ করেছিলাম, তদন্ত করে ৬২ জন লোকের বিরুদ্ধে আমরা রিপোর্ট দিয়েছিলাম। দুর্ভাগ্য সর্বোচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটি রিপোর্ট দেওয়ার পরও সবার বিরুদ্ধে মামলা হয়নি। তার পর চার্জশিট দেওয়ার সময় অনেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এখানেই শেষ নয় আজ পর্যন্ত সেই মামলার অভিযোগ গঠন পর্যন্ত হয়নি।
তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জের একটি ফুড ফ্যাক্টরিতে ৫২ জনকে পুড়িয়ে হত্যা করালো। সেই প্রক্রিয়ার আসামিরা সব জেলে গেছেন, আজ পর্যন্ত বিচার কার্যক্রম শুরু হয়নি। এ রকম অনেক ঘটনা যেটা বিরোধী দলের চিপ হুইপ বলেছেন। এই জায়গায় আমার দাবি, এই জাতীয় অপরাধের সঙ্গে যারা জড়িত প্রয়োজনে আইন পরিবর্তন করে স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল করে তাদের বিচার করা না হলে শুধু এই অপরাধের না, অন্যদের কাছে একটা মেসেজ যাবে না।
সাবেক গণপূর্তমন্ত্রী বলেন, আমরা সেই সময় ১৩০০ ভবনকে চিহ্নিত করেছিলাম। গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে যে ভবনের প্ল্যান সঠিক নাই, যে ভবনের অধিকাংশ ফ্লোর অনুমোদিতভাবে নেওয়া হয়েছে সেই ভবনগুলো কিন্তু ভাঙা সম্ভব হয়নি। এটাও কিন্তু এক প্রকারের দায়মুক্তি দেওয়া। কাজে আমি আশা করব সেটা করা দরকার। আর একটা বিষয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসেন, আমি বলব আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ কায়েম করেছি কিন্তু ডিজিটাল ব্যবস্থা অপব্যবহারে ভয়ংকর ক্ষতিগ্রস্ত যারা তাদেরও বিচার পাওয়ার অধিকার আছে। আমি একটি মামলার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে গিয়েছি, পুলিশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে গিয়েছি। আসামিরা স্বীকারোক্তি করার মামলায় তিন বছরে চার্জশিট দেওয়া হয় না। এই অজুহাতে আসামিরা জেলখানা থেকে বের হয়ে যাচ্ছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ দরকার কিন্তু ডিজিটাল ব্যবস্থার অপব্যবহার করে যারা তাদেরও বিচারের জন্য যদি ব্যবস্থা না হয় সেটাও কিন্তু এক প্রকার দায়মুক্তি তাদের জন্য হয়ে যায়। আমি আশা করি এই বিষয়গুলোকে সম্পৃক্ত করে, বাংলাদেশকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য শুধু আর্থ সামাজিক উন্নয়ন না, অবকাঠামো উন্নয়ন না; আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার যে মৌলিক লক্ষ্য যেটা নিয়ে আমরা যুদ্ধ করেছিলাম সেই জায়াগায় আমাদের পৌঁছাতে হবে। অন্যথায় দেখা যাবে যে, আমাদের একদিকে উন্নয়ন হলো অন্যদিকে আমরা পিছিয়ে পড়ছি। আশা করি এই বিষয়গুলো সংশ্লিষ্ট যারা আছেন তারা গুরুত্বেও সঙ্গে বিবেচনা করবেন।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে সাবেক এ মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গণতন্ত্র সুসংহত করার জন্য যদি নির্বাচন অনুষ্ঠিত না হতো তাহলে বাংলাদেশে সাংবিধানিক শূন্যতা দেখা দিত। আমাদের দেশের সর্বোচ্চ আইন বাংলাদেশের সংবিধান। সেখানে সংবিধানের বিধিবিধান এবং সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে বলা হয়েছে একটি নির্বাচিত সরকার আর একটা নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবে। এর মধ্যবর্তী কোনো অবস্থা নাই। যেটা আমাদের সাংবিধানিক অবস্থান এবং একই সঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের রায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রার অপ্রতিরোধ্য গতির মধ্য থেকে দেশে গণতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে এর ফলে আজকে বাংলাদেশ স্থিতিশীলতা পেয়েছে,উন্নয়ন পেয়েছে, সমৃদ্ধি পেয়েছে। সেই কারণে বাংলাদেশ বিশ্বের কাছে উন্নয়নের রোল মডেল। উন্নয়নের জাদুকর শেখ হাসিনা বিশ্বের কাছে বিস্ময়। বাংলাদেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশে পরিণত করে বঙ্গবন্ধুকন্যা আজকে যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার পরিকল্পনা করেছেন সে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ সম্ভব হচ্ছে আমার বিশ্বাস, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া, সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকার কারণে। আমরা বিশ্বাস করি শেখ হাসিনার হাতেই নিরাপদ বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ সময়: ২২১৯ ঘণ্টা, মার্চ ২, ২০২৪
এসকে/এসএএইচ