ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

টেকনাফে ভেসে এলো মরা পরপইস

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৪৭ ঘণ্টা, মার্চ ৩, ২০২৪
টেকনাফে ভেসে এলো মরা পরপইস

কক্সবাজার: বঙ্গোপসাগরের সৈকতে ভেসে এসেছে একটি মরা পরপইস। এটি প্রায় বিপন্ন জলজ একটি স্তন্যপায়ী প্রাণী।

জানা গেছে, মরা পরপইসটি ৪ ফুট ৯ ইঞ্চি দৈর্ঘ্যের। ওজন প্রায় ৪৫ কেজি। বয়স ৯ থেকে ১০ বছর। এ তথ্য জানিয়েছেন বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম।

রোববার (৩ মার্চ) সকালে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিনড্রাইভ সড়কের টেকনাফ সৈকতের চৌকিদার পাড়ায় বিপন্ন প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণীটি মৃত অবস্থায় ভেসে আসে। একই সময় শামলাপুর সৈকতে ভেসে আসে একটি অলিভ রিডলি বা জলপাই রঙের সামুদ্রিক কচ্ছপ।

বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বোরি) বিজ্ঞানীরা মৃত প্রাণীটির নমুনা সংগ্রহ করে মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধানের চেষ্টা করছেন।

এর আগে ২০২৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি হিমছড়ি সৈকতে একই প্রজাতির একটি মৃত পরপইস ভেসে আসে। সে সময় বোরির বিজ্ঞানীরা জানান, দেশে আগে কখনও পরপইস দেখা যায়নি।

বোরির জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম বলেন, রোববার সকালে ভেসে আসা পরপইসটি দেখতে ইরাবতী ডলফিনের মতো। জলজ স্তন্যপায়ী এ প্রাণী ‘ইন্দোপ্যাসিফিক ফিনলেস পরপইস’ হিসেবে পরিচিত। এর বৈজ্ঞানিক নাম নিওফোকেনা ফোকেনয়েডস।

এদের পৃষ্ঠীয় পাখনা থাকে না। বাচ্চা অবস্থায় কালো রঙের হলেও বয়সের সঙ্গে রঙ বিবর্ণ হয়ে যায়। এটি পাঁচ থেকে ছয় ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়। এদের মজবুত শরীর টেপা ফ্লুকের মতো এবং মাথা অনেকটা গোলাকার। এই প্রাণীটি অগভীর জল, জলাভূমি এবং মোহনায় বিচরণ করতে পছন্দ করে। এরা সাধারণত একাকী চলাফেরা করে। তবে মাঝেমধ্যে খাদ্য সংগ্রহের সময় এরা ৫ থেকে ১২ বা পঞ্চাশের বেশি হয়ে ঘুরতে পছন্দ করে।

পরপইস সাধারণত মাছ, স্কুইড,  চিংড়ি, অক্টোপাস খায়। মাঝে মাঝে সামুদ্রিক উদ্ভিদও খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে। সাধারণত বসন্তে বা গ্রীষ্মে এরা বাচ্চা প্রসব করে। বাচ্চারা জন্মের পর মায়ের পিঠে লেগে থাকে।

মৃত পরপইসটির মাথায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ মৎস্য করপোরেশনের চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত সচিব) ও সমুদ্রবিজ্ঞানী সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দর। তিনি বলেন, ধারণা করা হচ্ছে কোনো নৌযানের প্রপেলারের সঙ্গে মাথায় ধাক্কা খেয়ে অনাঙ্খিকভাবে প্রাণীটি মারা গেছে। এ ছাড়া মানুষের অবিবেচনা প্রসূত আচরণ, নিষিদ্ধ জালের ব্যবহার, অপরিকল্পিত পর্যটন, দখল, দূষণ, জলবায়ু পরিবর্তন, বাসস্থান বিনষ্ট ইত্যাদি কারণে বিশ্বব্যাপী বন্যপ্রাণীর অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়েছে।

আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘের (আইইউসিএন) তালিকায় এটি বিপন্ন প্রাণী হিসেবে চিহ্নিত।

ওয়াইল্ড লাইফ কনজারভেশন সোসাইটির সর্বশেষ জরিপে বঙ্গোপসাগরে মোট ১৩ জাতের সিটাসিয়ান বা সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণী শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে ৮ প্রজাতির ডলফিন, ৪ প্রজাতির তিমি ও মাত্র এক প্রজাতির পরপইস রয়েছে।

উল্লেখ্য, গত ১৪ থেকে ২৬ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে এক নাগাড়ে চারটি ডলফিন, অন্তত ৮০টি অলিভ রিডলি ও বিভিন্ন সামুদ্রিক প্রাণী মৃত অবস্থায় ভেসে এসেছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৭ ঘণ্টা, মার্চ ৩, ২০২৪
এসবি/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।