ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

রেলের ‘অসীম ম্যাজিকে’ স্বপ্ন বাঁচল শতাধিক শিক্ষার্থীর

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭১০ ঘণ্টা, মার্চ ৭, ২০২৪
রেলের ‘অসীম ম্যাজিকে’ স্বপ্ন বাঁচল শতাধিক শিক্ষার্থীর

ঢাকা: রাজধানীর কমলাপুর থেকে গত ৫ মার্চ (মঙ্গলবার) সকাল ৬টায় ধূমকেতু এক্সপ্রেসের ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল। আর ট্রেনটি পৌঁছানোর কথা ছিল বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে।

 

ট্রেনটিতে চড়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় পৌঁছে বিকাল সাড়ে ৩টায় বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ‘সি’ ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল কয়েকশত পরীক্ষার্থীর।  
কিন্তু কমলাপুর থেকে ট্রেনটি বিলম্বে ছাড়ে তার ওপর মাঝপথে ট্রেনটির ইঞ্জিন বিকল হয়।  

এতে ভেস্তে যেতে বসে পরীক্ষার্থীদের স্বপ্ন।  

এমন পরিস্থিতিতে রেলওয়ে (পূর্বাঞ্চল) মহাব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদারের ম্যাজিকে বেঁচে গেছেন কয়েকশত শিক্ষার্থীর স্বপ্ন।

এরপর ভর্তি পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রশংসায় ভাসছেন রেলওয়ের এ কর্মকর্তা।  

যেভাবে বাঁচে পরীক্ষার্থীদের স্বপ্ন

বাংলাদেশ রেলওয়ে রেলওয়ে(পূর্বাঞ্চল) মহাব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে শেয়ার করা এক পোস্টে জানান, মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ৩টায় রাবিতে এক দফা ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। সেই পরীক্ষায় অংশ নিতে কয়েকশত শিক্ষার্থী ঢাকা থেকে রওনা হন রাজশাহীগামী ধূমকেতু এক্সপ্রেসে।

কিন্তু ‘রেল ব্রোকেনের জন্য ধূমকেতু এক্সপ্রেস ঢাকা থেকে বিলম্বে রওনা হয়। বেলা ১১টায় হিসেব করে দেখা গেল, ট্রেনটি বেলা ৩টা নাগাদ রাজশাহী পৌঁছাবে। ’

তারপর শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন বাঁচাতে তার পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে তিনি লেখেন, ‘পরীক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে অন্য ট্রেনকে (বিভিন্ন স্টেশনে) বসিয়ে ট্রেনটিকে এগিয়ে আনছিলাম। ভাগ্য এতই খারাপ, লাহেড়ী মোহনপুর স্টেশনে এসে ধূমকেতুর ইঞ্জিন ফেইল করে। পরে পরীক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে শরৎনগরে অবস্থানরত চিলাহাটি এক্সপ্রেস ট্রেনের ইঞ্জিন এনে ধূমকেতু আবার চালু করলাম। হিসাবে করে দেখলাম, ট্রেনটি বিকেল ৪টায় রাজশাহী পৌঁছাবে, তখন পরীক্ষা শুরু হয়ে যাবে। ’

পরে রেলওয়ের এই কর্মকর্তা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তারকে ফোন দিয়ে পরীক্ষার সময় পেছানোর অনুরোধ করেন। তার অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে উপাচার্য বিষয়টি বিবেচনার আশ্বাস দেন।

এর পরও দুশ্চিন্তা কমছিল না রেলওয়ের কর্মকর্তাদের। এ বিষয়ে অসীম কুমার বলেন, ‘ট্রেন সর্বোচ্চ অনুমোদিত গতিতে চলছে, দুশ্চিন্তা ছাড়ছে না। পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। উপায় না দেখে আড়ানি স্টেশনে ট্রেন না থামিয়ে থ্রু পাস করালাম। ’

সব বাধা পেরিয়ে যখন ধূমকেতু এক্সপ্রেস রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশনে থামে, তখন বেলা ৩টা বেজে ৩৮ মিনিট।  

এই পর্যায়ে অসীম কুমার তালুকদার উপাচার্যকে অনুরোধ করেন, যেন পরীক্ষার্থীদের হলে ঢোকার সুযোগ দেওয়া হয়। পরে উপাচার্যের নির্দেশে ধূমকেতু এক্সপ্রেসে যাওয়া শিক্ষার্থীরা হলে প্রবেশের সুযোগ পান।

পরে এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে অসীম কুমার তালুকদার বলেন, ‘আমরা আসলে পরিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে কাজ করেছি, বিখ্যাত হবে ভাবতে পারিনি’।  

এটা যে এত ভাইরাল হবে ভাবেননি বলে জানান এ কর্মকর্তা।  

তিনি আরও বলেন, ‘ট্রেন যখন ছাড়ে, তখন আমাকে জানানো হয়, ওই ট্রেনে ৭০০ পরীক্ষার্থী আছে। তবে সংখ্যাটা এত ছিল না। পরীক্ষার্থী কম ছিল, কিন্তু তাদের আত্মীয়স্বজন, অভিভাবকসহ এই সংখ্যা ছিল। তখন থেকেই ট্রেনটা ফলো করি আমরা। ’ 

‘নিয়ন্ত্রণকক্ষকে বলা হয় অন্য ট্রেন দাঁড় করিয়ে ট্রেনটি এগিয়ে নেওয়ার জন্য। এখানে এত পরীক্ষার্থী, তারা পরীক্ষা না দিতে পারলে খারাপ হবে। কেউ চান্স পেলে তার জীবন ঘুরে যাবে বলে সবাই  আন্তরিকতার সঙ্গে নিয়েছিল বলে মন্তব্য করেন পশ্চিমাঞ্চলের এ মহাব্যবস্থাপক।  

সেদিন দুর্ভাগ্য পিছু ধরেছিল মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘এমনই দুর্ভাগ্য যে উল্লাপাড়ার পর একটি স্টেশনে ট্রেনটির ইঞ্জিন বিকল হয়। কোনোভাবেই চাকা ঘোরে না। চারদিকে কোথাও ইঞ্জিন নেই। এ সময় জানতে পারি শরৎনগরে চিলাহাটি এক্সপ্রেস আসছে। পরে ওই ট্রেনের ইঞ্জিন এনে ধূমকেতুতে লাগানো হয়। এতে পৌঁছানোর সময় বেড়ে দাঁড়ায় ৪টা। পরে দেখলাম ৪টা নয়, ট্রেনটি পৌঁছাতে ৪টা ১৫ বেজে যাবে। আমি সব স্টপেজ বন্ধ করে দিই, কিন্তু তাতেও কাজ হচ্ছিল না। ’

অসীম কুমার বলেন, ‘ওই ট্রেনের গতি ৭০ কিলোমিটার ছিল, পরে সেটিকে বাড়িয়ে ৮৫ কিলোমিটার করা হয়। এতে করে ৩টা ৩৮ মিনিটে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশনে ট্রেনটি পৌঁছায়। ’ 

পরে উপাচার্য মহোদয়ের নির্দেশে যারা দৌড়ে দৌড়ে পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছায় তাদের ঢুকতে দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে বুধবার সংবাদ সম্মেলনে এসে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, ধূমকেতু এক্সপ্রেসে থাকা আনুমানিক ১২৫ জন পরীক্ষার্থীকে তারা কেন্দ্রে প্রবেশের সুযোগ দিয়েছি। তাদের প্রায় ২০ মিনিট মত দেরি হয়েছিল। তবে তাদেরকে অতিরিক্ত সময় দেওয়া হয়নি।

নিয়মানুযায়ী পরীক্ষা শুরুর ১৫ মিনিট পরে কেন্দ্রে কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না। কিন্তু মানবিক দিক বিবেচনায় আমরা তাদেরকে কেন্দ্রে প্রবেশের সুযোগ দেওয়া হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন উপাচার্য।

আরও পড়ুন>> শতাধিক ভর্তিচ্ছুর স্বপ্ন বাঁচালেন পশ্চিম রেলের জিএম

বাংলাদেশ সময়: ১৭০৬ ঘণ্টা, মার্চ ৭, ২০২৪
এনবি/এসএএইচ 
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।