ঢাকা: জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর ও এর অংশীদার মানবিক সংস্থাগুলো রোহিঙ্গা শরণার্থী ও তাদের আশ্রয় প্রদানকারী স্থানীয় জনগণের সুরক্ষা ও সহায়তায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে পুনরায় আহ্বান জানিয়েছে।
বুধবার (১৩ মার্চ) বাংলাদেশ সরকারের নেতৃত্বে রোহিঙ্গা মানবিক সংকটের জন্য ২০২৪ সালের কার্যক্রমের যৌথ পরিকল্পনা (জেআরপি) ঘোষণা করা হয়েছে।
এ দিন জেনেভায় দাতাদের সামনে কর্ম-পরিকল্পনা ও আনুষঙ্গিক আর্থিক চাহিদা তুলে ধরেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি এবং জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার মহাপরিচালক এমি পোপ।
এতে বলা হয়, মিয়ানমারে ক্রমবর্ধমান সংঘাতের এই সময়ে বাংলাদেশের সঙ্গে আন্তর্জাতিক সংহতি এবং শরণার্থীদের সুরক্ষা আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।
যৌথ কর্ম-পরিকল্পনায় যুক্ত থাকছে ১১৭টি সংস্থা, যার প্রায় অর্ধেকই বাংলাদেশি। এর লক্ষ্য কক্সবাজার ও ভাসানচরে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী ও ৩ লাখ ৪৬ হাজার স্থানীয়র জনগণকে খাদ্য, আশ্রয়, স্বাস্থ্যসেবা, নিরাপদ পানি, সুরক্ষা পরিষেবা, শিক্ষা, জীবিকামূলক কাজের সুযোগ এবং দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে সহায়তা করা।
বাংলাদেশে প্রায় ১৯৫ শতাংশ রোহিঙ্গা পরিবার ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে এবং তারা মানবিক সহায়তার ওপর নির্ভরশীল। এই শরণার্থী জনগোষ্ঠীর ৭৫ শতাংশেরও বেশি নারী ও শিশু; আর তারা শোষণ ও লিঙ্গ-ভিত্তিক সহিংসতার ঝুঁকিতে রয়েছে। তাদের জন্য জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজন টেকসই সহায়তা। পুরো শরণার্থী জনগোষ্ঠীর অর্ধেকেরও বেশি মানুষের বয়স ১৮-এর নিচে; যাদের শিক্ষা, দক্ষতা-উন্নয়ন ও জীবিকামূলক কাজের সুযোগ সীমিত।
এই মানবিক সংকটটি যখন বৈশ্বিক মনোযোগ হারিয়ে ফেলেছে, তখন ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে বাংলাদেশ সরকার, স্থানীয় জনগণ ও দাতব্য সংস্থাগুলির প্রযোজন টেকসই আন্তর্জাতিক সমর্থন।
বিগত বছরগুলোর অপর্যাপ্ত তহবিল মিয়ানমারে সহিংসতা ও নিপীড়ন থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা নারী, শিশু ও পুরুষদের জীবনে মারাত্মক বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। তারা তাদের মৌলিক চাহিদাগুলো মেটাতেই হিমশিম খাচ্ছে, আর তাদের সমস্যা আরও প্রকট হওয়ার আশংকা রয়েছে। নিরাপত্তাহীনতা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে আক্রান্ত জনবহুল শরণার্থী ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের জীবন। পুরোপুরিই অনিশ্চিত, আর তারা মানবিক সহায়তার ওপর নির্ভরশীল।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবশ্যই ক্যাম্পে শরণার্থীদের শিক্ষা, দক্ষতা-প্রশিক্ষণ ও জীবিকামূলক কর্মকাণ্ডের সুযোগ সৃষ্টিতে বিনিযোগসহ জীবন রক্ষাকারী ও জীবন ধারণে প্রয়োজনীয় সহায়তা অব্যাহত রাখতে হবে।
মৌলিক চাহিদা মেটাতে সংগ্রামরত শরণার্থীদের জন্য এই তহবিল একান্ত প্রয়োজন এবং এটি হবে তাদের জন্য সীমিত মানবিক সহায়তার পরিপূরক। গত বছরের ডিসেম্বরে জেনেভায় গ্লোবাল রিফিউজি ফোরামে দেওয়া প্রতিশ্রুতিসমূহ নিশ্চিতভাবে পূরণ করার জন্যও পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। এর মধ্যে রয়েছে রোহিঙ্গাদের আত্মনির্ভরশীলতা বাড়ানোর প্রয়াস, যা তাদের একটি সুস্থ জীবনের আশা জাগিয়ে রাখবে ও সমুদ্রে বিপজ্জনক ভ্রমণের তাদের নিরুৎসাহিত করবে বলে কর্ম-পরিকল্পনায় বলা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮১২ ঘণ্টা, মার্চ ১৩, ২০২৪
টিআর/এমজেএফ