ঢাকা, রবিবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০৩ নভেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

সাফ জয়ী ইয়ারজানের উঠে আসার গল্প!

সোহাগ হায়দার, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৫৫ ঘণ্টা, মার্চ ২৩, ২০২৪
সাফ জয়ী ইয়ারজানের উঠে আসার গল্প!

পঞ্চগড়: দারিদ্র পরিবারের মেয়ে ইয়ারজান বেগম। স্বপ্ন দেখতেন বড় খেলোয়াড় হওয়ার।

তবে খেলার প্রতি আত্মবিশ্বাস থাকার পরেও অনুশীলনে কোনো প্রশিক্ষক না থাকায় এক সময় এগিয়ে আসে পঞ্চগড়ের টুকু ফুটবল একাডেমি। আর এখান থেকেই তার উত্থান এবং সাফ জয়ী সেরা গোলরক্ষক।

জানা গেছে, ছোট থেকেই ফুটবল খেলার প্রতি আকৃষ্ট ছিলেন তিনি। নানা প্রতিবন্ধকতার শিকার হলেও ছুটেছেন ফুটবলের পেছনে। তবে প্রশিক্ষক না থাকায় চলার পথ কিছুটা কঠিন হয়ে যায় ইয়ারজানের। এর মধ্যে পঞ্চগড়ের টুকু ফুটবল একাডেমিতে স্ট্রাইকার হিসেবে যোগ দেন তিনি। তবে গোলরক্ষকের অভাব থাকায় প্রশিক্ষকের পরামর্শেই গোলরক্ষক হয়ে উঠেন তিনি। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত সাফ অনূর্ধ্ব-১৬ নারী ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের টুর্নামেন্টে সেরা গোলরক্ষকের পুরস্কার জেতায় এখন পঞ্চগড়ে ফুটবল খেলোয়াড়দের অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছেন ইয়ারজান।

সরেজমিনে একাডেমি ঘুরে দেখা গেছে, টুকু ফুটবল একাডেমির হয়ে পঞ্চগড় বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম স্টেডিয়ামে নিয়মিত অনুশীলন করছে প্রায় শতাধিক তরুণ-তরুণী। তৃণমূল থেকে উঠে আসা ইয়ারজানের মত স্বপ্ন দেখছে সবাই। ইতিমধ্যে বিভিন্ন পর্যায়ে খেলার পাশাপাশি বয়স ভিত্তিক দলে অংশগ্রহণসহ জাতীয় দলের হয়ে খেলার চ্যালেঞ্জ নিয়েছে প্রশিক্ষণ নিতে আসা খেলোয়ারেরা।

আরও জানা গেছে, ফুটবল জগতের মানুষ টুকু রহমান। খেলেছেন বিভিন্ন পর্যায়ে। স্বপ্ন দেখেছেন বাংলাদেশকে খেলোয়াড় উপহার দেওয়ার। আর এতেই ওয়ান স্টারের নিজ নামে ফুটবল একাডেমি তৈরি করে দিচ্ছেন প্রশিক্ষক। টুকু রহমান নিজের দৃঢ় বিশ্বাস ও পরিশ্রম দিয়ে গড়ে তোলার চেষ্টা করছেন খেলোয়াড়।

পঞ্চগড়ের টুকু ফুটবল একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা ও কোচ টুকু রহমান বাংলানিউজকে বলেন, আমি ২০১৬ সালে এই একাডেমি করেছি। এই একাডেমি করার পেছনের উদ্দেশ্য হলো যুব সমাজকে মাদকের হাত থেকে বাঁচিয়ে ক্রীড়া জগতে আনার। একই সঙ্গে স্বপ্ন ছিল জেলার প্রত্যন্ত গ্রামের তরুণ-তরুণী যারা শহরে এসে প্রশিক্ষণ নিতে পারে না তাদের জন্য কাজ করার। ইনশাআল্লাহ আমার এই একাডেমির মাধ্যমে আমি অনেককে প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। নিজের অভিজ্ঞতা ও খেলার প্রতি যে ভালোবাসা রয়েছে তা সবার মধ্যে ছড়িয়ে দিচ্ছি। আল্লাহ্ আমার স্বপ্ন পূরণ করেছে, যার ফল ইয়ারজান বেগম।

কোচ টুকু রহমান আরও বলেন, ইয়ারজান শুরু থেকেই অনেক ভালো খেলতেন। তিনি আসার পর নিয়মিত কঠোর অনুশীলন করেছেন। ২০১৭ সালে একাডেমিতে স্ট্রাইকার হিসেবে যোগ দেন। এরপর মাঠে ভালো খেলতো। পরে ডিফেন্সে খেলা শুরু করেন তিনি। এরপর ১৮ সালে পারিবারিক সমস্যায় টানা এক বছর তার একাডেমিতে আসা বন্ধ হয়ে যায়। তার সঠিক ঠিকানা না থাকায় তাকে খুঁজতে অনেক বেগ পেতে হয়েছে। এর মধ্যে এক বছর পর তাকে পেয়ে গোলরক্ষক হওয়ার পরামর্শ দিলে সে সেচ্ছায় গোলরক্ষক হয়। অবশেষে আজ সে তার কষ্টের ফল পেয়েছে। বিদেশের মাটিতে খেলে দেশের নাম উজ্জলসহ সেরা গোলরক্ষক হয়েছে। এখন সব খেলোয়াড় ও মেয়েদের অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছে ইয়ারজান বেগম। তবে সরকারিভাবে সাপোর্ট পেলে আরও ভালো খেলোয়াড় উপহার দেওয়ার কথা জানান এই প্রশিক্ষক।

এদিকে পঞ্চগড় জেলা ক্রীড়া কর্মকর্তা গৌতম কুমার সরকার বাংলানিউজকে বলেন, পঞ্চগড়ের গর্ব গোলরক্ষক ইয়ারজান বেগম। তিনি শুরু থেকে টুকু ফুটবল একাডেমিতে অনুশীলন করেছে। টুকু ফুটবল একাডেমিসহ জেলায় যে কয়েকটি একাডেমি রয়েছে আমরা তাদের সবার সঙ্গে যোগাযোগ করছি এমন ইয়ারজানদের তৃণমূল থেকে উঠিয়ে আনার জন্য বলছি। এর জন্য যত প্রকার সরকারি সহায়তার প্রয়োজন আমরা ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, জেলা প্রশাসন ও জেলা ক্রীড়া অফিস দেওয়ার চেষ্টা করব।

২০১৬ সালে এই একাডেমি চালু করেন খেলোয়াড় তৈরির কারিগর টুকু রহমান। প্রথম প্রথম এলাকাবাসী বিষয়টিকে সমালোচনার চোখে দেখলেও এখন একাডেমি ও খেলোয়াড় ইয়ারজান বেগমের এমন সফলতায় আনন্দিত সবাই।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৫৪ ঘণ্টা, মার্চ ২২, ২০২৪
এসএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।