ঢাকা: সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব অব্যাহত থাকলে প্রয়োজনে তা কিছু সময়ের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন আইনশৃঙ্খলাসংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভাপতি মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।
তিনি বলেন, যারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ করে, তাদের গুজব ছড়ানো বন্ধে ব্যবস্থা নিতে বলা হবে।
রোববার (৩১ মার্চ) সচিবালয়ে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভা শেষে মোজাম্মেল হক সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
মন্ত্রী বলেন, গুজব প্রতিরোধ ও সাইবার ক্রাইম নিয়ন্ত্রণে ওদের (ফেসবুক-ইউটিউব) হেড অফিস এখানে না থাকার কারণে বিভিন্ন বিষয়ে আমাদের সুপারিশ-কথা তারা শোনে না। তারা যে শুনছে না, তা আমরা পাবলিকলি প্রচার করব। প্রয়োজন হলে এসব কিছু সময়ের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হবে।
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক সংস্থাকে আগে প্রোপারলি নোটিফাই করব- আমাদের অভিযোগ যথাযথভাবে আমলে না নিয়ে তারা (সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম) এসব ক্রাইম, গুজব অব্যাহত রাখছে এবং তাদের পক্ষ থেকে (প্রতিরোধে) কোনো উদ্যোগ নেই। প্রথমে তাদের বারবার বলা হবে, দরকার হলে আমরা পত্রিকায় বিজ্ঞাপন আকারেও বলব, যেন এ কথা বিশ্ববাসীর মনে না হয়, এখানে মৌলিক অধিকার ব্যাহত হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, সোশ্যাল মিডিয়া (সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম) আইনের বিধানে রয়েছে- কোনো অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে হবে। তারা আমাদের অভিযোগগুলো তদন্ত করে ব্যবস্থা নিচ্ছে না। তাদের এ উদাসীনতা পাবলিক নোটিশের মাধ্যমে জনগণকে অবহিত করা হবে। যদি কখনো এগুলো বন্ধ হয়, দায়টা যাতে সরকারের ওপরে না আসে, তাদের ওপরই যাতে বর্তায়। তাদের আমরা কী অভিযোগ দিলাম, তা যেন মানুষ জানে, আমরা অভিযোগ করে প্রতিকার পাচ্ছি না।
উপজেলা নির্বাচন নিয়ে মোজাম্মেল হক বলেন, কমিটি মনে করে, দলীয় প্রতীক না থাকায় এবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বিব্রত পরিস্থিতিতে পড়তে হবে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠোরভাবে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে, কোনো প্রার্থী নিয়ম ও নির্বাচন কমিশনের আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে তারা যাতে শক্ত ভূমিকা পালন করে। উপজেলা নির্বাচনকে সামনে রেখে পর্যাপ্ত সংখ্যক ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেওয়ার জন্য জনপ্রশাসনমন্ত্রীকে বলা হয়েছে।
বিভিন্ন ভবনে অগ্নিকাণ্ড প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, ভবন নির্মাণের কোড মানা হচ্ছে না, এজন্য বিভিন্ন জায়গায় অগ্নিকাণ্ড ঘটছে। ভবন থেকে কেমিক্যাল (রাসায়নিক) সরানো হচ্ছে না। এসব বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে কমিটি। কেমিক্যাল যাতে দ্রুত সরানো হয়, সেজন্য শিল্পমন্ত্রী দ্রুত ব্যবস্থা নেবেন। ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে যাতে কোড মেনে চলা হয়, তা বলা হয়েছে।
তিনি বলেন, অগ্নিকাণ্ডের ক্ষেত্রে যারা দায়িত্ব অবহেলা করেছে, যারা অনুমোদন দিয়েছে, তাদের বিষয়ে খতিয়ে দেখার জন্য, তাদের শাস্তির আওতায় আনার জন্য বলা হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, মেয়র, পুলিশ এবং যারা হোটেল-রেস্তোরাঁর অনুমতি দেয়, তাদের নিয়ে দ্রুত এ রমজান মাসের মধ্যেই মিটিং করে আরও দিক-নির্দেশনা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে
আইনশৃঙ্খলাসংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভাপতি বলেন, অতীতের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, ফিটনেস নেই এমন গাড়ি ঈদের সময় চলাচল করে। এসব গাড়ি রাস্তায় গিয়ে বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে চলাচল ব্যাহত হয়। যাত্রীদের অনেক ভোগান্তি হয়। সেজন্য ফিটনেসবিহীন এসব গাড়ি যাতে চলাচল করতে না পারে, সেজন্য আগে থেকেই সতর্ক করা হবে। মিল-কলকারখানার শ্রমিকদের ছুটির পর একযোগে এসব গাড়ি ভাড়া করার তথ্য পাওয়া গেছে।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে অপরাধ বাড়ছে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নিতে কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করা হবে।
তিনি বলেন, বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিঘ্ন হওয়ার বিষয়টি উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। নিত্যপণ্যের মূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে বলা হয়েছে। তৃণমূল পর্যায়ে মাদকের বিস্তার ঘটেছে, এটি উদ্বেগের কারণ। শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এ বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮০৩ ঘণ্টা, মার্চ ৩১, ২০২৪
জিসিজি/আরএইচ