ঢাকা, বুধবার, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ০১ মে ২০২৪, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

কাফরুলে প্লটের মালিকানা নিয়ে দ্বন্দ্ব, পাল্টাপাল্টি অভিযোগ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৫৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ১, ২০২৪
কাফরুলে প্লটের মালিকানা নিয়ে দ্বন্দ্ব, পাল্টাপাল্টি অভিযোগ

ঢাকা: রাজধানীর কাফরুলের সেনপাড়ায় ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবিতে একটি বাড়ির সংস্কারকাজ বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। সোমবার (১ এপ্রিল) সেনপাড়ার ৩৭৯/১ নম্বর বাড়ির মালিক গোলাম কিবরিয়া এ অভিযোগ তোলেন।

তিনি দাবি করেন, বেলা ১১টার দিকে তার বাড়ির সামনে বনানী থানার ২০ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য রাবেয়া আক্তার, তার বোন জগেন ওরফে যোগী ও যোগীর ছেলে অপূর্বসহ লোকজন চাঁদা দাবি করেন এবং না দিলে বাড়ির সংস্কারকাজ বন্ধ করে দিতে বলেন।

এ বিষয়ে থানায় অভিযোগ দিয়েছেন বলে জানান গোলাম কিবরিয়া। তবে এ অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে রাবেয়া আক্তার বলেছেন, ওই জমি তাদের। আর চাঁদা দাবির অভিযোগের প্রমাণ দিতে হবে গোলাম কিবরিয়াকে।

গোলাম কিবরিয়ার দাবি, কাফরুলের সেনপাড়ায় ৩৭৯/১ নম্বর বাড়িটির পাওয়ার অব অ্যাটর্নি সূত্রে মালিক হন তিনি। বাড়িটি কেনার পর থেকে দুই বোন রাবেয়া ও যোগী তাকে চাঁদার জন্য তটস্থ রাখছিলেন। এর আগেও তাদের চাঁদার টাকা দিতে হয়েছে।  

গোলাম কিবরিয়া বলেন, গত ২ ফেব্রুয়ারি তারা আমার কাছে ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। পরে আমি নিরুপায় হয়ে থানায় জিডি করেছি। থানা থেকে বলা হয়, যোগী ও রাবেয়াকে আমার প্লটটির সামনে যেতে বারণ করা হয়েছে। কিন্তু ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেত্রী রাবেয়া ও তার বোন-ভাগ্নে মিলে ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবিতে আমাকে চাপ দিচ্ছেন। সোমবার বেলা ১১টার দিকে আমি রোডের সামনে গেলে রাবেয়া ও যোগীর নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা আবার চাঁদা দাবি করে। শেষে নিরুপায় হয়ে তখনই কাফরুল থানায় গিয়ে ওসি সাহেবকে বিষয়টি জানাই।  

কাফরুল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ফারুকুল আলম বাংলানিউজকে বলেন, আমি শুনেছিলাম আজ (সোমবার) সকালে কয়েকজন লোক জমি দেখতে গিয়েছিল। তাদের বাধা দেওয়া ও গন্ডগোলের বিষয় জেনেছিলাম। ওই বাড়ির ভাড়াটিয়াদেরও ঘর থেকে বের করে দিচ্ছে শুনেছি, আমি জানতাম না। আমি দ্রুতই ব্যবস্থা নিচ্ছি। ওখানে টিম পাঠাচ্ছি।  

এর আগে, গত ৩ ফেব্রুয়ারি কাফরুল থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন জমির মালিক গোলাম কিবরিয়া।  

জিডিতে ভুক্তভোগী বলেন, আমি বিগত ২ জুন ২০২১ তারিখে জমির প্রকৃত মালিক মো. হারুন অর রশিদের কাছ থেকে আম-মোক্তারনামা দলিল সূত্রে কাফরুল থানাধীন সেনপাড়া পর্বতাস্থ হোল্ডিং নং-৩৭৯/১ প্লটটি সেমিপাকা ঘরসহ মালিক হই। তখন থেকে আমি প্লটটি ভোগদখল করে আসছি। তবে অর্থাভাবে প্লটটিতে বহুতল ভবন নির্মাণ করিতে পারিনি। অতি সম্প্রতি কয়েকজন সিনিয়র সাংবাদিককে অংশীদার হিসেবে নিয়ে প্লটটিতে বহুতল ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নিই। কিন্তু প্লটটিতে সংস্কার কাজ শুরুর কথা জানতে পেরে গত ২ ফেব্রুয়ারি বিকেল ৩টার দিকে স্থানীয় নারী মাদক কারবারি, সন্ত্রাসী ও বিআরটিএর দালাল জগেন ওরফে যোগী (৪৫), তার ছেলে অপূর্ব (২২) এবং অজ্ঞাতনামা ৭-৮ জন লোক আমার ওই প্লটে এসে আমাকেসহ আমার লোকজনকে প্লটটিতে নির্মাণকাজ করতে নিষেধ করে। তাদের নিষেধ অমান্য করে প্লটটিতে নির্মাণকাজ করলে তারা আমাকে প্রাণনাশের হুমকিও দেয়। তখন আমরা ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে প্রাণভয়ে সেখান থেকে চলে আসি। আমি উচ্চ রক্তচাপের রোগী হওয়ায় ইতোমধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়েছি।  

গোলাম কিবরিয়ার কাছে ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বনানীর ২০ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য রাবেয়া আক্তার বাংলানিউজকে বলেন, আমি চাঁদা চাইনি। গোলাম কিবরিয়া প্রমাণ দেবেন, কবে কখন চাঁদা চেয়েছি। উল্টো তিনি আমাদের চাঁদা দিতে চান। তিনি প্রতিদিন আমাদের বাড়িতে লোক পাঠাচ্ছেন। এই জমি আমাদের।  

এক প্রশ্নের জবাব তিনি বলেন, তিনি থানায় অভিযোগ ও জিডি করে থাকেন, আমরাও থানায় অভিযোগ করেছি। আর জমির কাগজপত্র তাকে বা থানার কাউকে দেখাবো, এটা কোথায় লেখা আছে? আমার কাগজ যেখানে দেখানোর সেখানেই দেখাব। এই জমির মালিক তিনি একা নন, আরও অনেক মালিক আছে। তিনি আসল মালিক হলে কোর্ট থেকে কাগজপত্র নিয়ে এসে জমি নিয়ে যাক। আমাদের পেছনে না ঘুরে সরাসরি কোর্টের সাহায্য নিক।  

সোমবারের ঘটনার বিষয় জানতে চাইলে রাবেয়া বলেন, আপনি যদি গায়ে পড়ে এসে আমার বাসায় আমাকে বিরক্ত করেন তাহলে আমি তো ছাড়বো না কাউকে। চাঁদা চাইলে তো আমি তাকে ফোন দেব, তাকে ডিস্টার্ব করব। আমি চাঁদা আদায়ের জন্য মাস্তান পাঠাবো। তিনি আমাকে একের পর এক কাগজ দিয়েছেন। তিনি কাগজ রেডি করে আমার কাছে পাঠিয়েছেন, সব প্রমাণ আমার কাছে আছে। তিনি টাকা দেওয়ার জন্যও লোক পাঠান প্রতিদিন। আমি কারও টাকা অবৈধভাবে খাব না। বৈধভাবে আমি যে টাকা পাবো সেই টাকা নেব।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ০১, ২০২৪
এমএমআই/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।