ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

‘আঙ্গর তো পেট আছে, খামু কী?’

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ৮, ২০২৪
‘আঙ্গর তো পেট আছে, খামু কী?’

জামালপুর: ষাটোর্ধ্ব বিধবা শ্রমিক সুফিয়া বেগম। অতি দরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচি (ইজিপিপি) প্রকল্পে ‘১০ হাজার টাকা’ দিয়ে একটি কার্ড করেছিলেন।

গত মাসে কাজে যোগ দিয়ে ৩০ দিন সড়কের পাশে মাটি কাটার কাজ করেছেন তিনি।  কিন্তু এই নারী পারিশ্রমিক বা মজুরি পাননি। উল্টো পাওনা চাইতে গেলে হুমকি-ধামকি দেওয়া হয় তাকে। ঈদের আগে এ টাকা পেতে সংশ্লিষ্টদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন এ নারী।

শনিবার (৬ এপ্রিল) দুপুরে জামালপুর সদরের শাহবাজপুর ইউনিয়নে কথা হয় এ বৃদ্ধার সঙ্গে। কনকনে শীতে পানিতে নেমে মাটি কাটার পরিশ্রমের কথা স্মরণ করতে গিয়ে কেঁদেই দেন সুফিয়া বেগম।

তিনি বলেন, ‘৩০ দিন মাটি কাটছি। আগের বিল আট হাজার থেকে চার হাজার নিয়ে গেছে। পরের বিল আট হাজার। সেই টাকা আর দেয় নাই। মোবাইলে দেয় নাই। মেম্বারের বাড়িতে গিয়ে কানছি। তবুও আমাদের টাকার কোনো ব্যবস্থা তারা করে দিল না। ১০ হাজার টাকা দিয়ে কার্ড করছি। কার্ড কইরে ৪০ দিনের কাজ করছি। অর্ধেক বেতন আঙ্গরে দেয়, অর্ধেক বেতন মেম্বার-চেয়ারম্যানরা নিয়ে যায়গা। অর্ধেক দেয় না। এই ধাপের টাকা দেয় নাই। টাকা চাইতে গেলে আরও মারতে আসে। ’

তার মতো কাজ করে টাকা না পাওয়া আরও ১৭ জন শ্রমিকের একই অবস্থা। কাজ করেও বেতন না পেয়ে শ্রমিকরা মজুরি আত্মসাতের অভিযোগ তুলেছেন ওই ইউনিয়নের তিন ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে। এ ছাড়াও শ্রমিকের তালিকায় নাম লেখাতে অর্থ নেওয়ারও অভিযোগ করেন তারা। এ বিষয় নিয়ে গত ৪ এপ্রিল স্থানীয় প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ১৮ শ্রমিক।

ভুক্তভোগী শ্রমিকদের অভিযোগ, ইজিপিপি প্রকল্পে শ্রমিকের তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করতে প্রতিজনের কাছ থেকে আট থেকে দশ হাজার টাকা নেন ৬,৭ ও ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নিয়ামত আলী, আশরাফুল আলম ও মারফত আলী। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে শাহবাজপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন জায়গায় ইজিপিপি প্রকল্পের কাজ করার পর প্রথম ধাপের আট হাজার টাকা পান শ্রমিকরা। শ্রমিকের তালিকা থেকে নাম কেটে দেয়ার ভয় দেখিয়ে সেখান থেকে চার হাজার টাকা নিয়ে নেন এই তিন ইউপি সদস্য। এ ছাড়া দ্বিতীয় ধাপের কাজ কয়েক মাস আগে শেষ হলেও সেই মজুরি এখনো না পাওয়ার অভিযোগ হতদরিদ্র শ্রমিকদের।

জহিরন বেগম নামে এক শ্রমিক বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। ঈদ আইতাছে, পোলাপানের কাপর কিনমু, চিনি-সেমাই কিনমু। অহন পোলাপানের মুখে আমরা দিমু কী? আমরা নিজে খামু কী? আঙ্গর তো পেট আছে। আমরা পেট ছাড়া না তো। আমরা চেয়ারম্যান-মেম্বাররে জানাইছি। চেয়ারম্যান-মেম্বার বলছে, দিমু দিমু। মিছা কথা কয়ে আঙ্গরে এই পর্যন্ত রাখল। ’

মোছা. হামিদা বেগম নামে আরেক শ্রমিক বলেন, ‘আট হাজার টাকা দিয়ে কার্ড করছি। তার বিনিময়ে কাজ করছি। যদি টাকা না দেই, তাইলে বলে যে- আঙ্গর নাম বাদ দিয়া দিব। নাম কাইটে দিব। ফিল্ডে নামতে দিব না। এই অত্যাচার করে। আমরা যদি রাতে টাকা তুইলে আনি, পরের দিন সকালে টাকা দিয়ে দেই। এইবার আমরা টাকা দেওয়ার পরেও পরেরবারের টাকাটা আমরা পাইতাছি না। পরের বিলটা আঙ্গরে দিতাছে না। এই জন্য আমরা এটা অভিযোগ জানাইছি। ’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে তিন ইউপি সদস্যের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছে। তবে তারা সাড়া দেননি।

তবে বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন স্থানীয় চেয়ারম্যান। শাহবাজপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আয়ুব আলী খান বলেন, ব্যাংক থেকে টাকা সরাসরি তাদের অ্যাকাউন্টে চলে যায়। নিশ্চয় তারা টাকা পাওয়ার কথা। এক্ষেত্রে ওয়ার্ড মেম্বাররা কোথাও কোনো অনিয়ম করে থাকলে আইনি ব্যবস্থা আমি নেব।

জামালপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মেহনাজ ফেরদৌস বলেন, আমি অবশ্যই দেখব বিষয়টি। স্থানীয়ভাবে আমি খোঁজ নেব। আর যদি কোনো অভিযোগ পাই। তাহলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ২০১৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ৮, ২০২৪
আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।