ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ঈদ আনন্দে মেতেছে আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দারা

মোমেনুর রশিদ সাগর, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৫১ ঘণ্টা, এপ্রিল ৯, ২০২৪
ঈদ আনন্দে মেতেছে আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দারা

গাইবান্ধা: দীর্ঘ দিন আশ্রয়হীনতা থেকে মুক্তির পর স্বপ্নের নতুন ঘরে ঈদ আনন্দে মেতেছে আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দারা।  

সোমবার (৮ এপ্রিল) বিকেলে গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার হোসেনপুর ইউনিয়নের শাইনদহ গ্রামে নির্মিত আশ্রয়ণ প্রকল্প ঘুরে দেখা যায়।

বিস্তৃর্ণ সরকারি খাস জমিতে সাাঁড়িবদ্ধভাবে গড়ে তোলা হয়েছে কলোনি। সেখানে বসবাস করছেন ৩৮টি পরিবার।  

কয়দিন আগেও তারা ছিলেন ভূমিহীন। দিন শেষে পরিবার নিয়ে রাত কাটতো অন্যের আশ্রয়ে। সেই মানুষগুলো পেয়েছেন জমিসহ নতুন বাড়ি। এখানে ঈদ উদযাপনে মেতেছেন আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দারা।

সরেজমিনে দেখা যায়, প্রত্যেক পরিবারের জন্য রয়েছে দুই কক্ষ বিশিষ্ট সেমিপাকা ঘর। রান্নাঘরসহ রয়েছে স্যানেটারি সুবিধা। আছে বারান্দও। প্রতিটি ঘর-সামনের জমিটুকু মনের মাধুরি দিয়ে সাজিয়েছেন তারা। বাড়ির উঠান গড়ে তুলেছেন সবজি বাগানে। সেখানে ফলছে লাউ-সিমসহ নানা রকম মৌসুমি সবজি। কলোনির সড়কের দুধারে রোপিত আম গাছ গুলোতে দুলছে আম।  

নান্দরিক এ বাড়িতে ঈদ উদযাপন তাদের উচ্ছাস-আনন্দকে বাড়িয়ে দিয়েছে বহুগুণে। ঈদের কয়েকদিন আগে থেকেই আত্মীয়-স্বজনরা উপহার সামগ্রী নিয়ে আসছেন শুভেচ্ছা বিনিময় করতে।

কলোনির তিন নম্বর ঘরের বাসিন্দা মোকসেদ আলম ও  সাহেরা বেগম দম্পতি। তাদের মেয়ে আখি মনির বিয়ে হয়েছে পলাশবাড়ী পৌরশহরের জামালপুর গ্রামে। স্বামী নাইজুল ইসলাম একজন পরিবহন শ্রমিক। মেয়ে আখি মনি এসেছেন ঈদ উপহার হিসেবে বাবার জন্য পাঞ্জাবি, মায়ের জন্য শাড়ি নিয়ে। মেয়ের উপহার পেয়ে তাদের আনন্দের সীমা নেই। মেয়েরর দেওয়া নতুন পাঞ্জাবি গায়ে দিয়ে আবেগে আপ্লুত বাবা।

মোকসেদ আলম ও  সাহেরা বেগম দম্পতি বলেন, জীবনভর অন্যের আশ্রয়ে জীর্ণ ঘরে থাকতে হয়েছে। শেষ জীবনে এসে নিজের স্থায়ী ঠিকানা খুুঁজে পেয়িছি। এ সুখের অনুভূতি প্রকাশ করার মত নয়।  

পাঁচ নম্বর ঘরের বাসিন্দা মতিয়ার রহমান ও মৌসুমি দম্পতি জানান, ইউনিয়নের রামকৃষ্ণপুর গ্রামে তাদের নিজস্ব জমি বা ঘর কিছুই ছিল না। অন্যের আশ্রয়ে থেকে দিনমজুরি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন তারা। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ঘরহীন-ভূমিহীন মানুষদের কথা চিন্তা করে আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছেন। ফলে আমাদের মত ছিন্নমূল পরিবার গুলো সম্মানের সঙ্গে মাথা গোঁজার ঠাঁই পেয়েছি। সেই ঠিকানায় ঈদ উদযাপন অনেক সৌভাগ্যের।

একই চিত্র আশ্রয়ণ কেন্দ্র জুড়ে। সবার চোখে-মুখে খুশির ঝিলিক। তবে ছোট-খাট কিছু অভিযোগও আছে তাদের।  

আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দারা অভিযোগ করে জানান, বাসস্থান মিললেও মিলছে না তাদের কাঙ্খিত কর্ম-খাদ্যের চাহিদা। অধিবাসীদের অনেকে বয়সের ভারে নূয়ে পড়েছেন। যাদের শ্রম বিক্রি করার শক্তি-সামর্থ আছে, তাদের আবার কাজে নিতে চাননা এলাকার সামর্থবানরা। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দাদের কাজে নেন তারা। আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দাদের কৃষিকাজসহ অন্যান্য কাজে দিনমজুর হিসেবে নিতে চান না কারণ তাদের সবাই ইউনিয়নের অন্যান্য গ্রাম থেকে এসেছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সরকারি যে খাস জমিতে আশ্রয়ণ প্রকল্পটি নির্মিত হয়েছে এক সময়ে এই জমি ছিল স্থানীয়দের ভোগ-দখলে। তা হাতছাড়া হওয়ার কারণে কলোনির বাসিন্দাদের প্রতি আক্ষেপ রয়েছে সাবেক ভোগ দখলকারীদের।

ভুক্তভোগীরা আরও জানান, সরকারি বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধায় তাদের অন্তর্ভূক্তি সন্তোসজনক নয়। এমনকি ঈদের আগে দশ কেজি করে ভিজিএফের চাল বিতরণ করা হলেও তাদের অধিকাংশরাই চাল পাননি।

হোসেনপুর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান তৌফিকুল আমিন মণ্ডল টিটু বলেন, সুযোগ পেলেই আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দাদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার আওতায় আনা হচ্ছে। এছাড়া প্রতিবছর আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দাদের ভিজিএফের চাল নিশ্চিত করার পরই বাইরে চাল বিতরণ করা হয়। এ বছর কিছুটা ব্যত্যয় ঘটেছে আগামীতে যাতে এমনটা না হয় সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখা হবে।

পলাশবাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার কামরুল হাসান জানান, এ ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫১ ঘণ্টা, এপ্রিল ৯, ২০২৪
এসএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।