ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

জৌলুস হারিয়েছে হালখাতা, এবার শুধু নামমাত্র আয়োজন

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০২ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৩, ২০২৪
জৌলুস  হারিয়েছে হালখাতা, এবার শুধু নামমাত্র আয়োজন

নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জে উকিলপাড়া, থানা পুকুরপাড় মসজিদ মার্কেটসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে এক সময় বেশ আয়োজনে হালখাতা উৎসব উদযাপন হলেও এখন আর সেই জৌলুস নেই। জৌলুস হারালেও শুধুমাত্র ঐতিহ্য রক্ষায় জেলার কোথাও কোথাও হালখাতার আয়োজন করা হবে।

বাঙালি সংস্কৃতির সবচেয়ে বড় উৎসব পহেলা বৈশাখ বা বাংলা নববর্ষ। আর বর্ষবরণের অন্যতম অনুষঙ্গ হলো ঐতিহ্যবাহী হালখাতা। এদিন ব্যবসায়ীরা লাল মলাটের নতুন খাতায় নতুন বছরের হিসাব শুরু করেন।  

বিশেষ করে তারা এ দিনটির জন্য অপেক্ষা করে থাকেন। কারণ, বছরের প্রথম দিনটিতে ব্যবসায়ী-ক্রেতাদের মধ্যে দেনা-পাওনার হিসেব হয়। দুপক্ষের মধ্যে বিশ্বাস, আস্থা ও গভীর সম্পর্কের মূল ভিত্তি এ হালখাতা।

শুধু এসবেই নয়, হালখাতা সৌজন্য প্রকাশের একটি মাধ্যম। পহেলা বৈশাখে ছোট ব্যবসায়ীরা মহাজনদের পাওনা পরিশোধ করেন। বাঙালির চির চেনা মিলনমেলার উৎসব হালখাতা উদযাপনের দৃশ্য এখন আর কার্যত দেখা যায় না। প্রযুক্তির বাড়তি ব্যবহার আর পারস্পরিক আস্থার সংকটে ঐতিহ্যবাহী এ সৌহার্দ্য অনেকটাই রং হারিয়েছে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, জৌলুস না থাকলেও জেলার ব্যবসায়ীরা ঐতিহ্য হিসেবে হালখাতা উদযাপন করেন। মূলত ব্যবসায়ীরা অতীতের মতো এখন বকেয়া পরিশোধ না করায় এ আয়োজনও পিছিয়ে পড়েছে। এ ছাড়া বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা তো আছেই।  

শনিবার শহরের উকিলপাড়া, দেওভোগ, থানা পুকুরপাড় মার্কেটের বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ঘুরে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।  

দেখা গেছে, এ বছর পয়লা বৈশাখ নিয়ে আলাদা কোনো আয়োজন নেই ব্যবসায়ীরা। অথচ এক সময় বৈশাখ এলে ব্যবসায়ীরা দোকান-পাট পরিষ্কার, রং করাসহ বিভিন্ন সাজসজ্জা নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন। ব্যবসায়ীদের মনে নেই কোনো উৎসবের আমেজ।  
টালি খাতার দৃশ্য কিংবা পাটি ব্যবসায়ীদের হাঁক ডাকও চোখে পড়েনি। হালখাতা উপলক্ষে ব্যবসায়ীদের আমন্ত্রণ পত্র ছাপানো, মিষ্টির অর্ডারও কমে গেছে। মোট কথা হালখাতা নিয়ে কোনো উৎসবের আমেজ নেই এসব বাজারে। এবার মূলত ঐতিহ্য রক্ষায় নামমাত্র হালখাতা করবেন ব্যবসায়ীরা।

শহরের স্বর্ণপট্টি এলাকার ব্যবসায়ী সাগর ঘোষ বলেন, এ বছর পহেলা বৈশাখ বা হালখাতা উদযাপন নিয়ে তেমন কোনো আয়োজন নেই। মাত্র দুদিন আগেই ঈদ গেল। বকেয়া নিয়ে এখন কম ভাববে মানুষ। তাই আয়োজন নেই বললেই চলে। তবে ঐতিহ্য হিসেবে পহেলা বৈশাখের দিন দোকানে গণেশ পূজাসহ নতুন খাতা খোলা হবে। নতুন খাতা খোলা হলেও খাতা ফাঁকাই থেকে যাবে। গত তিন বছরের বকেয়া উঠছে না। এভাবে চললে পুঁজি হারিয়ে দেউলিয়া হয়ে যাবেন ব্যবসায়ীরা।

আরেক ব্যবসায়ী আশুতোষ বলেন, পহেলা বৈশাখে আমরা হালখাতা অনুষ্ঠান করি। নতুন খাতায় নতুন বছরের হিসাব তুলি। হালখাতার দিন সকালে গণেশ পূজার মধ্য দিয়ে দিন শুরু হয়। সারাদিন গ্রাহদের মিষ্টি মুখ করিয়ে সন্ধ্যার পর অনুষ্ঠান শেষ হয়। তবে বৈশাখ মাসব্যাপী আমাদের গ্রাহকরা আসেন তাদের পুরনো লেনদেনের হিসাব শেষ করতে। সারা বছর যারা বাকিতে  কেনেন, তারা বৈশাখের প্রথম দিন প্রায় সব বকেয়া পরিশোধ করেন। কিন্তু এবার ঈদের পরপর হওয়ায় গ্রাহকের সাড়া কম। সেজন্য হালখাতার আয়োজনও ছোট করে করেছি। মানুষের কাছে টাকা নেই। গত চার বছর ধরে বকেয়া তুলতে পারছি না। এ বছরও বকেয়ার খাতা ফাঁকা থেকে যাবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৩, ২০২৪
এমআরপি/আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।