ঢাকা: শুরু হলো ১৪৩১ সনের বাংলা নববর্ষের মঙ্গল শোভাযাত্রা। রোববার (১৪ এপ্রিল) পহেলা বৈশাখে সকাল সোয়া ৯টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামালের নেতৃত্বে মঙ্গল শোভাযাত্রাটি বের হয়।
শোভাযাত্রাটি ঢাকা ক্লাব ও শিশুপার্কের সামনে হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) গিয়ে শেষ হবে। বিকেল পাঁচটায় নববর্ষের কার্যক্রম শেষ করবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রতিপাদ্য করা হয়েছে ‘আমরা তো তিমিরবিনাশী’। কবি জীবনানন্দ দাশের কবিতার পঙতি থেকে এবারই প্রথম প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে মঙ্গল শোভাযাত্রার।
জীবনানন্দ দাশের কবিতা থেকে এবারের প্রতিপাদ্য নির্ধারণের বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন বলেন, আমরা এযাবৎ মঙ্গল শোভাযাত্রায় যত প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করেছি, তা সবই বিভিন্ন কবি-সাহিত্যিকদের লেখা থেকে নেওয়া। তবে এবার খেয়াল করলাম যে আমাদের সাহিত্যের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কবি জীবনানন্দের কোনও পঙক্তি কখনোই ব্যবহার করা হয়নি। তাই এবার কবির ‘তিমির হননের গান’ কবিতার একটি লাইন আমরা প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করেছি। এটি তরুণ প্রজন্মের মুখে উচ্চারিত হবে। এবারের প্রতিপাদ্য ‘আমরা তো তিমির বিনাশী’।
ইমেরিটাস অধ্যাপক হাশেম খান বলেন, অশুভ শক্তি এখনো নানাভাবে আমাদের এগিয়ে চলায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে চলেছে। মুক্তিযুদ্ধের মধ্যে যে বাংলাদেশ আমরা পেয়েছি, সেই বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে হবে অসাম্প্রদায়িক চেতনায়। তরুণদেরই অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে। পাকিস্তান আমলে বাঙালি সংস্কৃতি নিয়ে যে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছিল, তার প্রতিবাদে বাংলা বর্ষবরণ শক্তি যুগিয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ষাটের দশকে বাঙালি সংস্কৃতির ওপর নানা রকম ষড়যন্ত্র রুখে দিতেই নবোদ্যমে বর্ষবরণ শুরু হয়। সেই ধারাবাহিকতায় মঙ্গল শোভাযাত্রাও শুরু হয়। অশুভ শক্তিকে প্রতিহত করার অঙ্গীকার করা হয় এ মঙ্গল শোভাযাত্রায়।
শোভাযাত্রায় আবহমান বাংলার ইতিহাস-ঐতিহ্যের সঙ্গে সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহের প্রতীকী উপস্থাপনের নানা বিষয় স্থান পেয়েছে। অসাম্প্রদায়িক চেতনার প্রাণের উৎসব বর্ষবরণ। বাংলা বর্ষবরণে বাঙালির নানা আয়োজনের মধ্যে মঙ্গল শোভাযাত্রা অন্যতম। গত তিন দশক ধরে প্রতি বছরই পহেলা বৈশাখে চারুকলার শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হচ্ছে। ২০১৬ সালে ইউনেসকোর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতি পায় এই শোভাযাত্রা।
অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে কঠোর নিরাপত্তার চাদরে মোড়ানো রয়েছে পুরো এলাকা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সর্বোচ্চ উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। নিরাপত্তার স্বার্থে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পর্যাপ্ত সিসি ক্যামেরা ও আর্চওয়ে স্থাপন করা হয়েছে। শোভাযাত্রায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন স্তরের মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিয়েছেন। এ ছাড়া ভিন্ন দেশের নাগরিকদেরও দেখা গেছে মঙ্গল শোভাযাত্রা অংশ নিতে।
১৯৮৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে শুরু হয়েছিল শোভাযাত্রা। তখন এটি ‘আনন্দ শোভাযাত্রা’ নামে পরিচিত ছিল। চারুকলা ইন্সটিটিউটের শিক্ষক শিক্ষার্থীরা পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে এই আনন্দ শোভাযাত্রা বের করে। শোভাযাত্রায় থাকে বিশালকায় চারুকর্ম, পাপেট, হাতি ও ঘোড়াসহ বিচিত্র সাজসজ্জা। পহেলা বৈশাখ উদযাপন উপলক্ষে আনন্দ শোভাযাত্রা শুরু থেকেই জনপ্রিয়তা পেয়ে যায়। এরপর চারুকলার এই আনন্দ শোভাযাত্রা মঙ্গল শোভাযাত্রা হিসেবে নাম পায়।
বাংলাদেশ সময়: ০৯২২ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৪, ২০২৪
এইচএমএস/আরএইচ