ঢাকা, শনিবার, ৬ পৌষ ১৪৩১, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

চেয়ারম্যান গ্রেপ্তার না হওয়ায় ক্ষোভ নিহত দুই কিশোরের বাবার

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৪৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৬, ২০২৪
চেয়ারম্যান গ্রেপ্তার না হওয়ায় ক্ষোভ নিহত দুই কিশোরের বাবার কথা বলছেন দুই কিশোরের বাবা শাহজাহান খান। ইনসেটে অভিযুক্ত চেয়ারম্যান শাহ মো. আসাদুজ্জামান তপন

ফরিদপুর: ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার ডুমাইন ইউনিয়নের পঞ্চপল্লীতে গুজব ছড়িয়ে দুই সহোদর কিশোর শ্রমিককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় আলোচনায় ওই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান শাহ মো. আসাদুজ্জামান তপন। আগে থেকেই নানা কারণে আলোচিত-সমালোচিত এই চেয়ারম্যান।

দুই কিশোরের বাবা শাহজাহান খানের দাবি, চাঁদা না দেওয়ার কারণেই হত্যা করা হয় তার দুই সন্তানকে। আর নেতৃত্বে ছিলেন চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান তপন ও স্থানীয় ইউপি সদস্য (মেম্বার) অজিত কুমার সরকার। তারা এখনো গ্রেপ্তার না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন শাহজাহান খান।

সরেজমিনে ডুমাইন ইউনিয়ন ঘুরে জানা যায়, দখল-চাঁদাবাজিতে আগে থেকেই আলোচনায় ছিলেন ডুমাইন ইউপি চেয়ারম্যান শাহ মো. আসাদুজ্জামান তপন। এলাকায় নিজস্ব বাহিনী দিয়ে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন নিয়ন্ত্রণ। তার দখলবাজিতে কেউ প্রতিবাদ করলেই চালাতেন নির্যাতন। অনেকে তার নির্যাতনে এলাকাছাড়া হয়েছেন।

সালিশ বাণিজ্য করেও টাকা আয় করতেন এই চেয়ারম্যান। ২০২৩ সালের ৪ মে সরকারের আশ্রয়ণ প্রকল্পে বাধা ও ইউএনওকে মারধর করে হন বরখাস্ত। তবে উচ্চ আদালতের আদেশে পরে পদে ফেরেন। এছাড়া ইউনিয়ন পরিষদের নানা প্রকল্প বাস্তবায়নেও রয়েছে অনিয়মের অভিযোগ।

গত ১৮ এপ্রিল পঞ্চপল্লীতে মন্দিরে আগুন দেওয়ার অভিযোগ তুলে গুজব ছড়িয়ে পাশে কর্মরত নির্মাণশ্রমিকদের মারধরের সময় ঘটনাস্থলে দেখা যায় ইউপি চেয়ারম্যান তপনকে। তবে মামলা হওয়ার পর থেকে তিনি পলাতক বলে জানিয়েছে পুলিশ।

সেদিনের ঘটনার বিষয়ে উপজেলার নওপাড়া ইউনিয়নের চোপেরঘাট গ্রামের বাড়িতে দুই কিশোর শ্রমিকের বাবা শাহজাহান খান বলেন, ঘটনার কয়েকদিন আগে আমার ছেলে আমাকে মোবাইলে জানিয়েছিল সেখানে (নির্মাণকাজের জায়গায়) ঝামেলা হয়েছে। স্থানীয় মেম্বার (অজিত কুমার সরকার) চাঁদা চেয়েছিলেন (ঠিকাদারের কাছে)। এ নিয়ে তাদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা হয়। এরপরই ঘটে হামলার ঘটনা।

শাহজাহান খান বলেন, প্রথমে আমার ছেলেকে মারপিট শুরু করেন চেয়ারম্যান তপন। এরপর অজিত মেম্বারসহ সবাই তাদের মারপিট করে। চাঁদা না দেওয়াতেই আমার সন্তানদের পিটিয়ে হত্যা করে। আমরা ভিডিওতে দেখেছি তপন চেয়ারম্যানের নেতৃত্বেই এ হামলা চালানো হয়।  

তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এখন পর্যন্ত তপন চেয়ারম্যান ও অজিত মেম্বারকে পুলিশ গ্রেপ্তার করতে পারেনি। দ্রুত তাদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবি জানাই।

চোপেরঘাট গ্রামের বাসিন্দা রিজিয়া বেগম বলেন, আমাদের দুই সন্তানকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে অজিত মেম্বারসহ স্থানীয়রা হামলা চালায়। তপন চেয়ারম্যান এর আগেও অনেক ঘটনা ঘটিয়ে পার পেয়ে গেছে। চেয়ারম্যান ও মেম্বারকে দ্রুত গ্রেপ্তার করা হোক।

স্থানীয় বাসিন্দা রাশেদুল ইসলাম বলেন, এর আগে আশ্রয়ণ প্রকল্পের নির্মাণকাজে বাধা দেন তিনি। চেয়ারম্যান ও তার লোকজন ইউএনওর ওপর হামলাও চালান। ওই মামলায় তিনি গ্রেপ্তারও হন। পরে জামিনে বের হয়ে এসে পুনরায় স্বমহিমায় আবির্ভূত হন।

স্থানীয় একাধিক বাসিন্দা অভিযোগ করে বলেন, এলাকায় তপন চেয়ারম্যানের নিজস্ব বাহিনী রয়েছে। বিভিন্ন অপকর্ম করলেও ভয়ে তার বিরুদ্ধে কেউ কথা বলে না। দখল-চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্ম তিনি চালিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়া মোবাইল ব্যাংকিং প্রতারক চক্রের হোতা তিনি। প্রতারক চক্রের কোনো সদস্য সমস্যায় পড়লে তাৎক্ষণিকভাবে তিনি তাদের পাশে দাঁড়িয়ে বাঁচিয়ে নেন। এখান থেকেও বিপুল অংকের অর্থ ঢোকে তার পকেটে।

গত ১৮ এপ্রিল সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে মধুখালীর ডুমাইনের পঞ্চপল্লিতে কালি মন্দিরে আগুন দেওয়ার সন্দেহে গুজব ছড়িয়ে বাঁশ, লাঠি ও রড দিয়ে পিটিয়ে ও ইট দিয়ে থেতলিয়ে দুই কিশোর সহোদর শ্রমিক আশরাফুল খান (১৭) ও আরশাদুল খানকে (১৫) হত্যা করা হয়। গুরুতর জখম করা হয় আরও পাঁচজনকে। তারা সেখানে পঞ্চপল্লী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শৌচাগার নির্মাণে কাজ করছিলেন। এ ঘটনায় চারটি মামলা করা হয়েছে। এ পর্যন্ত ১৫ আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

গত ২১ এপ্রিল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ১৫ ও ৪৩ সেকেন্ডের দুটি ভিডিও চিত্রে দেখা যায়, এক ব্যক্তিকে স্কুলের কক্ষে মেঝেতে ফেলে পেটানো হচ্ছে। এ সময় ডুমাইন ইউপি চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান তপন ও মেম্বার অজিত কুমার সরকার মারপিট করছিলেন দেখা যায়।

ওই ভিডিও প্রকাশের পর ইউপি চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান তপন ও অজিত কুমার গা ঢাকা দিয়েছেন। স্থানীয় এলাকাবাসীর দাবি, দ্রুত ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বারকে গ্রেপ্তার করা হোক।

এ বিষয়ে ফরিদপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ মোর্শেদ আলম বলেন, হামলার ঘটনায় চারটি মামলা হয়েছে। ডুমাইন ইউপি চেয়ারম্যান ও সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের মেম্বারসহ জড়িতদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালানো হচ্ছে।

জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. কামরুল আহসান তালুকদার জানান, এ ঘটনায় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. আলী সিদ্দিকীকে প্রধান করে তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্তের কাজ চলমান রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ২১৪৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৬, ২০২৪
এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।