ঢাকা: আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পরামর্শে বিদ্যুৎ, গ্যাস, ও স্যার থেকে দাম না বাড়ানোর দাবি জানিয়েছে বক্তারা। তারা বলেন, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও স্যারের মূল্যবৃদ্ধির ফলে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে।
আইএমএফ-এর পরামর্শ মোতাবেক আবারও বিদ্যুৎ, গ্যাস ও সার থেকে ভর্তুকি প্রত্যাহারে মানুষের দুর্ভোগ আরও বাড়বে।
রোববার (২৭ এপ্রিল) বিকেলে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে সিএ ভবনে 'প্রি বাজেট ডিসকাশন হাইলাইটিং ইনকাম ট্যাক্স, ভ্যাট, কাস্টমস ডিউটি সেক্টর ওয়াইজ অ্যালেকেশন অফ বাজেট, এক্টার্নাল ডেবিট, ইটিসি' শীর্ষক আলোচনায় বক্তারা এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানের আয়োজন করে আইসিএএম।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সাবেক পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, দেশে ব্যবসা বাণিজ্যে কর ছাড়ের হার অন্য যেকোনো দেশের চেয়ে বেশি। এত কর ছাড় থাকা উচিত নয়। রাজস্ব বোর্ডের উচিত যথার্থভাবে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে, প্রয়োজনে স্বাধীন প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে পর্যালোচনা করে হিসেব করে দেখতে পারে কর ছাড়ের (ট্যাক্স এক্সামশন) ফলে কত টাকা সরকারকে দিতে হয়নি। এ সময়ে তারা কতটা মুনাফা পেয়েছে, ট্যাক্স দিতে হলে কত টাকা দিতে হতো, সেই টাকাটা পুনঃনিয়োগ হয়েছে কিনা দেখতে পারে। যদি সেই টাকা দেশে বিনিয়োগ না হয়ে থাকে তাহলে এসব প্রতিষ্ঠানকে চিরকাল কর ছাড় দিলেও কোনো লাভ হবে না।
তিনি বলেন, ভ্যাট হার বেশি হওয়ার কারণে ভ্যাট দিতে মানুষ কম উৎসাহ দেখায়। ১৫ শতাংশ, ১০ শতাংশ ও ৭ শতাংশ- ভ্যাটের এই তিনটি স্তর করা যেতে পারে। ভ্যাট বেশি হওয়ায় মানুষ আন্ডা্রহ্যান্ডস লেনদেন করে।
কর রেট না বাড়িয়ে নেট বাড়ানোর পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, রাজধানীতে অনেক বাড়িওয়ালা আছে তাদের যে আয় তা কর দেওয়ার উপযুক্ত কিন্তু কীভাবে ম্যানেজ করে পার পেয়ে যান। বাংলাদেশের মতো বিশ্বের কোথাও ট্যাক্স ফাঁকি দেওয়া হয় না।
সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী ফল, সবজির ওপর ট্যাক্স বসানোর প্রস্তাব করে বলেন, মাছ চাষ, বাগান করা এবং কর্পোরেট পোল্ট্রির মতো খাতে ট্যাক্স বসানোর মাধ্যমে এখন রাজস্ব বাড়ানোর সময় এসেছে।
তিনি বলেন, যার টিআইএন আছে তারই উচিত আয় করা রিটার্ন দেওয়া।
দ্বৈত নাগরিকরা দেশ থেকে টাকা পাচার করছে উল্লেখ করে এই সাবেক প্রতিমন্ত্রী বলেন, গুলশান-বনানীর অনেকে বিদেশে গিয়ে স্থায়ী হয়ে দেশে ফিরে এসে শত শত কোটি টাকার সম্পত্তি বিক্রি করে হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে নিয়ে চলে যায়। বিদেশে স্থায়ী হওয়া কোনো ব্যক্তি দেশে ফিরে কমপক্ষে পাঁচ বছর না থাকলে তাকে দেশে জমি-সম্পত্তি ক্রয় বা বিক্রয়ে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া প্রয়োজন।
তিনি বলেন, ডলার সংকটের কারণে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা তাদের মুনাফা দেশে নিয়ে যেতে পারছে না। এ নিয়ে নেতিবাচক খবর হচ্ছে। যা বৈদেশিক বিনিয়োগের ক্ষেত্রে প্রভাব পড়ছে।
ইকোনমিক রিপোটার্স ফোরামের (ইআরএফ) সভাপতি মো. রেফায়েত উল্লাহ মীরধা বলেন, ২৫ শতাংশ ব্যবসায়ী সব ক্ষেত্রে অবদান রাখছেন বলে বাজেটে সুবিধা নেন। আপনারা সুবিধা নেন, দেশে শিল্পায়ন করেন। এতে আমাদের কোনো বাধা নেই। কিন্তু বাকি ৭৫ শতাংশ মানুষ সরকারের কাছে থেকে কী পাচ্ছে, একবার ভেবে দেখেছেন! তাদের রক্ত ছেঁকে সরকারকে দিয়ে যাচ্ছে কিন্তু সরকারের কাছে থেকে কিছুই পাচ্ছে না।
আমরা জানি, সরকার সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় বিভিন্ন সহায়তা দিচ্ছে। ব্যবসায়ীরা নানাভাবে নানা ধরনের সুবিধা আদায় করছে। কিন্তু মধ্যম আয়ের এই ৭৫ শতাংশ মানুষ সরকারের কাছ থেকে কিছুই পাচ্ছে না। দেশের এই বিপুল জনগোষ্ঠী উৎপাদনশীলতার সঙ্গে যুক্ত। অবসরে যাওয়ার আগে জীবনের সর্বস্ব নিংড়ে দিয়ে যাচ্ছে। তারপর অসহায় জীবন যাপন করছে, আমরা কি তাদের কিছু দিতে পারছি, পারছি না।
২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১২ ঘণ্টাই কাজ করছে, তার কোনো অবসর নেই। দিন শেষে তাদের কি দিচ্ছেন, কিছুই না। বিধবা ভাতা দিচ্ছেন, বয়স্কভাতা দিচ্ছেন-এটা খুবই ভালো। কিন্তু যারা উৎপাদন করছে, সেবা দিচ্ছে অর্থনীতির চাকা সচল রাখছে তাদের জন্য কিছু করতে হবে। আগামী বাজেটে এই সব মানুষের জন্য কিছু করতে হবে।
গত শুক্রবার খবর হয়েছে আইএমএফ বলেছে বিদ্যুৎ, গ্যাস ও সারের ওপর থেকে ভর্তুকি তুলে নিতে হবে। আইএমএফ যা বলে তাই শুনতে হবে? প্রশ্ন রেখে ইআরএফ সভাপতি বলেন, বিদ্যুৎ-গ্যাসের দাম বাড়িয়ে মানুষকে নিঃস্ব করে দেওয়া হয়েছে। সারের দাম অনেক বাড়ানো হয়েছে আর না। কৃষক আর নিতে পারবে না।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের ( পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর। আইসিএম-এর সাবেক সভাপতি হুমায়ুন কবিরের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন পিআরআই এর জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ আশিকুর রহমান, এনবিআরএর সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ, সাবেক অর্থসচিব মাহবুবুর রহমান, এনবিআর এর সাবেক সদস্য আমিনুর রহমান, বিকেএমইএ নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, সাংবাদিক এসএম রাশিদুল ইসলাম প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ২২৫০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৮, ২০২৪
জেডএ/আরএ