ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

কেউ ট্রেনিংয়ে, কেউ ছুটিতে

শিক্ষকশূন্য প্রাথমিকের ক্লাস নিয়েছেন দপ্তরি

অতিথি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৩২ ঘণ্টা, মে ৭, ২০২৪
শিক্ষকশূন্য প্রাথমিকের ক্লাস নিয়েছেন দপ্তরি

সাভার: ধামরাই উপজেলার রোয়াইল ইউনিয়নের ৯৭ নম্বর রোয়াইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তিন ধরে কোনো শিক্ষক নেই। কেউ ছুটিতে গেছে, কেউ রয়েছেন ট্রেনিংয়ে।

এতে শিক্ষার্থীদের পাঠদানে অসুবিধা হওয়ার কথা। কিন্তু সে সমস্যার সমাধান করেছেন হযরত আলী। তিনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির দপ্তরি। শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের পাঠদান তিনি করিয়েছেন। গত দুদিন দাপ্তরিক ও পাঠদান শেষে মঙ্গলবার (৭ মে) নিজেও ছুটিতে গেছেন হযরত। স্কুলে দেখাশোনার জন্য রেখে গেছেন নিজস্ব লোক।

স্থানীয়দের কাছ থেকে খবর পেয়ে রোয়াইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে এ চিত্র দেখা যায়।

জানা গেছে, সরকারি স্কুলটিকে শিক্ষক সংখ্যা মোটে ৫ জন। এর মধ্যে দুজন সহকারী শিক্ষক। একজনের নাম সেলিনা আক্তার। তিনি গত ১৫ জানুয়ারি প্রাইমারি টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের (পিটিআই) ট্রেনিং গেছেন। এখনও আসেননি। মোনালিসা হক কনা নামে এক শিক্ষক মাতৃত্বকালীন ছুটিতে রয়েছেন। শর্মিষ্ঠা দাস সুমা নামে আরেক শিক্ষক ২০২৩ সালের জুন মাস থেকে ডেপুটেশনে ঢাকার মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কাজ করছেন।

প্রতিষ্ঠানের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আফরিন সুলতানা ও অপর সহকারী শিক্ষক জহুরা জেসমিন এতদিন ধরে স্কুলের পাঠ কার্যক্রম চালিয়ে নিচ্ছিলেন। তবে, গত রোববার থেকে তারাও সরকারি ট্রেনিংয়ে যোগ দেন। ফলে পুরো স্কুল শিক্ষক শূন্য হয়। এ অবস্থায় পুরো প্রতিষ্ঠান দেখাশোনার দায়িত্ব চাপে হযরত আলীর কাঁধে।

এ পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় যাতে ব্যাঘাত না ঘটে, তাই হযরত আলী নিজেই প্রতিটি ক্লাসে পাঠদান করেন। গত দুদিন ধরে দাপ্তরিক দায়িত্ব ও পাঠদান করলেও মঙ্গলবার দাওয়াত থাকায় তিনি স্কুলের দায়িত্ব দিয়ে যান নিজের ফুপাতো ভাইকে।

বিষয়গুলো জানার পর একে একে যোগাযোগ করা হয় সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে। প্রথমে সহকারী শিক্ষক জহুরা জেসমিনের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা লিয়াকত হোসাইন স্যার ট্রেনিং করতে নামের তালিকা দিয়েছেন। কিন্তু বিদ্যালয়ের বিষয়টি জানালেও তিনি কোনো ব্যবস্থা নেননি।

ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আফরিন সুলতানা বলেন, দুই শিক্ষক ছুটিতে। শর্মিষ্ঠা দাস সুমা ডেপুটেশনে অন্যত্র চাকরি করছেন। এ বিষয়ে তিনি কোনো প্রমাণপত্র দেখাননি। এর পরেও সরকারি ট্রেনিংয়ের জন্য আমাদের পাঠানো হয়। আমরা ট্রেনিংয়ে আসার আগে সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা লিয়াকত হোসাইনকে স্কুলের বিষয়টি খুলে বলেছি। কিন্তু তিনি কোনো পদক্ষেপ নেননি। এখন পুরো স্কুলে শুধু দপ্তরি হযরত আলীই রয়েছেন।

স্থানীয় এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক মিজানুর রহমান বলেন, আমরা জানি বিদ্যালয়টিতে পাঁচজন শিক্ষক রয়েছেন। তারপরও কেন একজন দপ্তরি পাঠদান করাবেন, সেটি বুঝতে পারি না। আর দপ্তরিই বা কেন তার আত্মীয়কে স্কুলে রেখে দাওয়াতে যাবেন? স্কুলটি আসলে কোনো নিয়মে চলে? এমন করে একটা সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চলতে পারে না। এ ব্যাপারে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।

এ ব্যাপারে দপ্তরি হযরত আলী বাংলানিউজকে বলেন, স্কুল কোনো শিক্ষক নেই। দুই দিন নিজেই ম্যানেজ করার চেষ্টা করেছি। আজ কিছু সময়ের জন্য স্কুল ছেড়ে গিয়েছিলাম। আমার তো শিক্ষার্থীদের পাঠদান করা দায়িত্ব নয়। শিক্ষকরা কেউ ছুটিতে কেউ ট্রেনিংয়ে। আমারই বা কি করার ছিল?

রোয়াইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি আশুতোষ মণ্ডলের সঙ্গেও যোগাযোগ করে বাংলানিউজ। তিনি বলেন, আমি বিদ্যালয়ের ব্যাপারে আজই জেনেছি। গত তিন দিন ধরে দপ্তরি ছাড়া স্কুলে কোনো শিক্ষক নেই, এটা মেনে নেওয়ার মতো না। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আমি কথা বলে ব্যবস্থা নেব।

ধামরাই উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা লিয়াকত হোসাইনের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু তিনি কোনো কথা বলতে রাজি নন।

ধামরাই উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা তাজমুন নাহারের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাকে পাওয়া যায়নি। মঙ্গলবার তার অফিসে গিয়ে দেখা মেলেনি।

এ ব্যাপারে ধামরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খান মো. আব্দুল্লা আল মামুন বলেন, এ ব্যাপারে দ্রুতই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল আজিজ বাংলানিউজকে বলেন, স্কুল কখনো শিক্ষক শূন্য থাকতে পারে না। এ ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৩১ ঘণ্টা, মে ৭, ২০২৪
এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।