ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

সীমান্তে না যেতে ছেলেকে শপথ করান মা, ডেকে নিয়েই গেল মৃত্যু!

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২৩ ঘণ্টা, মে ৮, ২০২৪
সীমান্তে না যেতে ছেলেকে শপথ করান মা, ডেকে নিয়েই গেল মৃত্যু!

পঞ্চগড়: পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার তিরনইহাট ব্রহ্মতল এলাকার কেতাব আলীর ছেলে ইয়াসিন আলী (২৩)। পেশায় ছিলেন পাথর শ্রমিক।

পরিবার চালাতে মহানন্দা থেকে নুড়ি পাথর উত্তোলনের কাজ করতেন।

তবে সীমান্তে অসাধু কাজে ছেলেকে জড়াতে নিষেধ করেন মা জবেদা বেগম। একটা সময় সীমান্তে না যেতে ছেলেকে শপথও করান তিনি। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, মৃত্যুই সীমান্তে ডেকে নিয়ে গেল। ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে মারা যান ইয়াসিন আলী।

ছেলের এমন নির্মম মৃত্যুতে শোকাহত মা জবেদা বেগমসহ পুরো এলাকা। ইয়াসিনের সঙ্গে থাকা আব্দুল জলিল (২৪) নামে আরেক যুবকের মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে একই উপজেলার মাগুরা এলাকার জুলু মিয়ার বাড়িসহ পুরো এলাকায়।

স্থানীয়রা জানায়, মঙ্গলবার বিকেলের পর তিরনইহাট ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আজহারুল ইসলাম, সাবেক ইউপি সদস্য হাফিজ উদ্দিন, স্থানীয় বাসিন্দা কবির হোসেন ও শামসুল হক বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যান ইয়াসিনকে।  

রাত ৩টার দিকে সীমান্তে গুলির শব্দ শোনা যায়। সকালে জানা যায়, ওই দুই তরুণ বিএএফের গুলিতে নিহত হয়েছেন। ভারতের স্থানীয়দের মাধ্যমে ছবি পেয়ে বিষয়টি সম্পর্কে নিশ্চিত হয় তাদের পরিবার।  

ছবি: বাঁয়ে ইয়াসিন আলী, ডানে আব্দুল জলিল

অন্যদিকে, রাতে জলিলকে মাগুরার নিজ বাড়ি থেকে এক ব্যক্তি মোটরসাইকেলে নিয়ে যান বলে জানান তার মা জহরুরা বেগম।

ঘটনার পর বুধবার দুপুরে খয়খাটপাড়া দর্গাসিং এলাকার ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে মহানন্দা নদীর পাশে ব্যাটালিয়ন কমান্ডার পর্যায়ে পতাকা বৈঠক করে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) প্রতিবাদ জানিয়েছে। আইনি প্রক্রিয়া শেষে মরদেহ ফেরত দেওয়ার কথা জানিয়েছে বিএসএফ।

এ সময় পঞ্চগড় ১৮ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল যুবায়েদ হাসান এবং বিএসএফের ১৭৬ ব্যাটালিয়নের কমান্ড্যান্ট শ্রী এস এস সিরোহী উপস্থিত ছিলেন।

নিহত ইয়াসিন আলীর মা জবেদা বেগম বাংলানিউজকে বলেন, তিরনইহাট ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আজহারুল ইসলাম, সাবেক ইউপি সদস্য হাফিজ উদ্দিন, স্থানীয় বাসিন্দা কবির হোসেন ও শামসুল হক আমার ছেলেকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যায়। আমি ছেলেকে যেতে নিষেধ করি। ইয়াসিন বলে দোকানের সামনে থেকেই চলে আসবে। সকালে মানুষের কাছে খবর পাই আমার ছেলেকে বিএসএফ গুলি করে মেরে ফেলেছে।  

তিনি বলেন, আমার ছেলের মৃত্যুর জন্য ওই চারজন দায়ী। তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। আমার ছেলে মাত্র এক মাস হলো বিয়ে করেছে। এখন আমার সব শেষ হয়ে গেল। তারা যেন দ্রুত আমার ছেলের লাশটা ফিরিয়ে দেয়। আগেই আমি আমার ছেলেকে শপথ করিয়েছিলাম সীমান্তে গেলে আমার মরা মুখ দেখবি। ও কথা শোনেনি।  

জলিলের মা জহরুরা বেগম বলেন, হঠাৎ আমার ছেলেকে এক ব্যক্তি ডেকে মোটরসাইকেলে করে নিয়ে যায়। এরপর সকালে জানতে পারি, আমার ছেলে বিএসএফের গুলিতে মারা গেছে। আমার ছেলের মরদেহ আমাকে ফিরিয়ে দিন।

পঞ্চগড় ১৮ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে কর্নেল যুবায়েদ হাসান বলেন, আমরা পতাকা বৈঠকে সীমান্তে হত্যাকাণ্ডের কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছি। আমরা বলেছি, সীমান্তে মানুষ হত্যা করে দুই দেশের বন্ধুত্ব রক্ষা করা যায় না। আমরা বলেছি, তাদের গ্রেপ্তার করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যেতো। ফাঁকা গুলি কিংবা পায়ে গুলি করা যেতো। কিন্তু তারা তা করেনি। তারা (বিএসএফ) জানায়, আত্মরক্ষায় তারা গুলি করতে বাধ্য হয়েছে। ওই দুই তরুণ দেশীয় অস্ত্র দিয়ে তাদের ওপর আক্রমণ করেছিল। তারা প্রতিহত করতেই গুলি ছুড়েছে। আইনি প্রক্রিয়া শেষে তারা দুজনের মরদেহ ফিরিয়ে দেবে।

বাংলাদেশ সময়: ২০০৭ ঘণ্টা, মে ০৮, ২০২৪
আরএইচ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।