ঢাকা, মঙ্গলবার, ৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

মোবাইল চুরির অপবাদে নারীকে নির্যাতনের ঘটনায় একজন গ্রেপ্তার

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯২২ ঘণ্টা, মে ১২, ২০২৪
মোবাইল চুরির অপবাদে নারীকে নির্যাতনের ঘটনায় একজন গ্রেপ্তার

পঞ্চগড়: পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলায় মোবাইল চুরির অপবাদে এক নারীর (২৬) কোমরে রশি বেঁধে নির্যাতন ও পরে নির্যাতনের ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় মামলা হয়েছে। মামলা দায়েরের পর এক নারীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

শনিবার (১১ মে) বিকেলে আসামি জাহানারাকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠিয়েছে পুলিশ।

গ্রেপ্তার হওয়া ওই নারীর বাড়ি উপজেলার বেংহারী বনগ্রাম ইউনিয়নের ঝলঝলি চড়িয়াপাড়া (শিয়াল পাড়া) গ্রামে। তিনি ওই এলাকার আব্দুল জব্বারের স্ত্রী।  

এর আগে শুক্রবার (১০ মে) দিনগত রাতে নির্যাতনের স্বীকার ওই নারী বাদী হয়ে বোদা থানায় আব্দুল জব্বারকে (২৭) প্রধান আসামি করে আটজনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত আরও ১০/১৫ জনকে আসামি করে অপরাধ ও সাইবার নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা দায়ের করেছেন।  

এদিকে মামলার পরপর রাতেই পুলিশ ঝলঝলি চড়িয়া পাড়া (শিয়াল পাড়া) গ্রামে অভিযান চালিয়ে মামলার অন্যতম আসামি জাহানারা বেগমকে (২৭) গ্রেপ্তার করে।  

মামলার এজাহার ও ঘটনা সূত্রে জানা যায়, গত ৬ মে (সোমবার) সকালে ভুক্তভোগী নারী তার দাদির বাড়ি (বাবার খালার বাড়ি) উপজেলার বেংহারী বনগ্রাম ইউনিয়নের মানিকপীর এলাকায় বেড়াতে যান। সেখানে তিনদিন অবস্থান করার পরে ৮ মে (বুধবার) বিকেলে তার দাদির দেওয়া একটি মোবাইল ফোন নিয়ে উপজেলার ঝলঝলি শিয়ালপাড়া এলাকায় বাবার বাসায় চলে যান। পরে ৯ মে (বৃহস্পতিবার) সকালে তার দাদির দেওয়া মোবাইল ফোনটি নিয়ে পঞ্চগড় জেলা জজ আদালতের উদ্দেশে ব্যাটারিচালিত ভ্যানে রওনা হন তিনি।  

বিষয়টি টের পেয়ে জব্বারসহ কয়েকজন উপজেলার জেমজুট বাজারে তার পথরোধ করেন। পরে মামলার প্রধান আসামি আব্দুল জব্বারের নির্দেশে অন্য আসামিরা ওই নারীকে বেধরক মারধর শুরু করেন। এসময় জাহানারা বেগম ওই নারীকে হত্যার উদ্দেশে গলা চেপে ধরে বলেন এজহারে উল্লেখ করা হয়েছে। পরে ভুক্তভোগী নারী মারধরের কারণ জানতে চাইলে আসামি জব্বার তার মায়ের মোবাইল চুরির কথা বলেন। এসময় তার কাছে থাকা তিন হাজার টাকা ছিনিয়ে নেওয়া হয়। পরে ওই নারীর পরনের ওড়না দিয়ে দুই হাত বাঁধেন জব্বারসহ অন্যরা। পরে তার কোমরে রশি দিয়ে বেঁধে ইজিবাইকে করে জব্বারের বাড়িতে নেওয়া হয়। পরে সেখানে একটি গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়।  

এদিকে খবর পেয়ে ভুক্তভোগী নারীর বাবা ও চাচা আসামি জব্বারের বাড়িতে গেলে সেখানে ওই নারীকে গাছের সঙ্গে বাঁধা অবস্থায় দেখতে পান। পরে তাদের দেখে আরও মারধর করা হয়। স্থানীয়রা বিষয়টির প্রতিবাদ করলে তাকে ছেড়ে দিয়ে স্থানীয় সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানের বাসায় নেওয়া হয়। সেখানে ওই নারীর বাবাকে ডেকে নিয়ে তার হেফাজতে ওই নারীকে দেওয়া হয়। বৃহস্পতিবার রাতেই ভুক্তভোগী নারী শারীরিক অসুস্থতা বোধ করলে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।

এদিকে বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলার জেমজুট বাজারে ওই নারীকে মারধরের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। পরে তারই সূত্র ধরে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। ভুক্তভোগী নারীকে সামাজিকভাবে হেয় করতে আসামিরা ওই ভিডিওটি ফেসবুকে ছড়িয়ে দিয়েছেন বলে এজাহারে বলা হয়েছে।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও বোদা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) নুরুল হক বলেন, আমরা অভিযান চালিয়ে এক আসামিকে তার নিজ বাসা থেকে গ্রেপ্তার করেছি। যেহেতু মারধরের ঘটনার একটি ভিডিও পাওয়া গেছে তাই গ্রেপ্তার হওয়া আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন হয়নি। পরে শনিবার বিকেলে তাকে আদালতে তোলা হলে শুনানি শেষে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত।

বোদা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোজাম্মেল হক বলেন, আমরা ঘটনা জানতে পেরে বিস্তারিত খোঁজ নেই। পরে মামলা দায়ের হলে অভিযানে নামে পুলিশ। ইতোমধ্যে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মামলার অন্য আসামিদের ধরতে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

** মোবাইল চুরির অপবাদে নারীকে বেঁধে নির্যাতন, ভিডিও ভাইরাল!

বাংলাদেশ সময়: ০৯১৭ ঘণ্টা, মে ১২, ২০২৪
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।