ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

ভিটে-মাটি রক্ষায় বাঁশের বাঁধ, তবুও ভাঙন শঙ্কায় ব্রহ্মপুত্র পাড়ের মানুষ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩৮ ঘণ্টা, মে ২১, ২০২৪
ভিটে-মাটি রক্ষায় বাঁশের বাঁধ, তবুও ভাঙন শঙ্কায় ব্রহ্মপুত্র পাড়ের মানুষ

জামালপুর: গত বছর বর্ষা মৌসুমে জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জে ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনে শত শত একর ফসলি জমি ও হাজারো ঘরবাড়িসহ নানা স্থাপনা নদের গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। নিজেদের ভিটেমাটি হারিয়ে সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েন অনেকেই।

 

এ অবস্থায় ভাঙন রোধে নিজেদের উদ্যোগে স্বেচ্ছাশ্রম দিয়ে এক কিলোমিটার এলাকায় নির্মাণ করা হচ্ছে বাঁশের বাঁধ। সবশেষ এই চেষ্টায় বাঁধ নির্মাণের পরেও আতঙ্কে রয়েছে স্থানীয়রা।

ভাঙনে গত কয়েক বছরে হারিয়ে গেছে দশটি গ্রাম ও সরকারি স্থাপনাসহ একরের পর একর ফসলি জমি। ১৯৭৪ সালে এলাকাটি প্রথম ভাঙনের কবলে পড়ে। ৫০ বছরের ব্যবধানে নদের ভাঙনে ইউনিয়নটির প্যোলাকান্দি নামাপাড়া, মধ্যপাড়া, পূর্বপাড়া, ফারাজীপাড়া, মাদারেরচর, মদনেরচর ও গুমেরচর গ্রামের বেশির ভাগ অংশ নদের গর্ভে বিলীন হয়েছে বসত-বাড়ি হারিয়েছে দুই হাজার পরিবার। নদের পাড়ে পোল্যাকান্দি ইউনিয়নের মধ্যপাড়া গ্রামে প্রায় ১ হাজার পরিবারের বসবাস। রয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ মসজিদ-মাদরাসাও।

সম্প্রতি পোল্যাকান্দি ইউনিয়নের মধ্যপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, নদের পানি শুকিয়ে গিয়ে মনে হচ্ছে নদটি মরে গেছে। কিন্তু কিছু দিন পর এই নদের স্রোতই রাক্ষুসে রূপ নেবে। ভাঙবে ফসলি জমি, বাড়িসহ সরকারি স্থাপনা। তাই গ্রামবাসী মিলে স্বেচ্ছাশ্রম ও টাকা দিয়ে তপ্ত রোদে চরেই বাঁশ পোতার কাজ করছেন। শুধু বড়রা নয় তাদের সহায়তা করছে শিশুরাও। বন্যার সময় ভাঙন শুরু হলে ২০০ মিটার দূরেই স্থাপনাগুলো ভেঙে যাবে। তাই এই বাঁশের বাঁধ নির্মাণ করছেন তারা।

জানা গেছে, নদের এক কিলোমিটারজুড়ে এই ভাঙন রোধে স্থানীয় মানুষের অর্থায়নে ও স্বেচ্ছাশ্রমে সাতটি বাঁশের পাইলিং বাঁধ নির্মাণ করা হবে। প্রতিটি বাঁধের দৈর্ঘ্য হবে ৯০ ফুট। প্রতিটি বাঁধ নির্মাণে প্রায় ১ লাখ টাকা করে খরচ হবে। এতে তাঁদের প্রায় সাত লাখ টাকা খরচ হবে।

প্যোলাকান্দি গ্রামের বাসিন্দা আমিনুল ইসলাম বলেন, ইতোমধ্যে সাত বার আমার বাড়ি-ঘর-জমি নদীতে ভেঙেছে। প্রায় ৫০ বছর ধরে এসব এলাকা ভাঙনের কবলে। বিভিন্ন সময় স্থানীয় প্রশাসনের কাছে আবেদন করেও ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেওয়াতে পারিনি। তাই বাধ্য হয়ে শেষ সম্বল রক্ষায় নিজেরাই বাঁশের বাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছি। সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করছে। যেটুকু কাজে আসে, সেইটুকুই লাভ।

মিজানুর রহমান নামে একজন বলেন, আমরা খুব অসহায় মানুষ। নদী ভাঙতে ভাঙতে আমাদের অবস্থা আজ একবারে ফকিরের মতো। এই নদী যদি এইটুকুও ভেঙে নেয় তাহলে আমাদের পথে নামতে হবে সন্তান স্ত্রী নিয়ে। তাই বাধ্য হয়ে আমরা সাবাই মিলে কয়টা করে টাকা দিয়ে যার টাকা নায় তার শ্রম দিয়ে বাঁধ নির্মাণ করছি। তবে এই বাঁধে কিছু হবে না। যখন নদীর পানি বাড়ে সব কিছু ভেঙে নিয়ে যায়।

স্থানীয় বাসিন্দা আহাম্মদ আলী বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সরকারি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে জানানো হলেও নেওয়া হয়নি কোনো উদ্যোগ। আমাদের নদের ভাঙন রোধে সরকারিভাবে যেন হস্তক্ষেপ করে। যেন আমাদের আর বাড়ি ঘর নদীতে না যায়।

দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ জাহিদ হাসান বলেন, ব্রহ্মপুত্রের ভাঙন রোধে স্থানীয় মানুষের উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয়। এ বিষয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানানো হয়েছে। আশা করছি খুব দ্রুত এসব এলাকায় ভাঙন রোধে স্থায়ীভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, প্যোলাকান্দি এলাকায় পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের যে অংশে ভাঙন রয়েছে, সেখানে ভাঙন রোধে ইতোমধ্যেই প্রতিরক্ষামূলক কাজ বাস্তবায়নের জন্য একটি প্রস্তাব ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। প্রস্তাবটি প্রক্রিয়াধীন। অনুমোদন পেলেই প্রতিরক্ষামূলক কাজ শুরু হবে। আগামী বর্ষার আগেই কাজটি বাস্তবায়ন হবে আশা করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৬ ঘণ্টা, মে ২১, ২০২৪
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।