ঢাকা: রাজধানীর মিরপুরে বেলী (১৪) নামে এক কিশোরী গৃহকর্মীর মৃত্যু নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। গত ২৬ মে দুপুর আড়াইটায় মিরপুর ১৩ নম্বরের বি-ব্লকের ২/১ হোল্ডিংয়ের আটতলা বাড়ির ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে সে।
বেলী ময়মনসিংহ জেলার ফুলপুর থানার বরইকান্দি গ্রামের বাসিন্দা। তার বাবার নাম মৃত নওয়াব আলী ও মায়ের নাম মৃত রওশন আরা। বেলী যে বাড়ি থেকে লাফ দেয় সেটির মালিক এক পরিবহন ব্যবসায়ী। তার পরিবহনের নাম সাকুরা। আটতলা বাড়িটি সাকুরা বিল্ডিং নামেই পরিচিত। বেলী ওই পরিবহনের মালিকের মেয়ের বাসায় কাজ করতো বলে জানা গেছে।
সরেজমিনে ওই ভবনের সামনে গিয়ে দেখা যায়, আটতলা ভবনটি মিরপুর ১৩ নম্বরের ডেসকো অফিসের সামনে অবস্থিত। একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, ঘটনার দিন বেলীকে তারা বাড়ির ছাদে পায়চারি করতে দেখেছেন। ওই সময় তারা ডেসকো অফিসের সামনে আড্ডায় ছিলেন। এক পর্যায়ে বেলী ছাদ থেকে লাফ দিয়ে নিচে পড়লে তারা এগিয়ে যান। ঘটনার পর আশপাশের লোকজন জড়ো হলেও বাড়ির মালিকের লোকজন এগিয়ে আসেননি। এরপর তাকে (বেলী) মিরপুর ১০ নম্বরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে বাঁচানো যায়নি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, বেলী যখন ছাদ থেকে লাফিয়ে বাড়ির সামনে পড়েছিল, তখন ওই বাড়ির কেউ ঘটনাস্থলে আসেননি। তাদের মধ্যে কোনো ‘প্রতিক্রিয়া’ ছিল না। দারোয়ান বাড়ির মূল গেট বন্ধ করে দেন। আর ঘটনার পরই মালিকের ছোট ছেলেকে বাসা থেকে বেরিয়ে যেতে দেখা যায়।
তিনি বলেন, গত কয় দিন যাবত এলাকায় গুঞ্জন ছড়িয়েছে, বড় ধরনের কোনো ‘ঘটনা’ না হলে, একটি অল্প বয়সের মেয়ে এভাবে আত্মহত্যা করতে পারে না।
পাশের বাড়ির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক গৃহকর্মী বলেন, বেলী সব সময় হাশিখুশি থাকতো। বাসার নিচে দোকানে এটা-সেটা কিনতে যেতো। তার বয়স মাত্র ১৪-১৫ বছর, দেখতে সুন্দর ছিল। সে হঠাৎ করে কেন আত্মহত্যা করবে। নিশ্চয়ই বড় ধরনের কোনো বিষয় আছে।
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ওই পরিবহন কত মানুষকে গাড়ি চাপা দিয়ে মেরে ফেলেছে। সেই বিচার হয় না। গরিব একটি মেয়ে আত্মহত্যা করে মারা গেল, এর কি বিচার হবে?
ঘটনাস্থলের ১০ হাত দূরে ডেসকোর দ্বিতীয় গেট। ওই গেটে দায়িত্বরত সিকিউরিটি গার্ড মো. সবুজ বলেন, মেয়েটি আমার সামনেই আটতলা ভবনের ছাদ থেকে পড়ে। এখানকার পথচারী ও এলাকাবাসী মিলে মেয়েটিকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। সবচেয় অবাক করা বিষয়, মেয়েটি ছাদ থেকে পড়লেও শরীর থেকে কোনো রক্ত বের হয়নি। সে সময় মেয়েটি কী যেন বলার চেষ্টা করেছিল। তবে সে কাউকে কিছু বলতে পারেনি।
তিনি আরও বলেন, ওই মেয়ে (বেলী) কোনো কারণ ছাড়া ছাদ থেকে লাফ দেয়নি। তার সঙ্গে কোনো না কোনো অপরাধ হয়েছে। আমার মনে হয় ওই বাড়ির কেউ মেয়েটির সঙ্গে কিছু করেছে।
বেলীর মৃত্যুর পর গত ২৭ মে রাজধানীর কাফরুল থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা করেন তার ফুফু আমিনা।
মামলায় তিনি বলেন, বেলী ছয় মাস আগে মিরপুর ১৩ নম্বরের ওই বাড়িতে গৃহকর্মী হিসেবে কাজ শুরু করে। ঘটনার আগের দিন বেলী তার ফুফু (আমিনার ছোট বোন) তাসলিমার কাছে মোবাইলে কল করে জানায়, সে ওই বাড়িতে কাজ করবে না। তাসলিমা এ বিষয়ে তার (বেলী) সঙ্গে পরে কথা বলবেন বললে সে (বেলী) অভিমান করে আত্মহত্যা করে।
মামলার বাদী আমিনার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি প্রতিবেদকের পরিচয় জানতে পেরে কথা বলতে রাজি হননি।
বেলীর আত্মহত্যার বিষয়টি নিয়ে ‘সাকুরা বিল্ডিং’ নামে পরিচিত ওই বাড়ির সামনে গিয়ে দারোয়ানের সঙ্গে কথা বলতে চাইলেও তিনি রাজি হননি। সেই বাড়ির কারও সঙ্গেই যোগাযোগ করা যায়নি।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কাফরুল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) হোসনে আফরোজ জানান, এ ঘটনায় বেলীর ফুফু একটি অপমৃত্যু মামলা করেছেন। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়া গেলে বিস্তারিত জানা যাবে।
কাফরুল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফারুকুল আলম বাংলানিউজকে বলেন, ঘটনার পর আমি সেখানে গিয়েছিলাম। মেয়েটি ছাদে একাই ছিল। অনেকে তা দেখেছেন। বিস্তারিত জানতে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০৫ ঘণ্টা, ৩০ মে, ২০২৪
এমএমআই/এইচএ/