ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ঘূর্ণিঝড় রিমাল

বিদ্যুৎহীন অবস্থায় ৬ দিন, জানা যায় না খবরটাও

হোসাইন মোহাম্মদ সাগর, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩৩৬ ঘণ্টা, মে ৩১, ২০২৪
বিদ্যুৎহীন অবস্থায় ৬ দিন, জানা যায় না খবরটাও ছবি: জিএম মুজিবুর

কলাপাড়া (কুয়াকাটা) থেকে: ১৫ বছর আগে হওয়া ঘূর্ণিঝড় আইলার প্রলয়কেও হার মানিয়েছে রিমাল - এমন  মন্তব্য উপকূলীয় বাসিন্দাদের।  

কারণ, রিমালের দীর্ঘসময় ধরে চালানো তাণ্ডব ও এর জলোচ্ছ্বাসে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়েছেন তারা।

 

প্রবল জোয়ারের তোড়ে বহু জায়গায় বেড়িবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে বিস্তীর্ণ উপকূলের বহু এলাকা। জলোচ্ছ্বাসে ১০ থেকে ১২ ফুট পানির নিচে তলিয়ে যায় বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন।  

ভেসে গেছে উপকূলের বহু মাছের ঘের, প্লাবিত হওয়া উপকূলের নিম্নাঞ্চলে ঢুকে পড়েছে লবণাক্ত পানি। আর এই পরিস্থিতিতেই বিদ্যুৎহীন অন্ধকারে সময় পার করেছে উপকূলীয় জেলাগুলোর তিন কোটি ৩ লাখ মানুষ।

শুক্রবার (৩১ মে) সরেজমিনে পটুয়াখালীর কলাপাড়ার বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা যায়, ১০০ কিলোমিটারের বেশি বাতাসের বেগ নিয়ে আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড় রিমালের সঙ্গে জলোচ্ছ্বাসে ধসে পড়েছে উপকূলীয় এলাকার অনেক ঘর। গাছপালা ভেঙেও ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভেসে গেছে মাছের ঘের। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে পটুয়াখালীতে দফায় দফায় প্লাবিত হয়েছে চরাঞ্চলসহ শতাধিক গ্রাম। আর সেই তীব্র সময়ের বর্ণনা যখন সকলে দিচ্ছিলেন, তখন বারবার উঠে আসছিল নিকষ কালো অন্ধকারের কথা। অনেক বড় একটা সময় বিদ্যুৎহীন থাকার কথা।

এই এলাকার মোছা. রাশিদা খাতুন বলেন, আজ ৬ দিন বিদ্যুৎ নেই। কারো সঙ্গে যে মোবাইলে যোগাযোগ করব, সেই উপায়ও নেই। এ যেন বিপদের ওপর বিপদ। বাড়ির শিশুরা এখন অন্ধাকার দেখলেই ভয় পায়। অথচ মোমবাতি কেনার টাকাও এখন ঘরে নাই। আবার বিদ্যুতও নাই।

মেজবাহ উদ্দিন তালুকদার নামে আরেক ভুক্তভোগী বলেন, ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডব তো ছিলই, তার ওপর বিদ্যুৎহীন অন্ধকার - এ যেন এক ভয়ঙ্কর স্বপ্ন। দিনের বেলায় ঘরের ভেতরে মোমবাতি জ্বালিয়ে থাকতে হয়। রাতের বেলা তো আর কথাই নেই। ঘুমাতে গেলে মনে হয় যেন চারপাশে শুধু অন্ধকার আর অন্ধকার। বিদ্যুৎ ছাড়া রান্নার কিছু কাজ, মোবাইল চার্জ, এমনকি খবরও জানাটা আমাদের জন্য কঠিন হয়ে গেছে।

তিনি বলেন, আমাদের এলাকার অনেক মানুষের ঘরবাড়ি ভেঙে গেছে। খাবার,বিশুদ্ধ পানি, ওষুধ - সবকিছুর অভাব। এর ওপরে বিদ্যুৎহীনতা যেন আমাদের আরও অসহায় করে তুলেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঝড়ের কারণে বিপর্যয় এড়াতে অনেক এলাকায় ঘূর্ণিঝড়ের আগেই বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। এখন পর্যন্ত সেগুলোর অনেক অংশেরই পুনঃসংযোগ দেওয়া সম্ভব হয়নি।

এ বিষয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপপ্রধান তথ্য অফিসার মীর মোহাম্মদ আসলাম উদ্দিন জানান, ঝড় আঘাত হানার পর বিদ্যুৎহীন অবস্থায় ছিল উপকূলীয় জেলাগুলোর তিন কোটি তিন লাখ মানুষ। প্রবল ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবে জেরেই সে সময় এতগুলো মানুষের বিদ্যুৎ সংযোগ সাময়িক বন্ধ রাখা হয়। তবে ঘূর্ণিঝড়ে যে ক্ষতি হয়েছে তা মেরামত করে মানুষকে বিদ্যুতের আওতায় আনা হবে।

এদিকে পটুয়াখালী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার তুষার কান্তি মণ্ডল জানিয়েছেন, পটুয়াখালী ও বরগুনার ১২টি উপজেলায় পল্লী বিদ্যুতের মোট ছয় লাখ ৭০ হাজার গ্রাহক। অধিকাংশ গ্রাহককে বিদ্যুৎ সংযোগের আওতায় আনা গেছে। বাকিদেরও দ্রুত সংযোগ দিতে কাজ চলছে। ঘূর্ণিঝড়ে প্রায় সাড়ে ৪০০  বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে গেছে বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেগুলো সব ঠিক হলেই সকলে আবার বিদ্যুতের আওতায় আসবে।

আরও পড়ুন >> ঝড়ে কাদা-পানিতে নষ্ট চাল, কুড়িয়ে শুকিয়ে হচ্ছে রান্না

বাংলাদেশ সময়: ২৩২৯ ঘণ্টা, মে ৩১, ২০২৪
এইচএমএস/এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।