ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

সমাজসেবা অফিসে গিয়ে হামিদুল জানলেন, তিনি মারা গেছেন!

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯২৮ ঘণ্টা, জুন ৩, ২০২৪
সমাজসেবা অফিসে গিয়ে হামিদুল জানলেন, তিনি মারা গেছেন!

নীলফামারী: নীলফামারীর ডিমলায় ভাতা নিয়ে তুঘলকি কারবার শুরু হয়েছে। জীবিত মানুষকে মৃত দেখিয়ে ভাতা বন্ধ, একজনের ভাতা আরেকজনের মোবাইল ফোনে চলে যাওয়াসহ নানা অভিযোগ মিলেছে।

ভাতার জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরেও কোনো সুরাহা পাচ্ছেন না ভাতাভোগীরা।  

অভিযোগ রয়েছে, এসব বিষয়ে অভিযোগ জানালে হয়রানি ও অসদাচরণ করেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা।

উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ডিমলায় ভাতাভোগীর সংখ্যা ২৬ হাজার ২৩০। এর মধ্যে ১২ হাজার ১৮৫ জন বয়স্ক, ছয় হাজার ৪৭ জন প্রতিবন্ধী এবং সাত হাজার ৮৯৮ জন বিধবা ভাতা পাচ্ছেন। প্রতিমাসে ৬০০ টাকা করে পাওয়ার কথা তাদের।  

কিন্তু অনেকেই ঠিকমতো টাকা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে।  
উপজেলার খালিশা চাপানি ইউনিয়নের পুর্নারঝাড় গ্রামের বাসিন্দা হামিদুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, পাঁচ বছর ধরে বয়স্ক ভাতা পাচ্ছিলেন। ছয় মাস আগে হঠাৎ করেই তার ভাতা আসা বন্ধ হয়ে যায়। পরে উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে কয়েকবার গিয়ে জানতে পারেন, তিনি মারা গেছেন, তার নামের বরাদ্দ করা বয়স্ক ভাতার কার্ড বাতিল করা হয়েছে। তাকে কীভাবে মৃত দেখানো হলো, কারা এমনটি করল, এর কিছুই জানেন না তিনি।  

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, তাদের মৃত দেখিয়ে কার্ড বাতিল করেছে সমাজসেবা কার্যালয়। আবার অনেক ভাতাভোগীর ফোন নম্বর গোপনে পরিবর্তন করে ভাতাবঞ্চিত করা হয়েছে। ভাতার জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরেও কোনো সুরাহা পাচ্ছেন না তারা। এসব বিষয়ে অভিযোগ জানালে হয়রানি ও অসদাচরণ করেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা।

উপজেলার খালিশা চাপানি ইউনিয়নের ছোটখাতা গ্রামের আজিরন বেওয়া জানান, তিনি সাত বছর ধরে বয়স্ক ভাতা পাচ্ছিলেন। তবে গত নয় মাস ধরে আর ভাতা পাচ্ছেন না। স্থানীয় ইউপি সদস্য ওহাব আলীর মাধ্যমে সমাজসেবা কার্যালয়ে গিয়ে জানতে পারেন যে কাগজ-কলমে তিনি মৃত, তাই ভাতা বন্ধ। একমাত্র ছেলে ও স্বামীর মৃত্যুর পর বয়স্ক ভাতার টাকা ও স্বজনদের সহযোগিতায় চলছিল তার জীবন। এখন ভাতা বন্ধ হওয়ায় নিজের চিকিৎসা করাতে পারছেন না তিনি। একই অভিযোগ করে উত্তর তিতপাড়ার মকবুল হোসেন বলেন, আগে নিয়মিত বয়স্ক ভাতা পেলেও দেড় বছর ধরে টাকা পাই না। দেড় বছর ধরে সমাজসেবা কার্যালয়ে হয়রানির শিকার হচ্ছি।

মৃত্যুসনদ ছাড়া ভাতা বাতিলের বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা নুরুন্নাহার নুরী বলেন, ভাতাভোগীদের সঠিক (লাইভ ভেরিফিকেশন) যাচাই-বাছাইয়ের সময় যাদের পাওয়া যায়নি, তাদের নিরুদ্দেশ দেখিয়ে ভাতা কার্ড বাতিল করা হয়েছে। সেখানে নতুন সুবিধাভোগীর নাম প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। এ সংখ্যা পাঁচ-সাতের বেশি নয়।

জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, মৃত্যুসনদ ছাড়া ভাতা বাতিলের কোনো সুযোগ নেই। এ ঘটনায় তদন্ত করে কোনো অনিয়ম পেলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে। গ্রহণ করা হবে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ। সরকার সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় এসব কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯০০ ঘণ্টা, জুন ৩, ২০২৪
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।