ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

চাকরির আশায় লিবিয়া গিয়ে জিম্মি, দূতাবাসের চেষ্টায় দেশে ফেরত

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১১ ঘণ্টা, জুন ৪, ২০২৪
চাকরির আশায় লিবিয়া গিয়ে জিম্মি, দূতাবাসের চেষ্টায় দেশে ফেরত

ঢাকা: কার্পেট কোম্পানির চাকরি নিয়ে আফ্রিকার দেশ লিবিয়া গিয়েছিলেন নরসিংদীর রোমেল মিয়া। তাকে যারা দেশটিতে নিয়েছিল তারা ছিলেন জিম্মি চক্রের সদস্য।

অসহায় রোমেলকে তারা আটকে রেখে নির্যাতন করে; মুক্তিপণ দাবি করে ১২ লাখ টাকা।

নিম্নবিত্ত রোমেলের পরিবারের পক্ষে এত টাকা জোগাড় করা সম্ভব হয় না। উপায় না পেয়ে তারা যান নরসিংদী পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) দুয়ারে। ঘটনার তদন্তে নেমে ওই চক্রের বাংলাদেশি সদস্য ও হোতা সোহেল, ওয়াসিম হোসেন ও আকারিছ মিয়াকে গ্রেপ্তার করে পিবিআই। সংস্থাটি যোগাযোগ করে লিবিয়ায় অবস্থানরত বাংলাদেশ দূতাবাসে। দুই পক্ষের তৎপরতা ও চেষ্টায় দেশে ফেরেন রোমেল।

মঙ্গলবার (৪ জুন) দুপুরে ধানমন্ডিতে সংস্থার প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান পিবিআই নরসিংদী জেলার পুলিশ সুপার (অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) মো. এনায়েত হোসেন মান্নান।

তিনি জানান, ৪ লাখ টাকার বিনিময়ে রোমেলকে লিবিয়া নিতে চুক্তি হয়। গত ৬ মার্চ দুই লাখ ও ১৪ মার্চ ১ লাখ ২৪ হাজার টাকার সমপরিমাণ ডলার নিয়ে রহমত উল্লাহ ও বিল্লাল মিয়ার সঙ্গে রওনা দেন রোমেল। ট্যুরিস্ট ভিসায় দুবাই-মিশর হয়ে রোমেলকে নিয়ে যাওয়া হয় লিবিয়ায়। সেখানে নিয়ে তাকে আটকে রেখে স্বজনদের ভিডিও কলে রেখে ১২ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। গত ১০ এপ্রিল রোমেলের ভাই বাবুল ও তার স্বজনরা পিবিআই কার্যালয়ে এসে বিষয়টি জানায়।

তারা বলেন, টাকা না পাঠালে কখনো বলে রোমেলের হাত কেটে ফেলবে। পুলিশকে জানালে রোমলেকে মেরে ফেলবে বলে হুমকি দেয়। বারবার এমন হুমকি দেওয়া হচ্ছিল। পরে পিবিআই তাদের তৎপরতা গোপন রেখে জিম্মিকারীদের দেওয়া চারটি বিকাশ নাম্বরে দেড় লাখ টাকা পাঠায়। চক্রটি টাকা পেয়ে আরও পাঠাতে তাগাদা দেয়। এক পর্যায়ে পিবিআইর তিনটি টিম একযোগে ঢাকার দোহার, নবাবগঞ্জ, কিশোরগঞ্জের ভৈরব ও নরসিংদীর রায়পুরা থানা এলাকায় অভিযান চালায়। এ সময় ওয়াসিম হোসেন ও আকারিছ মিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের কাছ থেকে ৯টি মোবাইল ফোন, মুক্তিপণের দেড় লাখ টাকা ও বিকাশ সিমসহ মোট ২২টি সিম জব্দ করা হয়।

এর মধ্যে পিবিআই তথ্য পায়, জিম্মিকারীদের মূল হোতা সোহেল বাংলাদেশে রয়েছে। সে যাতে পালাতে না পারে সেজন্য সব বিমানবন্দর ও স্থলবন্দরে চিঠি দেওয়া হয়। গত ১৯ এপ্রিল সোহেল দেশ থেকে দুবাই পালিয়ে যেতে হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে গেলে ইমিগ্রেশন পুলিশ তাকে আটক করে। পরে সেখান থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে পিবিআই। এরপর তাকে রিমান্ডে নেওয়া হয়। সেখানে অনেক তথ্য দেয় সোহেল। পিবিআইর তৎপরতায় সোহেলের মোবাইল দিয়ে লিবিয়ায় অবস্থানরত চক্রের সদস্যদের সঙ্গে কথা বললে রোমেলকে ছেড়ে দিতে রাজি হয় তারা।

অনেক নাটকীয়তার পরে সোহেলের কথা অনুযায়ী লিবিয়ার সদস্যরা রোমেলকে ত্রিপলিতে রহমত উল্লাহ নামে এক ব্যক্তির কাছে পৌঁছে দেয়। তার মাধ্যমে রোমেলকে ছেড়ে দেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়। রোমেলকে ছেড়ে দিলেও তাকে ত্রিপলি থেকে দেশে আনার জন্য পাসপোর্ট, ভিসা ও বিমান টিকিটের জটিলতা দেখা দেয়। পিবিআই লিবিয়ার অ্যাম্বাসিতে একাধিকবার কথা বলে অনেক চেষ্টার পর গত ২৪ মে রোমেলকে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়।

এনায়েত হোসেন মান্নান বলেন, রোমেল লিবিয়ায় আরও ১১ বাংলাদেশিকে জিম্মি অবস্থায় দেখেছেন বলে জানান। বিষয়টি যাচাই করা হচ্ছে। এছাড়া তদন্তে প্রাপ্ত ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও ব্যাপক আর্থিক ট্রানজেকশন যাচাই করা হচ্ছে।

রোমেল জানান, লিবিয়ায় এ চক্রের যিনি প্রধান, তাকে সবাই বেয়াই বলে ডাকে। এছাড়া, দেলোয়ার, আরিফ, রুহুল, তানভীর, সাইফুল, আবুল, হৃদয় খান, তানভীর নামে আরও কয়েকজন ছিল। তারা বলতো, ‘১২ লাখ টাকা দিবি নয়তো মেরে ফেলব। তারা বার বার টাকা দেওয়ার জন্য তাড়া দিতো। সময় দিতে রাজি ছিল না। তারা বলতো, তোর মতো অনেক রোমেল হারায়ে গেছে, তোকেও মেরে ফেলবো। ’

পিবিআইকে ধন্যবাদ জানিয়ে রোমেল বলেন, আমি কখনও ভাবিনি দেশে ফেরিতে পারব। পিবিআই আমাকে ফিরিয়ে এনেছে। ছেলেকে ফিরে পেয়ে খুশি রোমেলের বাবা আসাদও।

বাংলাদেশ সময়: ১৬১১ ঘণ্টা, জুন ৪, ২০২৪
পিএম/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।