ঢাকা: স্বল্পোন্নত দেশ হতে বাংলাদেশের উত্তরণের প্রেক্ষাপটে প্রণীতব্য নীতি ও কৌশল দেশের আসন্ন নবম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া উচিত বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
তারা বলেন, যে মধ্যম আয়ের ফাঁদ এড়ানোর লক্ষ্যে মসৃণ উত্তরণ সংক্রান্ত কৌশলটিতে প্রয়োজনীয় কাঠামোগত রূপান্তরের ওপর গুরুত্ব আরোপ করা উচিত।
রোববার (০৯ জুন) রাজধানীতে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) ও জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিভাগ (ইউএনডেসা) কর্তৃক যৌথভাবে আয়োজিত ‘স্মুথ ট্রানজিশন স্ট্রাটেজি’ (এসটিএস) বিষয়ক কর্মশালায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অর্থ প্রতিমন্ত্রী মিজ ওয়াসিকা আয়শা খান এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাং সেলিম উদ্দিন। এছাড়া সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি মিজ গুয়েন লুইস।
কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন ইআরডি সচিব মো. শাহরিয়ার কাদের ছিদ্দিকী।
সম্প্রতি ইউ এন ডেসার সহযোগিতায় বাংলাদেশ সরকার উক্ত স্মুথ ট্রানজিশন স্ট্রাটেজির খসড়া প্রস্তুতকরণের কাজ শুরু করেছে। এমতাবস্থায় উক্ত খসড়া প্রস্তুতকরণের অংশ হিসেবে সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সঙ্গে প্রয়োজনীয় মতামত বিনিময়ের লক্ষ্যে উক্ত কর্মশালাটি আয়োজন করা হয়।
কর্মশালায় অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেন, যে সঠিক নীতি, পদ্ধতি ও কৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ হতে উত্তরণের চ্যালেঞ্জসমূহ মোকাবিলা করতে পারবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শক্তি হচ্ছে এ দেশের কর্মঠ জনগণ, গতিশীল ব্যবসায়ী সম্প্রদায়, দেশের তরুণ জনগোষ্ঠী এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন জনবান্ধব সরকার।
অর্থপ্রতিমন্ত্রী মিজ ওয়াসিকা আয়শা খান বলেন, মধ্যম আয়ের ফাঁদ এড়ানোর লক্ষ্যে স্মুথ ট্রানজিশন স্ট্রাটেজি শীর্ষক নীতি কৌশলটিতে প্রয়োজনীয় কাঠামোগত রূপান্তরের ওপর জোর দেওয়া উচিত।
তিনি বলেন, স্মুথ ট্রানজিশন স্ট্রাটেজি শীর্ষক কৌশলপত্রটি দেশের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া উচিত।
ইআরডি সচিব মো. শাহরিয়ার কাদের ছিদ্দিকী বলেন, স্মুথ ট্রানজিশন স্ট্রাটেজি শীর্ষক নীতি কৌশলটি দেশের নবম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া প্রয়োজন। তিনি স্বল্পোন্নত দেশ হতে উত্তরণের ফলে সৃষ্ট চ্যালেঞ্জসমূহকে সম্ভাবনায় পরিণত করার আহ্বান জানান।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাং সেলিম উদ্দিন বলেন, স্মুথ ট্রানজিশন স্ট্রাটেজি শীর্ষক নীতি কৌশলটিতে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পণ্যের গুণগত মান বাড়ানো এবং রপ্তানি বহুমুখীকরণের জন্য কিছু সুনির্দিষ্ট সুপারিশ থাকা প্রয়োজন।
বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি গুয়েন লুইস বলেন, জাতিসংঘ স্বল্পোন্নত দেশ হতে বাংলাদেশের উত্তরণের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। তিনি এক্ষেত্রে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ প্রবৃদ্ধি অব্যাহত রাখা, জনশক্তির দক্ষতা বাড়ানো, প্রযুক্তিগত রূপান্তর ও পরিবেশগত মান সুনিশ্চিতকরণের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
কর্মশালায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন ইআরডি-এর অতিরিক্ত সচিব এবং এসএসজিপি প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক এ এইচ এম জাহাঙ্গীর।
কার্যকর বাস্তবায়নের স্বার্থে এসটিএস-এ উল্লিখিত বিভিন্ন কৌশল আসন্ন নবম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় যথাযথভাবে প্রতিফলিত হওয়া প্রয়োজন মর্মে কর্মশালায় উপস্থিত বক্তারা অভিমত ব্যক্ত করেন।
কর্মশালায় আসন্ন সময়ে প্রণীতব্য স্মুথ ট্রানজিশন স্ট্রাটেজির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ের ওপর আলোকপাত করে একটি উপস্থাপনা করেন এস টি এস সংক্রান্ত জাতীয় পরামর্শক ড. এম এ রাজ্জাক।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ ২০১৮ ও ২০২১ সালে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি (সিডিপি)-এর ত্রিবার্ষিক পর্যালোচনা সভায় স্বল্পোন্নত দেশ হতে উত্তরণের সব মানদণ্ড পূরণে সক্ষম হয়েছে। ফলে, পাঁচ বছর প্রস্তুতিকালীন শেষে বাংলাদেশ নভেম্বর ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বেরিয়ে আসবে। জাতিসংঘের নিয়মানুসারে উত্তরণের প্রস্তুতকালীন বাংলাদেশকে একটি স্মুথ ট্রানজিশন স্ট্রাটেজি (এসটিএস) প্রণয়ন করতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮১৮ ঘণ্টা, জুন ০৯, ২০২৪
জিসিজি/আরআইএস